স্বর্গে যিশুর জন্ম বিষয়ক চিহ্ন


প্রকাশিত: ০৫:৫২ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫

‘‘আর স্বর্গমধ্যে এক মহৎ চিহ্ন দেখা গেল। একজন স্ত্রীলোক ছিল, সূর্য তাহার পরিচ্ছদ, ও চন্দ্র তাহার পদতলে, এবং তাহার মস্তকের উপরে দ্বাদশ তারার এক মুকুট। সে গর্ভবতী, আর ব্যথিত হইয়া চেঁচাইতেছে, সন্তান প্রসবের জন্য ব্যথা পাইতেছে। আর স্বর্গমধ্যে আর এক চিহ্ন দেখা গেল, দেখ, এক প্রকাণ্ড লোহিতবর্ণ নাগ, তাহার সপ্ত মস্তক ও দশ শৃঙ্গ এবং সপ্ত মস্তকে সপ্ত কিরীট। আর তাহার লেজ আকাশের এক তৃতীয়াংশ নক্ষত্র আকর্ষণ করিয়া পৃথিবীতে নিক্ষেপ করিল। যে স্ত্রীলোকটি সন্তান প্রসব করিতে উদ্যত, সেই নাগ তাহার সম্মুখে দাঁড়াইল, যেন সে সন্তান প্রসব করিবামাত্র তাহার সন্তানকে গ্রাস করিতে পারে। পরে সেই স্ত্রীলোকটি ‘এক পুত্র-সন্তান প্রসব করিল; যিনি লৌহদণ্ড দ্বারা সমস্ত জাতিকে শাসন করিবেন।’ আর তাহার সন্তানটি ঈশ্বরের ও তাঁহার সিংহাসনের নিকটে নীত হইলেন। আর সেই স্ত্রীলোকটি প্রান্তরে পলায়ন করিল; তথায় এক সহস্র দুই শত ষাট দিন পর্যন্ত প্রতিপালিত হইবার জন্য ঈশ্বর কর্তৃক প্রস্তুত তাহার একটি স্থান আছে।”

পাঠকদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, বাইবেলের একেবারে শেষ পুস্তক প্রকাশিত বাক্যে তিন ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী আছে। প্রথমতঃ কোন কোন ভাববাণী ঈশ্বর যোহনকে দেখিয়েছেন যেগুলো ভবিষ্যতে পূর্ণতা লাভ করবে, এখনও পরিপূর্ণ হয় নি। সেগুলো অবশ্যই ভাববাণী। দ্বিতীয়তঃ প্রকাশিত বাক্যে আবার এমন বাণী আছে, যেগুলো এমনকি পৃথিবী সৃষ্টির আগেকার সময়কার যখন ঈশ্বর স্বর্গ সৃষ্টি করেছিলেন, সেখানে ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে স্বর্গে চিহ্ন দেখা গিয়েছিল। সেসবের কোন কোন ভাববাণী ইতিমধ্যে পূর্ণতা লাভ করেছে, সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলোর বিষয়ে আগে কখনও ঈশ্বর প্রকাশ করেন নি, কিন্তু ঘটে যাওয়া গোপন বিষয়গুলো ঘটে যাওয়ার শেষে প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন, প্রকাশিত বাক্য ১২ অধ্যায়ে যিশু খ্রিস্টের জন্ম সম্পর্কে স্বর্গে চিহ্ন দেখা গিয়েছিল, কিন্তু যিশুর এমনকি স্বর্গে আরোহনের পরে ঈশ্বর যোহনের কাছে প্রকাশ করলেন। তৃতীয়তঃ কোন কোন ভাববাণী আছে যেগুলো স্বর্গে ত্রিত্ত্ব ঈশ্বরের পরিকল্পনার অংশ এবং পুরাতন নিয়ম ও নতুন নিয়মে উল্লেখিত হয়েছে এবং সেগুলো এখন বর্তমান, চলমান এবং পরিপূর্ণতার অবস্থায় আছে।

প্রকাশিত বাক্য ১২: ১-৬ পদে দু’টো চিহ্ন লিপিবদ্ধ আছে। প্রথম চিহ্নটিকে ‘মহৎ’ চিহ্ন বলা হয়েছে। কোন কোন ভাষান্তরে ‘মহা ও বিস্ময়কর চিহ্ন’ বলা হয়েছে। এখানে স্বর্গের সেই চিহ্নগুলো কি কি? এ চিহ্নগুলো এমন ঘটনাবলীর চিহ্ন, যা রচনা করা হয় স্বর্গে, আর মঞ্চস্থ হয় বেথেলহেমে, আর যোহন ও দূতেরা এসবের দর্শক; এবং তিনি আমাদের সে বিষয়ে জানালেন।

