মেধাতেই বিজয়ী হবো

সম্পাদকীয় ডেস্ক
সম্পাদকীয় ডেস্ক সম্পাদকীয় ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:৫৯ এএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশের ৪৫তম বিজয় দিবসের দিনটিকে একটু নতুন মাত্রা নিয়ে মূল্যায়ন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ এই বিজয় দিবসের আগে বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে যুক্ত জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদ নামক একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন করে তাকে ফাঁসি দেয়া সম্ভব হয়েছে। তার সাথে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকেও তার অপরাধের জন্য ফাঁসি দেয়া হয়েছে। নিজামীর উচ্চ আদালতের রায়ও পাইপলাইনে আছে।  একই সাথে এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীরা এখনও পাকিস্তানের এজেন্ট। এজন্যই পাকিস্তানিরা তাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। পাকিস্তানের জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে মিছিল করেছে। পাকিস্তান সরকারতো বটেই ইমরান খানের মতো রাজনীতিকও তাদের পক্ষে কথা বলেছে। একমাত্র পাকিস্তানি মানবাধিকার নেত্রী আসমা জাহাঙ্গীর বাংলাদেশের অবস্থানকে সঠিক বলেছেন।

যদি আমরা নিজের দেশের দিকে তাকাই তবে এটি মনে হতেই হবে যে ৪৫ বছরে বাংলাদেশ সারা দুনিয়াতে তার ভিত্তি মজবুত করে প্রকাশ করতে পেরেছে।  একদিন যে দেশটিকে হেনরি কিসিঞ্জার তলাহীন ঝুড়ির দেশ বলেছিলো সেই দেশে এখন ২৩ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ আছে।  কেনিয়ায় গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেই দেশটাকেই অনুসরণ করতে বলেছেন। নরেন্দ্র মোদি তার ডিজিটাল ইন্ডিয়া গড়ার জন্য বাংলাদেশ থেকে শিক্ষা নিতে বলেছেন। মালদ্বীপ তার নিজের ডিজিটাল রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশের সাথে চুক্তি করেছে। বাংলাদেশের যে স্বপ্নের সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক সরে গিয়েছিলো সেই সেতু আমরা কেবল নিজের টাকায় করছিনা তার মূল সেতুর পাইলিং-এরও উদ্বোধন হলো। আমরা বিরতিহীন ভাবে সেতুর ২৭ শতাংশ কাজ করেও ফেলেছি। আরও গর্বের বিষয় কাজটা আমাদের মানুষেরাই করছে।  

স্মরণ করুন, পুরো নয় মাসে নরহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগতো বটেই আমাদের বিজয়ের মাত্র এক দিন আগে তারা আমাদেরকে মেধাহীন করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করেছিলো। আমরা যদি ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালের ঘটনা এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের দিকে একটু নজর দিই তবে অনুভব করতে পারব যে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড গুলো ঘটিয়ে ছিল। কখনও কখনও আমার কাছে বিস্ময়কর মনে হয় যে, এতো আগে তারা কেমন করে অনুভব করেছিল যে একটি জাতিকে যদি পঙ্গু করতে হয় তবে তার মেধাকে ধ্বংস করতে হবে। যেসব বুদ্ধিজীবীদেরকে সেই সময়ে গুম করা হয় বা খুন করা হয় তারা খুব একটা দলীয় রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। আমার শিক্ষক শহীদ মুনির চৌধুরী যথেষ্ট সরব ছিলেন। তার কবর নাটক পাকিস্তানের ভিত কাঁপিয়েছে। কিন্তু আমার অন্য দুই শিক্ষক শহীদ আনোয়ার পাশা বা মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী বস্তুত নিরীহ জীবন যাপন করতেন।  আমরা কোনোদিন তাদের মুখে রাজনীতির কথা শুনতামনা। দুজনেই রবীন্দ্রনাথের ভক্ত ছিলেন। কিন্তু কোনো সভা সমিতিতে কোনোদিন বাংলাদেশকে অস্ত্র দিয়ে স্বাধীন করতে হবে এমন কথা বলতে শুনিনি। তারা সংস্কৃতির কথা বলতেন-সাহিত্যের কথা বলতেন। আমাদের সামনে বাংলা সাহিত্যকে তুলে ধরার বাইরে তারা কখনও পাকিস্তান ভাঙার জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিলেন তেমনটিই মনে পড়ে না। আমরা জানতাম তারা বাঙালি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা যে, একটি ভিত্তিহীন বিষয় সেই বিষয়গুলো তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন। যেসব ডাক্তার বা অন্য পেশাজীবীদেরকে সেই সময়ে হত্যা করা হয় তারাও রাস্তায় মিছিল করে রাজপথ কাঁপিয়েছেন তেমন নয়। শহীদ জহির রায়হান হয়তো মুনির চৌধুরীর মতোই সরব ছিলেন। ফলে তিনি টার্গেট হতে পারেন। কিন্তু পুরো তালিকাটি বিশ্লেষণ করে এটি বোঝা যায় যে, এই বুদ্ধিজীবীদের প্রকাশ্য কর্মকাণ্ড ছাড়াও পাকিস্তানিরা এমন কোনো তথ্য জানতো যার ফলে তারা মনে করেছিলো যে এদেরকেই ধ্বংস করতে হবে। ওরা যদি আরও সময় পেতো তবে ক্ষতির আকারটা অনেক বড় হতে পারতো।

