চিকিৎসা বিজ্ঞানে ঝড় তোলা বঙ্গে প্রথম-শব ব্যবচ্ছেদ

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:৪৯ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০২১

জাফর ওয়াজেদ

মৃতদেহ স্পর্শই যেখানে ধর্ম ও জাতি নাশের সম্ভাবনা, সেখানে শব-ব্যবচ্ছেদ ছিল অকল্পনীয়। এ কাজে প্রবৃত্ত হওয়া মানে সমাজচ্যুতি, একঘরে হওয়া। জাতের নামে তখন চলছিল বজ্জাতি। সেইসব কুসংস্কারের কঠিন বর্ম টুকরো টুকরো করে দিতে এগিয়ে এসেছিল সেই ঊনিশ শতকের প্রথম দিকে পাঁচজন বাঙালি তরুণ ছাত্র ও শিক্ষক। সমাজের সব ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে সেদিন যে সাহসের পরাকাষ্ঠ দেখিয়েছিলেন তারা, তার ফল বাংলা তথা ভারতীয় উপমহাদেশে সৃষ্টি করেছিল যুগান্তকারী ঘটনা। আর সেই পথ ধরেই বিকশিত হয়েছে উপমহাদেশের চিকিৎসাশাস্ত্র এবং সেই সঙ্গে চিকিৎসা বিজ্ঞান।

১৮৩৬ সালের ২৮ অক্টোবর, আজ থেকে ১৮৫ বছর আগে বঙ্গদেশে প্রথম ঘটেছিল চিকিৎসাক্ষেত্রে শব ব্যবচ্ছেদ। বাংলার তৎকালীন রক্ষণশীল গোষ্ঠীর, ছিল যারা দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, তাদের নাকের ডগায় শব ব্যবচ্ছেদবিদ্যা চালু করা বৈপ্লবিক ঘটনা বৈকি। এই যুগান্তকারী ঘটনাকে স্বাগত জানাতে বাংলা তথা ভারতবর্ষের রাজধানী কলকাতায় ব্রিটিশ সৈন্যরা কামান ও তোপ দেখেছিল। চিকিৎসা বিজ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে আরোপিত বিধি নিষেধগুলো সে সময় বাতাসে মিলিয়ে যায়। ছুঁৎমার্গের শাসনে থাকা সেদিনের রক্ষণশীল হিন্দুরা শব-ব্যবচ্ছেদের জন্য প্রায়শ্চিত্তের বিধান জারি করেছিলেন। তখন চার বাঙালি যুবক ও তাদের বাঙালি শিক্ষক মিলে বঙ্গীয় হিন্দু ছাত্রদের মধ্যে প্রথম হাতেকলমে শব্দ ব্যবচ্ছেদ করে বহুবর্ষ লালিত একটি কুসংস্কারের দেয়াল ভেঙে বেরিয়ে এসে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে বিপ্লব সৃষ্টি করেছিলেন বৈকি। এরা ছিলেন ‘মেডিক্যাল কলেজ অব বেঙ্গল’র প্রতিষ্ঠা বছরের ৫০ জন ছাত্র আর কয়েকজন অধ্যাপক। এর মধ্যে ওই চার ছাত্র ও এক শিক্ষক ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটুকু পালন করেছিলেন সাহস, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে। সমাজ ও জাতিচ্যুত হওয়ার সব বিপদসমূহকে উপেক্ষা করেই তারা শব-ব্যবচ্ছেদের টেবিলের চারপাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন ছুরি হাতে। সফলতার সাথেই তারা কুসংস্কারকে যেন ব্যবচ্ছেদ করেছিলেন। তুলে এনেছিলেন সাহসের বরাভয়। অনেক প্রতিকূলতা তাদের পেরিয়ে আসতে হয়েছিল, অনেক আশংকাকে ধারণ করে।