প্রথমতঃ একজন স্ত্রীলোকের পুত্র-সন্তান লাভ। এ স্ত্রীলোক কি মরিয়ম? হ্যাঁ, ইনি মরিয়ম। মরিয়মের গর্ভে যিশুর জন্ম সম্পর্কে স্বর্গের চিহ্ন  এখানে তুলে ধরা হচ্ছে। কেন ইনি মরিয়ম তা বুঝার জন্য স্ত্রীলোকটির সন্তানটি কে বুঝতে হবে। যে সন্তানের কথা বলা হয়েছে, তিনি পুরুষ, জাতিগণের শাসন করবেন, তিনি ঈশ্বরের সিংহাসনে নীত হলেন (প্রকাশিত বাক্য ১২: ৫)। বাইবেলের অন্যান্য অংশের ভিত্তিতে এ কথাগুলো যিশুর বেলায় খাটে। আর ৯ পদে যেমন সে নাগের নাম শয়তান বলা হয়েছে, ১০ পদে খ্রিস্ট সম্পর্কে বলা হয়েছে যিনি সকল পরাক্রম ও কর্তৃত্বের মালিক, আর ১১ পদে মেষশাবকের কথা বলা হয়েছে।

মরিয়মের পোশাক সূর্য মানে মরিয়মের গৌরবময় অবস্থা যা দিয়ে ঈশ্বর তাকে সম্মানিত করেছেন। কেননা তিনি যিশুকে গর্ভে ধারণ করেছেন। সূর্য আলো দেয় আর অন্ধকার দূর হয়। ‘চন্দ্র’ তার পায়ের তলায় মানে চন্দ্র সূর্যের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম আলো সম্পন্ন। সূর্যের আলো থেকে চন্দ্র আলো পায়। কোন কিছু পায়ের তলায় মানে পরাজয় ও অধীনতা বুঝায়। ঈশ্বরের আশ্চর্যজনক পরিকল্পনার উপরে মরিয়মের বিশ্বাস তার বিপক্ষ সকল শক্তিতে পরাজিত করেছে এবং ঈশ্বরের পরিকল্পনা পূর্ণতা পেয়েছে। আর তার মাথার উপরে দ্বাদশ তারার মুকুট মানে মনোনীতদের বারো বংশ - পুরাতন নিয়মে ঈশ্বরের মনোনীত ইসরাইলের বারো বংশ, নতুন নিয়মে যিশুর বারো শিষ্য সকল মনোনীতদের প্রতীক - অর্থাৎ সমস্ত জাতি, উপজাতি, ভাষাভাষী থেকে আসা সকল মনোনীতরা মরিয়মের মাথার মুকুট, সমস্ত বিশ্বাসী অর্থাৎ মণ্ডলী তার মাথার মুকুট মানে তার গর্বের ও গৌরবের মনোনীত বংশ। মরিয়ম গর্ভবেদনায় কষ্ট পেয়েছেন কেননা তিনি যিশুকে এ পাপময় পৃথিবীতে পাঠানোর মাধ্যম হচ্ছেন। তিনি এ পৃথিবীর এক নারী যিনি আদিপুস্তক ৩: ১৬ পদ অনুসারে গর্ভবেদনা ভোগ করছেন। মরিয়ম অন্যান্য নারির মত এক নারী, কিন্তু যিশু তার গর্ভে এসেছেন বলে তিনি অসাধারণও।