বুদ্ধিজীবী হত্যার আরও একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যে, এই ঘটনাগুলো পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঘটায়নি। এটি ঘটিয়েছে পাকিস্তানি হানাদারদের বাঙালি দালালরা। এতে একটি বিষয় স্পষ্ট হয় যে, ওরা নিশ্চিত হয়েছিলো, দেশটা স্বাধীন হচ্ছে এবং স্বাধীনতা পরবর্তীকালে তাদের রাজনীতিকে সামনে নিতে হলে বাঙালির বুদ্ধিবৃত্তির জায়গাটিকেই আগে ধ্বংস করে দিতে হবে।

গত বছরগুলোতে আমরা লক্ষ্য করেছি যে বাংলাদেশে পাকিস্তানপন্থী রাজনীতির প্রবল বিকাশ ঘটেছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই বিকাশ চরম আকার ধারণ করে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে জিয়াউর রহমানের মতো অস্ত্রধারী মুক্তিযোদ্ধার ইমেজকে কাজে লাগিয়ে পাকিস্তানপন্থী  রাজনীতির উত্থান  ঘটানো হয়েছে। জিয়া মুক্তিযোদ্ধা হওয়া সত্ত্বেও বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও জাতিসত্ত্বা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না রাখায় তাকে পাকিস্তানপন্থীরা ব্যবহার করতে সক্ষম হয় এবং আজকের বাংলাদেশের রাজনীতির মূল স্তম্ভটিকে পাকিস্তানপন্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করায় তার অবদানের কোনো তুলনা নাই।  হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়া সেই পদাঙ্কই অনুসরণ করেছেন।

বিষয়টি যে মেধার সেটিই অনুভব করার বিষয়। এতে এটিও প্রমাণিত হয়েছে যে একাত্তর সালে কেউ পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করলেই তার মাঝে বাঙালির জাতিসত্ত্বার অবস্থান গড়ে ওঠেনি। আবার কেউ অস্ত্রের লড়াইতে শরিক হয়নি বলেই সে বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে অংশ নেয়নি সেটিও সঠিক নয়। সরকার যে সনদপত্র দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সেটি যে ভ্রান্ত এতে সেটাও প্রমাণিত হয়। কৃষিভিত্তিক সমাজ থেকে আগত নীতি নির্ধারকগণ যে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ ও মেধার মূল্য বুঝতে অক্ষম সেটিও তাতে প্রমাণিত হয়।

বুদ্ধিজীবী হত্যায় এটি আরও স্পষ্ট হয়েছে যে অস্ত্রের লড়াই আর মেধার লড়াই এক নয়। অস্ত্র দিয়ে দেশ স্বাধীন করেই মেধার লড়াইতে জিতে যাওয়া যায় না। জিয়ার মগজের পচন সেই প্রমাণ বহন করে। অন্যদিকে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা যারা পাকিস্তানের দখলদারিত্বের মাঝে বসবাস করেছিলেন তারাও মেধা দিয়ে প্রবলভাবে বাঙালির মুক্তির জন্য লড়াই করে গেছেন। আমি মনে করি আজকের বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক লড়াইটা প্রকৃতপক্ষেই মেধার।  সেজন্য আমাদেরকে একটি বিষয় খুব দৃঢ়ভাবে অনুভব করতে হবে যে মেধার লড়াইতেই আমরা যেন যুদ্ধটা জেতার চেষ্টা করি।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, বাংলাদেশের জন্য একটি পরম সৌভাগ্যের বিষয় যে ৯৬ এবং ২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছেন। তার শাসনকালের প্রথম আমলটি গুছিয়ে নিতে সময় গেলেও দ্বিতীয় আমলে তিনি দেশটিকে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার পথে স্থাপন করেন। তার ডিজিটাল বাংলাদেশ শ্লোগান পুরো জাতিকে ডিজিটাল যুগে স্থাপন করেছে। এবার তিনি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার প্রত্যয় ঘোষণা করেছেন।