ভারতীয় উপমহাদেশে প্রাচীনকাল থেকেই চিকিৎসাশাস্ত্র চর্চার ঐতিহ্য ছিল। হরপ্পা-মহেন জোদারোসহ অন্যান্য প্রত্মতাত্ত্বিক অঞ্চল থেকে যে নিদর্শন মিলেছে, তাতে খ্রিস্টজন্মেরও দু’হাজার বছর আগে শল্যচিকিৎসা বা সার্জারির চল ছিল। চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে সুশ্রুত বানভট্ট পরবর্তীকালে গ্রন্থ লিখেছেন। প্রাচীনকালে কবিরাজ, টোটকা, হেকিমি, আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসার পাশাপাশি ঝাঁড়ফুক চিকিৎসাও ছিল। তবে এসব চিকিৎসার চিকিৎসকদের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছিল কি না জানা যায় না। অবশ্য পরম্পরায় এসব চিকিৎসকরা যুগ যুগ ধরে চিকিৎসা কাজ চালিয়েছেন। মোগল যুগেও কবিরাজি, হেকিমি শাস্ত্র বেশ জনপ্রিয় ছিল। উপমহাদেশে আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার সূচনা হয়েছিল বঙ্গদেশেই এবং তা ব্রিটিশ শাসকদের প্রচেষ্টা, প্রেরণা ও প্রয়োজনে।

ঊনিশ শতকের তৃতীয় দশকে এসে উপমহাদেশে আধুনিক চিকিৎসা শিক্ষার সূত্রপাত ঘটে। এর আগে কলেজ ও মামরাসা পর্যায়ে চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষা দেওয়া হতো। তবে তাতে আধুনিকতার ছোঁয়া ছিল না । ঊনিশ শতকের প্রথম পঁচিশ বছরেও চিকিৎসা বিষয়ে উচ্চশিক্ষার কোনো ব্যবস্থাই ছিল না এদেশে। ১৮২৪ সালের ১৪ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ‘নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশন’। ইউরোপীয় রীতিতে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা শিক্ষার কাজ শুরু হয়েছিল এখানে। কলকাতায় স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠানে হিন্দুস্তানি ভাষায় ইউরোপীয় চিকিৎসাশাস্ত্রের মূল তাত্ত্বিক বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হতো। ব্যবহারিক পদ্ধতি আরও পরে চালু হয়। তাছাড়া সেনাবাহিনীর সঙ্গে থাকা ব্রিটিশ চিকিৎসকরা এদের মাঝে মাঝে ব্যবহারিক শিক্ষা দিতেন। ব্রিটিশরা তাদের প্রয়োজনেই এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। এই প্রতিষ্ঠানে প্রাচ্যবিশারদ ডা. টাইটেলারের অধীনে বাঙালি তথা ভারতবর্ষীয় শিক্ষার্থীরা চিকিৎসা বিজ্ঞানচর্চা করেছেন। ১৮৩৫ সালের মধ্যে এখানে ১৬৬ জন ছাত্র চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। এরা ‘নেটিভ ডাক্তার’ নামে পরিচিতি পেয়েছিলেন ব্রিটিশদের কল্যাণে। এরপর ১৮২৬ সালের ডিসেম্বর মাস থেকে সংস্কৃত কলেজের ‘বৈদক’ শ্রেণির এবং কলকাতা মাদরাসায় মেডিক্যাল ক্লাস চালু করা হয়। এখানে সংস্কৃত, আরবি এবং হিন্দুস্তানি ভাষায় চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষা দেওয়া হতো। গবেষক যোগেশচন্দ্র বাগল লিখেছেন, “এখানে ইংরেজিতে লিখিত চিকিৎসাবিষয়ক পুস্তক যথাক্রমে আরবি ও সংস্কৃত ভাষায় অনূদিত হইত এবং ছাত্রেরা এই সকল অনুবাদ-গ্রন্থের মাধ্যমে চিকিৎসাশাস্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হইত।” ১৯৩১ সালের আগস্ট মাসে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য কলেজের সন্নিহিত স্থানে একটি হাসপাতাল খোলা হয়। এই হাসপাতালের ‘আউটডোর’ বিভাগ থেকে আট মাসের মধ্যে ১৫৮ জন রোগীকে চিকিৎসা সেবাপ্রদান করা হয়। এই হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা ছিল ২০টি।

নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশন, সংস্কৃত কলেজ এবং কলকাতা মাদরাসায় চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্লাসে শরীরবৃত্ত তথা ফিজিওলজি, শরীরস্থান তথা এনাটমি, মেটিরিয়া মেডিকা, ঔষধ বিদ্যা বা মেডিসিন এবং শল্যবিদ্যা বা সার্জারি বিষয়ের তত্ত্বগত দিক নিয়ে পড়ানো হতো। এবং তা হতো প্রধানত আয়ুর্বেদিক এবং হেকিমি শাস্ত্রের ব্যাখ্যানুসারে। ইতিহাসবিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষ্যানুযায়ী ভারতবর্ষে আগত গ্রিকরাজপুরুষ এবং মুসলমান শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় এদেশে বহুকাল থেকেই চরক, সুশ্রুত এবং হেকিমি চিকিৎসাবিজ্ঞান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল। এই তিনটি বিদ্যালয়ে ফিজিওলজি এবং এনাটমি কোর্সের মেয়াদ ছিল তিন বছর। এই সময়ের পাঠক্রমে ছাত্রদের হাতেকলমে শিক্ষাদানের জন্য মনুষ্যতর প্রাণী ব্যবচ্ছেদের ব্যবস্থা ছিল। তবে ছাত্রদের মানবদেহ গঠন প্রকৃতি সম্পর্কে চুড়ান্ত জ্ঞানার্জনের পথ ও পদ্ধতি ছিল সীমিত, সীমাবদ্ধ। জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে নির্দিষ্ট ‘দূরত্ব’ বজায় রেখে ছাত্ররা ‘পোস্ট মর্টেম’ বা ময়নাতদন্ত পর্যবেক্ষণ করতো। সুযোগ ছিল। কট্টর ‘হিন্দুয়ানী’র কড়া বিধানে যথারীতি শবদেহের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল তিনটি বিদ্যালয়েই। বঙ্গদেশ তথা ভারতবর্ষের চিকিৎসাবিজ্ঞানের তখন এক সংকটজনক মুহূর্ত। চার্চ যেরকম নিকোলাস কোপার্নিকাস, গ্যালিলিও, ব্রুনোসহ অনেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনুরূপ কট্টর হিন্দুরা ‘ফতোয়া’ জারি করে দিলেন, ‘কোনো মৃতদেহ স্পর্শ করা যাবে না শুধু নয়, বিদ্যালয়েও শিক্ষার জন্য আনা যাবে না’। ডা. টাইটেলার, নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশনের অধ্যক্ষ, লিখেছিলেন এই দুঃসময়ের কথা, “ The deeprooted national prejudice against the study of anatomy or dissection was a great hurdle to pass.” শব-ব্যবচ্ছেদ সম্পর্কে ঊনিশ শতকে গোরা বা কট্টর হিন্দুরা ছিল অত্যন্ত নির্দয় ও নির্মম। তারা শাস্ত্রের নামে কথিত অর্থহীন বিধিবিধান চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। অথচ শাস্ত্রীয় কোনো প্রমাণাদি দেখাতে না পারলেও সমাজকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চালিয়েছিল। এই প্রসঙ্গে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন, “সংস্কৃত কলেজের বৈদক শ্রেণির ছাত্ররা এনাটমি শিক্ষার জন্য ইতর প্রাণীর দেহ ব্যবচ্ছেদ করার সুযোগ পেলেও সেই মৃত প্রাণীর দেহটিকে কাটাছেঁড়ার জন্য পবিত্র বিদ্যামন্দিরের ভিতর নিয়ে আসার অধিকারও তাদের দেয়া হয়নি। এমনকি কোনো হিন্দু অধ্যাপককেও এ কাজে নিযুক্ত রাখা হয়নি।” সমাজে কুসংস্কার এমনই ছিল যে, অধ্যাপকরাও এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারেননি। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আরো লিখেছেন, “... বলিতে গেলে সংস্কৃত পাঠশালায় বৈদকের ঘর হইতেই মেডিক্যাল কলেজের সৃষ্টি, যাহারা বৈদকের ঘরে পড়িত, তাহাদের একজনকে সাহেবের কাছে কেমিস্ট্রি পড়িতে, আর মরা পশুরদেহ কাটিয়া এনাটমি শিখিতে হইত; কিন্তু সাহেবের ঘর কলেজের বাড়িতে ছিল না। তাহার জন্য স্বতন্ত্র বাড়ি ভাড়া করিতে হইত।...” এর আগে ১৮১৭ সালে ইতিহাসখ্যাত হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়ে কুসংস্কার ভাঙার পথ তৈরি করে দেয়। উপমহাদেশের নানা কুসংস্কারের দেওয়াল ভেঙে বেরিয়ে আসার জন্য কলেজের ছাত্র সমাজের একটি অংশ ছিল তৎপর। ডিরোজিও’র হাত ধরে এগিয়ে এসেছিল যুক্তিবাদী একদল যুবক। তবে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ ভালো চোখে দেখেনি। সেসব ইতিহাসের অংশ এখন।