যদিও আমি এ লেখায় যিশুর জন্মদিন উপলক্ষে যিশু বিষয়ে জোর দেব, তবুও যিশুর জন্ম নিয়ে তাঁর মা মরিয়ম যে দুঃখ-ভোগ করেছেন, তা একটু অল্প করে হলেও বলা দরকার। প্রকাশিত বাক্য ১২: ৪ পদ অনুসারে সেই নাগ মরিয়মের প্রসবকালে তার শিশুকে হত্যা করার জন্য প্রস্তুত ছিল। যিশুর জন্মের পরে মরিয়মকে প্রান্তরে পালিয়ে যেতে হয়েছে, যাতে শিশুটিকে রক্ষা করা যায়। এর পরে শয়তান মরিয়মের পিছু নিল যাতে তার পুত্র-সন্তানকে গ্রাস করতে পারে। শয়তান তার সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করল। কিন্তু ঈশ্বর মরিয়ম ও তার সন্তানকে রক্ষা করলেন। মরিয়মের মাথার মুকুট সম তার বাকি বংশের উপরে শয়তান আক্রমণ করতে গেল, যা এখনও চলছে। কিন্তু ঈশ্বর জগতে পরিত্রাণ আনয়নে মরিয়মের উপরে যে দায়িত্ব দিলেন, তিনি তার দায়িত্ব পালন করলেন। এত চাপের মধ্যেও মরিয়ম দূতকে বলেছিলেন, “দেখুন, আমি প্রভুর দাসী; আপনার বাক্যানুসারে আমার প্রতি ঘটুক” (লূক ১: ৩৮)। আর সেজন্য ইলিশাবেৎ মরিয়মকে উদ্দেশ্য করে উচ্চরবে মহাশব্দে বলেছিলেন, “নারীগণের মধ্যে তুমি ধন্য, এবং ধন্য তোমার জঠরের ফল” (লূক ১: ৪২)।

দ্বিতীয় চিহ্ন নাগ সম্পর্কে। যে লোহিতবর্ণ নাগের কথা এখানে আছে, প্রকাশিত বাক্য ১২: ৯ পদ অনুসারে সে সেই নাগ, দিয়াবল বা শয়তান। ৩ পদে সে নাগের সাতটি মাথা, দশটি শিং আর সাতটি মুকুটের কথা আছে। অর্থাৎ সেই শয়তানের পার্থিব এজেন্ট ছিল রোম। তৎকালীন রোমের সম্রাট ছিলেন শয়তানের প্রধান প্রতিনিধি যিনি নিজেকে দেবতা বলে দাবি করেছিলেন, তার প্রতিমা নির্মাণ করেছিলেন এবং প্রজাদের বাধ্য করেছিলেন তাকে পূজা করতে। প্রকাশিত বাক্য ১৭ অধ্যায় অনুসারে সাতটি মাথা মানে হচ্ছে সাতটি পাহাড়, কেননা রোম শহর সাতটি পাহাড়ের উপরে অবস্থিত ছিল; দশটি শিং মানে দশজন আক্রমণকারী রাজা অর্থাৎ বিশ্বাসীদের উপরে নির্যাতন রাজার পর রাজার যুগে চলমান ছিল; আর সাতটি মুকুট মানে সাতজন রোমান শক্তি যা সর্বশক্তি দিয়ে মরিয়মের বংশের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। রোমান সাম্রাজ্যের কালে রাষ্ট্রীয়ভাবে খ্রিস্টানদের উপরে নির্যাতন চলেছিল।

প্রকাশিত বাক্য আমাদের কাছে বেশ কঠিন এক পুস্তক বলে অনেকে মনে করেন। তবে সহজ করে বলতে হয়, ঈশ্বর স্বর্গে তাঁর এক মহা পরিকল্পনার প্লট তৈরি করেছেন, আর পৃথিবীতে তা মঞ্চস্থ করেছেন। স্বর্গে যে চিহ্ন দেখা গিয়েছিল, তা যিশুর জন্মের মধ্য দিয়ে বাস্তবায়িত হয়েছে।

এখানে মরিয়ম ও নাগ বিষয়ক চিহ্ন সম্পর্কে লিপিবদ্ধ আছে। তবে আমরা নারীর পুত্র-সন্তান যিশুকে নিয়ে আলোচনা করব। মরিয়মের গর্ভের সন্তান সম্পর্কে কি বলা হচ্ছে? তিনি কে? দু’টো চিহ্নের মধ্যে একজন সম্পর্কে বলা হচ্ছে, তিনি মরিয়মের পুত্র-সন্তান, যিশু খ্রিষ্ট (প্রকাশিত বাক্য ১২: ১০,১৭)। প্রকাশিত বাক্য ১২: ১৭ পদ অনুসারে, শয়তান শুধু স্ত্রীলোকের সন্তানের সাথে যুদ্ধ করে নি, সে স্ত্রীলোকটির বাকী বংশের সাথেও যুদ্ধ করছিল। এ বাকী বংশ কারা? এ বাকী বংশ তারা যারা “ঈশ্বরের আজ্ঞা পালন ও যিশুর সাক্ষ্য ধারণ করে।” এখানে পরিষ্কার যে, স্ত্রীলোকটির অর্থাৎ মরিয়মের গর্ভের সন্তান যিশু। সে পুত্র-সন্তান যিশু সম্পর্কে এখানে তিনটি বিষয় পরিষ্কার:

