ভীতি ও প্রীতির ঊর্ধ্বে বিচার


প্রকাশিত: ০৪:২৬ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫

শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন-২০১৫’- এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় দ্রুত ও ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার যে তাগিদ দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ তাতে বিচারপ্রার্থী লক্ষ লক্ষ মানুষের মনের কথায়ই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, ন্যায় বিচার প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু নানা কারণে জনগণ সে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। মানুষের শেষ ভরসার স্থল বিচার বিভাগ। তাই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা-মোকাদ্দমার যুক্তি-তর্ক সম্পন্নের বিষয়ে তাগিদ দেন তিনি। ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সব ধরনের ভীতি ও প্রীতির ঊর্ধ্বে থেকে এবং সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও সততা বজায় রেখে বিচারকরা পক্ষপাতহীন বিচার পরিচালনা করবেন এই প্রত্যাশার কথাও বলেন তিনি। ‘জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনাইড’- এ নীতি বাক্য থেকেও বের হয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

রাষ্ট্রপতি নিজে একজন আইনজ্ঞ। বিচার বিভাগের ভেতর-বাইরের অবস্থা তাঁর ভালো করেই জানা। এ জন্য বিচার বিভাগ নিয়ে মানুষের চাওয়া-পাওয়ার কথা তিনি সহজেই তুলে ধরতে পেরেছেন। দেশে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বিচার বিভাগের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য বিচার পাওয়ার অধিকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে, অনেক সময় বিচার প্রার্থীরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হন। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বিচার প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রতা। দেখা যায়, একজন বিচার প্রার্থীর বিচার পেতে বছরের পর বছর লেগে যাচ্ছে। এতে বিচারের ব্যয় বেড়ে যায়। সময় মত বিচার না হওয়ায় বিচার প্রার্থী প্রতিপক্ষের দ্বারা আরো অনেক সমস্যার সম্মুখীন হন। ফলে ‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে’।  এটি কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়।

উচ্চ ও নিন্ম আদালতে লাখ লাখ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাও মামলা জট নিয়ে অনেকবার কথা বলেছেন। কিন্তু   সমস্যার সমাধান হয়নি। জনবল সংকট, অবকাঠামোগত সমস্যা, বিচারকদের নিয়মমাফিক আদালতে না বসাসহ নানাবিধ কারণে মামলা জট ক্রমাগত বাড়ছে। এজন্য বিচার কার্যে কাঙ্ক্ষিত গতি আনয়নের জন্য পর্যাপ্ত বিচার কক্ষ, বিচারকের শূন্যপদে নিয়োগ এবং বিচারক ও মোকদ্দমার সংখ্যায় যুক্তিসঙ্গত ভারসাম্য রক্ষা করার কথা বলেছেন রাষ্ট্রপতি। যাতে বিচার প্রার্থীরা কোনোভাবেই বঞ্চিত না হয়। 

মনে রাখা প্রয়োজন মানুষের শেষ ভরসাস্থল আদালত। ন্যায়বিচার প্রাপ্তি মানুষের মৌলিক অধিকারও। দায়িত্বপালনে নিরপেক্ষ থেকে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বিচারকরা সর্বোচ্চ আন্তরিক হবেন, জনগণ এটাই প্রত্যাশা করে।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।