ইউরোপেরও শব-ব্যবচ্ছেদ শুরুর পর্বটিও সহজতর ছিল না। পোপ দ্বিতীয় বনিফেস, যিনি মানুষের পুনর্জীবনে জারি করেন যে, শব ব্যবচ্ছেদ করা চলবে না। এই আদেশে অমান্য করেন সার্ভাতাস নামে এক চিকিৎসা বিজ্ঞানী। তিনি ব্যবচ্ছেদ করে তার ফলাফল প্রকাশ করেছিলেন। পরিণামে তাকে জোয়ান অব আর্কের মতোই পুড়িয়ে মারা হয়েছিল। ইতালির বোলোনিয় শহরে ইউরোপের প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অব বোলেগনা’- সেখানে কয়েকশ বছরের পুরোনো শব ব্যবচ্ছেদাগার রয়েছে। ব্যবচ্ছেদ টেবিলের চারদিকে কাঠের গ্যালারি, প্রায় ছাদের কাছাকাছি দেয়ালে ছোট ছোট ভেল্টিলেশন। অত উচুঁতে থাকা স্থানের পেছনে গির্জার যাজক অথবা তার প্রতিনিধিরা বসতেন। লক্ষ্য রাখতেন কোনোক্রমেই যেন শবের মস্তিষ্কা বা হৃদয়ে (যে খানে ঈশ্বরের অধিষ্ঠান) অস্ত্রোপচার না করা হয়। অন্যথাকারীর শান্তি অনিবার্য। ঊনিশ শতকে এই প্রথা রদ করা হয়েছিল।