(১) মরিয়মের গর্ভে যিনি আসবেন তাঁর জন্মের সময়ে নাগ অর্থাৎ শয়তান তাঁকে মেরে ফেলতে চাইবে। কিন্তু মিখাইল ও তার বাহিনী শয়তানকে পরাজিত করবেন। যিশুর জন্মের সময়ে রোমান রাজা হেরোদ বেথেলহেম ও এর আশেপাশে জন্ম নেওয়া দু’ বছর ও এর নিচু বয়সের সমস্ত পুত্র-সন্তানকে মেরে ফেলার হুকুম দিয়েছিলেন এবং মেরে ফেলেছিলেন (মথি ২: ১৬-১৮)। রাজা হেরোদ শয়তানের প্রতিনিধি। যিশুকে ঈশ্বর রক্ষা করেছিলেন। কেননা তিনি তাঁর দূত প্রেরণ করে যিশুকে রক্ষা করেছিলেন - “প্রভুর এক দূত স্বপ্নে যোশেফকে দর্শন দিয়া কহিলেন, উঠ, শিশুটিকে ও তাঁহার মাতাকে লইয়া মিসরে পলায়ন কর; আর আমি যত দিন তোমাকে না বলি, তত দিন সেখানে থাক, কেননা হেরোদ শিশুটিকে বধ করিবার জন্য তাঁহার অনুসন্ধান করিবে। তখন যোশেফ উঠিয়া রাত্রিযোগে শিশুটিকে ও তাঁহার মাতাকে লইয়া মিসরে চলিয়া গেলেন” (মথি ২: ১৩-১৪)।

(২) তিনি শয়তানের উপরে বিজয়ী হবেন এবং লৌহদণ্ড দ্বারা সমস্ত জাতিকে শাসন করবেন। ইনি যিশু - যিশুই শাসন করবেন। নারীর সাথে ও নারীর বংশের সাথে শয়তানের যুদ্ধ সম্পর্কে এবং বিজয় সম্পর্কে আদিপুস্তক ৩: ১৫ পদে লেখা আছে - “আর আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও  তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।” আর যিশুর শাসন সম্পর্কে লেখা আছে আদিপুস্তক ৪৯: ১০ পদে, যখন যাকোব যিহূদাকে আশীর্বাদ করেন, তখন ঈশ্বর যাকোবের মধ্য দিয়ে এ ভাববাণী করেন, “আর যিহূদা হইতে রাজদণ্ড যাইবে না, তাহার চরণযুগলের মধ্য হইতে বিচারদণ্ড যাইবে না, যে পর্যন্ত শীলো না আইসেন, জাতিগণ তাঁহারই অধীনতা স্বীকার করিবে।” কিভাবে যিশু বিজয়ী হবেন? তাঁর ক্রশীয় মৃত্যু দিয়ে - “আর আধিপত্য ও কর্তৃত্বসকল দূর করিয়া দিয়া ক্রুশেই সেই সকলের উপরে বিজয়-যাত্রা করিয়া তাহাদিগকে স্পষ্টরূপে দেখাইয়া দিলেন” (কলসীয় ২: ১৫)। ইব্রীয় ২: ১৪ পদে আছে, “ভাল, সেই সন্তানগণ যখন রক্তমাংসের ভাগী, তখন তিনি নিজেও তদ্রুপ তাহার ভাগী হইলেন; যেন মুত্যু দ্বারা মৃত্যুর কর্তৃত্ববিশিষ্ট ব্যক্তিকে অর্থাৎ দিয়াবলকে শক্তিহীন করেন।” প্রকাশিত বাক্য ১২: ১১ পদ অনুসারে, সে নাগকে মেষশাবকের অর্থাৎ যিশুর রক্ত দ্বারা পরাজিত করা হয়েছে। যিশুর জন্ম সম্পর্কে গাব্রিয়েল দূত মরিয়মকে সুসংবাদ দেওয়ার পরে, মরিয়ম যে গান করেন, সে গানের ভিতরে তিনি বলেছেন, “তিনি [ঈশ্বর] বিক্রমীদিগকে সিংহাসন হইতে নামাইয়া দিয়াছেন ও নীচদিগকে উন্নত করিয়াছেন” (লূক ১: ৫২)। যিশুর জন্ম ও তাঁর শাসন সম্পর্কে লূক ১: ৩১-৩৩ পদে লেখা আছে, “আর দেখ, তুমি গর্ভবতী হইয়া পুত্র প্রসব করিবে, ও তাঁহার নাম যিশু রাখিবে। তিনি মহান হইবেন, আর তাঁহাকে পরাৎপরের পুত্র বলা যাইবে; আর প্রভু ঈশ্বর তাঁহার পিতা দায়ুদের সিংহাসন তাঁহাকে দিবেন; তিনি যাকোব-কূলের উপরে যুগে যুগে রাজত্ব করিবেন, ও তাঁহার রাজ্যের শেষ হইবে না।” প্রকাশিত বাক্যে লিপিবদ্ধকৃত স্বর্গের চিহ্ন সম্পর্কে গাব্রিয়েল দূত মরিয়মের কাছে ঘোষণা দেন। আর যিশুর জন্ম, মৃত্যু ও সিংহাসনে আরোহণের মধ্য দিয়ে তার পরিপূর্ণতা লাভ করে।