তিনটি স্কুলে চিকিৎসাতত্ত্ব শেখা হলেও ব্যবহারিক জ্ঞানে পারদর্শিতা অর্জন অসম্ভব হয়ে ওঠে ছাত্রদের। এ শিক্ষায় রোগশাস্ত্র নিয়ে আলোচনা করা গেলেও চিকিৎসা সহজতর ছিল না। ব্যবহারিক জ্ঞানশূন্য চিকিৎসাবিদ্যার সীমাবদ্ধতা এবং সেই সঙ্গে ক্রমশ বেড়ে ওঠা সুচিকিৎসার চাহিদা শাসক ইংরেজ সরকারকে ভাবিয়ে তোলে। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে আধুনিক উন্নত চিকিৎসাবিদ্যা শিক্ষার সুবিধার জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন তৎকালীন বড়লাট উইলিয়াম বেন্টিক। সমসাময়িক চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষা ব্যবস্থার অনুসন্ধান এবং চিকিৎসাশাস্ত্র উন্নত উপায়ে পঠন পাঠনের উপায় নির্ণয়ের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন বড়লাট। উল্লেখ করার মতো যে, এ কমিটিতে একজন ছিলেন বাঙালি, দেওয়ান রামকমল সেন। ধর্ম বিষয়ে প্রাচীনপন্থি হলেও বিদ্যা বিষয়ে উদারমত পোষণ করতেন বলে গবেষক যোগেশচন্দ্র বাগল মন্তব্য করেছেন। ১৮৩৪ সালের ২০ অক্টোবর পেশ করা কমিটির রিপোর্টে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার প্রচলিত ব্যবস্থার সমস্যা ও কুফলগুলো তুলে ধরা হয়। এবং বলা হয়, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে শব ব্যবচ্ছেদ বিদ্যাকে উপেক্ষা করছে, যা এই শিক্ষায় সংকট তৈরি করছে। কমিটি সুপারিশ করে যে, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অবিলম্বে চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষার ব্যবস্থা রহিত করে সম্পূর্ণ পাশ্চত্যরীতিতে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসাশাস্ত্র চর্চার জন্য একটি উপযুক্ত মেডিক্যাল কলেজের পত্তন জরুরি। কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে বড়লাট উইলিয়াম বেন্টিক ১৮৩৫ সালের ২৮ জানুয়ারি কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিপত্র জারি করেন। ৩৬টি ধারা সংবলিত এই আদেশের প্রথম ধারায়ই রয়েছে সংস্কৃত কলেজ ও মামরাসায় মেডিক্যাল ক্লাস বাতিল এবং নেটিভ মেডিক্যাল ইনস্টিটিউশন বিলুপ্ত করার কথা। অবশেষে হিন্দু কলেজ সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত পুরোনো বাড়িতে যাত্রা হয় কলেজের। ১৮৩৫ সালের ২০ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ভর্তি শুরু হয় এবং ৫০ জন ছাত্র নিয়ে ১ জুন ১৮৩৫ থেকে ক্লাস শুরু হয়। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন ডা. মাউন্টফোর্ড জোসেফ ব্রামলি, এনাটমি বিভাগের প্রধান হিসেবে ডা. হেনরি হ্যারি গুডিব, মেডিসিনে ডা. টাইটেলার যোগ দেন। বাঙালি মধুসূদন গুপ্তও যোগ দেন এনাটমি ও সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডেমোনেস্ট্রটর হিসেবে। উদ্বোধনী দিনে ডা. ব্রামলি অস্থিবিজ্ঞান সম্পর্কে বক্তৃতা করেন। এই বক্তৃতার শ্রোতা ছিলেন সে সময়ের কলকাতার দেশি-বিদেশি গণ্যমান্যরা। যোগেশচন্দ্র বাগল উল্লেখ করেছেন, এই বক্তৃতাটি এতই প্রসিদ্ধি লাভ করে যে, ইহা পুস্তিকাকারে মুদ্রিত হয়, বাংলায়ও ইহা মুদ্রিত হইয়াছিল।” দু’বছর পরে কলেজটি অন্যত্র নিজস্বভবনে স্থানান্তর করা হয়।