(৩) তাঁর কাজ যখন শেষ হয়ে যাবে তখন ঈশ্বরের কাছে এবং ঈশ্বরের সিংহাসনে তুলে নেওয়া হল। দেখুন প্রকাশিত বাক্য ১২: ৫ পদ অনুসারে বলা হচ্ছে “তাহার সন্তানটি ঈশ্বরের ও তাঁহার সিংহাসনের নিকটে নীত হলেন।” এখানে অতীত কাল ব্যবহার করা হয়েছে, কেননা এ ঘটনা ইতিমধ্যেই যিশুর স্বর্গারোহণের মধ্য দিয়ে সম্পাদিত হয়েছে। প্রেরিত ১: ৯ পদে লেখা আছে, “এই কথা বলিবার পর তিনি তাহাদের দৃষ্টিতে উর্ধ্বে নীত হইলেন, এবং একখানি মেঘ তাহাদের দৃষ্টিপথ হইতে তাঁহাকে গ্রহণ করিল।”
 
এ অংশে যিশুর মৃত্যু ও স্বর্গারোহণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, যা বড়দিন উপলক্ষে নয়, কিন্তু পূণ্য শুক্রবার ও পুনরুত্থান দিবসে আলোচনার বিষয়। তবুও এতটুকু বলা দরকার যে, কেউ কেউ এ ‘তুলে নেওয়া’ সম্পর্কে বিশ্বাস করেন যে, যিশুকে হত্যা করা হয় নি, তুলে নেওয়া হয়েছে। বাইবেলে যিশুর মৃত্যু সম্পর্কে এত পরিষ্কার করে সত্য বর্ণিত আছে যে, যে কোন খ্রিস্টান যিশুর মৃত্যুকে বিশ্বাস ও গ্রহণ করতে কোন অসুবিধায় পড়ে না। আর তাঁকে ঈশ্বরের সিংহাসনে তুলে নেওয়া হয়েছে বলেও বর্ণিত আছে, তাই তুলে নেওয়া হয়েছে মানে তাঁর মৃত্যু হয়নি এমন নয়। প্রকাশিত বাক্যের বর্ণনা মতে, যোহন যিশুকে ঈশ্বরের সিংহাসনের কেন্দ্রে দেখেছেন। যে কেউ আমাদের প্রভু যিশু সম্পর্কে ভিন্ন ধারণা ও মতামত দিতে পারেন, কেননা চিন্তা প্রকাশের স্বাধীনতা সকলের আছে। তবে সেসব মতামত খ্রিস্টানরা নম্রচিত্ত দিয়ে খ্রিস্টীয় বিশ্বাসের প্রতি আঘাত হিসেবে গণ্য করেন। এ বছরের বড়দিনের প্রাক্কালে, উপরে আলোচিত স্বর্গে যোহনের দেখা চিহ্নসমূহ, যিশুর মা মরিয়মের বিশ্বস্ততা, সহনশীলতা ও ত্যাগ; যিশুর জন্মকালীন মরিয়মের দুঃখ-কষ্ট এবং এ পৃথিবীতে মরিয়মের পুত্র-সন্তান যিশুর আগমন, তাঁর বিজয় ও শাসন নিয়ে চিন্তা করার সময়।

লেখক : ধর্মযাজক, গবেষক

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।