আধুনিক ইউরোপীয় চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষার বিধিবিধান মেনে বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজে বিদ্যাচর্চা শুরু হলেও এনাটমি বিভাগের ছাত্রদের শব ব্যবচ্ছেদ বিদ্যা শেখানো জটিল হয়ে পড়ে। মানবদেহের গঠন প্রকৃতি ও ক্রিয়াকলাপ বিশ্লেষণের প্রয়োজনে কলেজ কর্তৃপক্ষকে কাঠ এবং টিনের তৈরি একটি ‘ভেড়ার ব্রেন’ এবং ছাগলের ‘লিভার’ মডেল অর্ডার দিয়ে বানাতে হয়েছিল। ইংল্যান্ড থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে কিনে আনা হয়েছিল ‘বাসি নরকংকাল’। কিন্তু শিক্ষক এবং ছাত্ররা এতে সন্তুষ্ট ছিলেন না। শব ব্যবচ্ছেদ বিদ্যা তাদের জন্য দূরত্ব দূর থেকে যাওয়ায় হতাশাও আসে। সরকারি আদেশ অনুযায়ী চিকিৎসা বিজ্ঞানের শর্ত মেনে পড়াশোনা করানো সম্ভব হচ্ছিল না। অথচ ইউরোপীয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের একটি প্রধান অঙ্গ হচ্ছে শব-ব্যবচ্ছেদ বিদ্যা। তাই ডা. ব্রামলি এবং ডা. হেনরি কলেজে শব-ব্যবচ্ছেদ প্রচলনে উদ্যোগী হলেন, খবরটি ছড়িয়ে গেলো সর্বত্র। কট্টর হিন্দু সমাজ এর বিরোধিতায় সর্বশক্তি দিয়ে সোচ্চার হলো। কবিরাজ, হেকিমরা এর বিরোধিতায় নামে। হিন্দু নেতারা কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিল যে, শাস্ত্রে লেখা রয়েছে মৃতদেহ কাটা বারণ আছে। আর ছাত্রদের হুঁশিয়ার করে দিলেন যে, বিধর্মী সাহেবদের প্ররোচনায় হাতেকলমে মৃত মানুষের শরীর ব্যবচ্ছেদ করলে সমাজে ‘পতিত’ কিংবা ‘একঘরে’ হয়ে বাস করতে হবে। অথচ তারা এর সপক্ষে কোনো শাস্ত্র দেখাতে না পারলেও হুমকি বহাল ছিল। এই ‘ফতোয়া’ হিন্দু ছাত্রদের মধ্যে ভীতি ও আতংক তৈরি করে। কর্তৃপক্ষও পিছু হটলেন। কলকাতা শহরে যেন শব ব্যবচ্ছেদ বা ‘মড়াকাটা’ নিয়ে তোলপাড় শুরু হলো যেন। চিকিৎসাশাস্ত্রের জন্য অতীব প্রয়োজন ও জরুরি বিষয়টি চর্চার ক্ষেত্রে কুসংস্কার আচ্ছন্ন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং ‘ভারতহিতৈষী’ বলে খ্যাত ডেভিড হেয়ার। তারা হিন্দুশাস্ত্র সমীক্ষা করে শবদেহ ব্যবচ্ছেদ বিষয়ক বিদ্যমান সমস্যার স্বরূপ উদ্ঘাটন করার জন্য কলেজের সহকারী অধ্যাপক পন্ডিত মধুসূদন গুপ্তকে অনুরোধ জানান। মদুসূদন গুপ্ত শাস্ত্র ঘেঁটে জানালেন, এ বিষয়টি সম্পর্কে কোনোরকম বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়নি হিন্দুশাস্ত্রে। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের জীবনচরিতকার সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “শব-ব্যবচ্ছেদের সময় হিন্দু ও বাঙালি ছাত্রগণ শবদেহ স্পর্শ করতে প্রথমত ঘোরতর আপত্তি উত্থাপন করেন। দ্বারকানাথ এই ঘটনার বিষয় অবগত হয়ে কলেজের ব্যবচ্ছেদ গৃহে প্রত্যহ উপস্থিত হইয়া ছাত্রগণকে বুঝাইয়া দিতেন যে, ইহাতে অর্ধম হইবে না। পুনঃপুনঃ এইরূপ চেষ্টায় ছাত্রগণের ভ্রান্ত ধারণা ক্রমশ দূরীভূত হইল।” থেমে থাকেননি ডা. ব্রামলি ও ডা. হেনরি। মনস্তাত্ত্বিক পদ্ধতিতে ছাত্রদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রস্তুত করেন ‘মড়াকাটা’র জন্য। কলেজে ক্লাস শুরুর পাঁচ মাসের মাথায় তারা লোকচক্ষুর অন্তরালে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে অভূতপূর্ব কাজটি করেন। লেকচার টেবিলে তুলে দেন নামগোত্রহীন তবে অবিস্মরণীয় মৃত মানুষটিকে। তারা জেনারেল হাসপাতলের মর্গ থেকে বেওয়ারিশ লাশটি সংগ্রহ করেছিলেন।

‘মেডিক্যাল কলেজ অব বেঙ্গল’র প্রথম বছরের ৫০ জন ছাত্র আর জনাচারেক অধ্যাপকের মধ্যে সেদিন চার ছাত্র আর তাদের এক শিক্ষক ইতিহাসের নতুন দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন। ১৮৩৬ সালের ২৮ অক্টোবর প্রথম হাতেকলমে শব-ব্যবচ্ছেদ করে বহুবর্ষ লালিত কুসংস্কারের পাঁচিল ভেঙে সৃষ্টি করা হয়েছিল চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে যুগান্তকারী বিপ্লব। সবার অলক্ষ্যে সেদিন ঘটেছিল উপমহাদেশের মানব জীবন ও সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

এতোদিন ভেড়ার মস্তিষ্ক আর ছাগলের যকৃতের মডেলের মধ্যে শিক্ষা নেয়া চার ছাত্রের কাছে এই নিষ্প্রাণ নির্বেরোধী নির্বিবাদী মৃত মানব শরীরের সামনে দাঁড়িয়ে অনুভূতি নিশ্চয় অন্যরকম হয়েছিল। সহকারী অধ্যাপক মধুসূদন গুপ্তকে অগ্রবর্তী করে চারজন পরাক্রান্ত ছাত্র বঙ্গীয় কট্টর হিন্দুদের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে এক নতুন পথ তৈরির মুহূর্তে তখন। রাজকৃষ্ণ দে, দ্বারকানাথ গুপ্ত, উমাচরণ শেঠ এবং নবীনচন্দ্র মিত্রকে আগেই মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছিলেন ডা. হেনরি। দিনের আলোয় ঝলমল করছিল কলেজ ক্যাম্পাস। ঠিক এই সময়ে মধুসূদন গুপ্ত ও তার চার ছাত্র ডা. হেনরির ইশারা পেয়ে সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলে যান কলেজের প্রধান ভবন থেকে একটু দূরে আরেকটি ছোট বাড়িতে। দোতালায় শব ব্যবচ্ছেদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরে তারা ডা. হেনরির পেছনে পেছনে প্রবেশ করলেন। এখানে আগেই উপস্থিত ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ ডা. ব্রামলি, অন্যান্য অধ্যাপকবৃন্দ, কাউন্সিল অব এডুকেশনের সভাপতি জন এলিয়ট, দেশি-বিদেশি গণ্যমান্য বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিরা-এমনকি সেকালে রক্ষণশীল হিন্দু হিসেবে পরিচিত রামকমল সেন এবং রাধাকান্ত দেব। তারা এসেছেন নবতমবিদ্যা আয়ত্ত করার ঊষালগ্নে নবীনদের উৎসাহ দিতে। মধুসূদন গুপ্ত তার চার ছাত্রকে নিয়ে টেবিলের সামনে দাঁড়ালেন। শায়িত দেহসর্বস্ব নাম গোত্রহীন মানুষ। ডা. হেনরির ইশারা পাওয়ামাত্র মধুসূদন ছুরি বসিয়ে দিলেন শবদেহে। তারপর ছাত্র রাজকৃষ্ণদে, ক্রমান্বয়ে অন্য তিনজন। গবেষক অম্বুজেন্দ্র ঘোষ উল্লেখ করেছেন, “পন্ডিত মধুসূদন গুপ্তকে নিয়ে সর্বমোট পাঁচজন যুবকের ক্রোধ একটি মর্মান্তিক কুসংস্কারকে চিতায় নিক্ষেপ করল। ওরা যেন পরিচিত ইতিহাসের যুগান্তকারী দিগ্বিজয়ের সতীর্থ। -‘এলেন, ছুরি ধরলেন এবং জয় করলেন।’ তারপর শুরু হলো মানবদেহের স্বরূপ সম্পর্কে বিজ্ঞান ভিত্তিক আলোচনা। ”

বেঙ্গল মেডিক্যাল কলেজের ‘ডিসেকশন রুমে’ চলছে যখন শব-ব্যবচ্ছেদ, ঠিক তখনই ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ থেকে তোপ দাগা হলো। ঘন ঘন কামানের শব্দে সেদিন কেঁপে উঠেছিল কলকাতা শহর। ইংরেজ সেনানায়করা তাদের ঔউপনিবেশে প্রথম শব কাটাকুটি উৎসবকে স্বাগত জানাতে কামান দেগেছিল। ভারতবর্ষে পাশ্চাত্য পদ্ধতিতে ‘মড়াকাটা’র ঘটনা শাসকের জন্য ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই প্রতিবন্ধকতা দূর না হওয়ায় তাদের ঔপনিবেশে চিকিৎসা ব্যবস্থা দুর্বলে পরিণত হচ্ছিল। তবে প্রথম ব্যবচ্ছেদের দু‘বছরের মধ্যে শব ব্যবচ্ছেদ শিক্ষায় বেঙ্গল কলেজের ছাত্রদের অসাধারণ উন্নতি দেখে বিস্মিত ও অভিভূত হয়েছিলেন ডা. হেনরি। ১৮৩৬ থেকে ১৮৪৮ সাল পর্যন্ত এই কলেজের এনাটমি বিভাগের শিক্ষার্থীরা গড়ে প্রতি বছর প্রায় ৪২টি শব-ব্যবচ্ছেদ করেছেন। ডা. হেনরি উল্লেখ করেছিলেন, প্রথম বারো বছরের মধ্যে ছাত্ররা পাঁচশ’রও বেশি মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদ করেছেন। শুধু তাই নয়, জাতি-ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রদেশ ও রাজ্য থেকেও আসা শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হয়েছে। ডা. হেনরি এই ছাত্রদের ইউরোপের যে কোনো উন্নত ধরনের চিকিৎসা বিজ্ঞান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংস্কারমুক্ত, স্বাধীনচেতা যুব ছাত্রদের সঙ্গে তুলনীয় বলে তার রিপোর্টে উল্লেখ করেছিলেন।

ডেভিড হেয়ার, এক সময় যিনি নিজের পাল্কিতে চড়ে ওষুধ নিয়ে অসুস্থ মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেরিয়েছেন, তিনি রোগীর চিকিৎসার চিকিৎসাশাস্ত্রসম্মত সুব্যবস্থা হয়েছে বলে সেদিন উল্লাস প্রকাশ করেছিলেন। অন্যদিকে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩৭ সালের ২৪ মার্চ কলেজ অধ্যক্ষকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে পত্র দেন। পত্রে প্রস্তাব রাখেন যে, তিনি বার্ষিক দু’হাজার টাকা হিসেবে পরপর তিন বছর যোগ্য ছাত্রদের পুরস্কার দেবেন। প্রথমবার ১৮৩৭ সালের ২৯ জুন শব ব্যবচ্ছেদ শ্রেণিতে ‘দ্বারকানাথ পুরস্কার’ পেলেন প্রথম মড়াকাটা ছাত্র রাজকৃষ্ণ দে, নবীন চন্দ্রমিত্র, দ্বারকানাথ গুপ্ত এবং আরও আটজন কৃতী ছাত্র। এ ছাড়া রসায়ন শ্রেণিতে উমাচরণ শেঠ, নবীনচন্দ্র মিত্র ও অন্য ছয়জন ছাত্র। মড়াকাটা চার ছাত্র উত্তরকালে চিকিৎসক হিসেবে বিশেষ প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। সেদিন চারজন ছাত্রের শব ব্যবচ্ছেদের সময় মধুসূদন গুপ্ত উপস্থিত অন্য ১৪ জন ছাত্রকে অত্যন্ত নিপুণভাবে মানবদেহের গঠন প্রকৃতি সম্পর্কে ‘ডেমনস্ট্রেশন’ দিয়েছিলেন। ১৮০০ সালে হুগলিতে জন্মেছিলেন মধুসূদন গুপ্ত। প্রথম জীবনে সংস্কৃত কলেজের বৈদক শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছিলেন, মেধার গুণে। তিনিই প্রথম হিন্দু; যিনি সমাজের সংবিত ফেরাবার তাগিদে কুসংস্কারকে ভ্রুকুটি প্রদর্শন করে প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করেন মেডিক্যাল কলেজের চৌহদ্দির মধ্যে দাঁড়িয়ে। তার অবদান ও বিস্মৃত হওয়ার নয়। সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করেছিলেন বলেই পরবর্তীকালে চিকিৎসাশাস্ত্রের বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছিল বঙ্গদেশসহ উপমহাদেশে।

লেখক : একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক ও মহাপরিচালক প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)।

এইচআর/জিকেএস

১৮০০ সালে হুগলিতে জন্মেছিলেন মধুসূদন গুপ্ত। প্রথম জীবনে সংস্কৃত কলেজের বৈদক শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায় কলেজের অধ্যাপক নিযুক্ত হয়েছিলেন, মেধার গুণে। তিনিই প্রথম হিন্দু; যিনি সমাজের সংবিত ফেরাবার তাগিদে কুসংস্কারকে ভ্রুকুটি প্রদর্শন করে প্রথম শব-ব্যবচ্ছেদ করেন মেডিক্যাল কলেজের চৌহদ্দির মধ্যে দাঁড়িয়ে। তার অবদান ও বিস্মৃত হবার নয়। সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করেছিলেন বলেই পরবর্তীকালে চিকিৎসাশাস্ত্রের বিকাশ ও বিস্তার ঘটেছিল বঙ্গদেশসহ উপমহাদেশে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।