আমরা যদি একাত্তরে হানাদার ও তাদের দোসরদের প্রকৃত ষড়যন্ত্রটিকে চিহ্নিত করতে পারি তবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জন্য কেবল চোখের পানি ফেলাটাই তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে না। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য সর্বপ্রকারের আয়োজন করা। আমি এই কলামে পুরো বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করছি। এখানে শুধু একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আমরা আমাদের শহীদদের স্মৃতিকে চিরস্থায়ী করার জন্য বা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্য অন্তত একটি কাজে নিমগ্ন হতে পারি। সেই কাজটি হওয়া উচিত দেশের কোটি কোটি বাঙালিকে মানব সম্পদে পরিণত করা। এজন্য আমি কয়েকটি পদক্ষেপের কথা বলতে পারি। বিষয়টি হচ্ছে ডিজিটাল রূপান্তর ও মানবসম্পদ গড়ে তোলা: আমি মাত্র পাঁচটি ধারায় এই রূপান্তরের মোদ্দা কথাটা বলতে চাই। মনে রাখতে হবে এখন লড়াইটা জ্ঞানকর্মী তৈরি করার। এজন্য শিক্ষার গুরুত্বটা সবার আগে বুঝতে হবে।

ক. প্রথমত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়টি শিশুশ্রেণি থেকে বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্য করতে হবে। প্রাথমিক স্তরে ৫০ নাম্বার হলেও মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিষয়টির মান হতে হবে ১০০। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা, ইংরেজি-বাংলা-আরবি মাধ্যম নির্বিশেষে সকলের জন্য এটি অবশ্যপাঠ্য হতে হবে। বাংলাদেশের কোনো শিশু এই বাধ্যতামূলক শিক্ষার বাইরে থাকতে পারবে না। এর ফলে শৈশব থেকে সবাই ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহারের দক্ষতা পাবে।

খ. দ্বিতীয়ত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতি ২০ জন ছাত্রের জন্য একটি করে কম্পিউটার হিসেবে কম্পিউটার ল্যাব গড়ে তুলতে হবে। এই কম্পিউটারগুলো শিক্ষার্থীদেরকে হাতে কলমে ডিজিটাল যন্ত্র ব্যবহার করতে শেখাবে। একই সাথে শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে নিজেরা এমন যন্ত্রের সত্বাধিকারী হতে পারে রাষ্ট্রকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষায় ইন্টারনেট ব্যবহারকে শিক্ষার্থী-শিক্ষক-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আয়ত্বের মাঝে আনতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে দিতে হবে।

গ. তৃতীয়ত প্রতিটি ক্লাশরুমকে ডিজিটাল ক্লাশরুম বানাতে হবে। প্রচলিত চক, ডাস্টার, খাতা কলম বইকে কম্পিউটার, ট্যাবলেট পিসি, স্মার্ট ফোন, বড় পর্দার মনিটর/টিভি বা প্রজেক্টর দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করতে হবে। প্রচলিত স্কুলের অবকাঠামোকে ডিজিটাল ক্লাশরুমের উপযুক্ত করে তৈরি করতে হবে।

ঘ. চতুর্থত সকল পাঠ্য বিষয়কে ডিজিটাল যুগের জ্ঞানকর্মী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপযোগী পাঠক্রম ও বিষয় নির্ধারণ করে সেইসব কনটেন্টসকে ডিজিটাল কনটেন্টে পরিণত করতে হবে। পরীক্ষা পদ্ধতি বা মূল্যায়নকেও ডিজিটাল করতে হবে।  অবশ্যই বিদ্যমান পাঠক্রম হুবহু অনুসরণ করা যাবে না এবং ডিজিটাল ক্লাশরুমে কাগজের বই দিয়ে শিক্ষা দান করা যাবে না। কনটেন্ট যদি ডিজিটাল না হয় তবে ডিজিটাল ক্লাশরুম অচল হয়ে যাবে। এইসব কনটেন্টকে মাল্টিমিডিয়া ও ইন্টারএ্যাকটিভ হতে হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ডিজিটাল যুগের বা জ্ঞানভিত্তিক সমাজের উপযোগী বিষয়বস্তু শিক্ষা দেয়া। আমাদের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় কার্যত এমনসব বিষয়ে পাঠদান করা হয় যা কৃষি বা শিল্পযুগের উপযোগী। ডিজিটাল যুগের বিষয়গুলো আমাদের দেশে পড়ানোই হয় না।  সেইসব বিষয় বাছাই করে তার জন্য পাঠক্রম তৈরি করতে হবে।

ঙ. পঞ্চমত: সকল শিক্ষককে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাঠদানের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। সকল আয়োজন বিফলে যাবে যদি শিক্ষকগণ ডিজিটাল কনটেন্ট, ডিজিটাল ক্লাশরুম ব্যবহার করতে না পারেন বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করতে না জানেন। তারা নিজেরা যাতে কনটেন্ট তৈরি করতে পারেন তারও প্রশিক্ষণ তাদেরকে দিতে হবে।  কিন্তু শিক্ষকগণ কোনো অবস্থাতেই পেশাদারী কনটেন্ট তৈরি করতে পারবেন না। ফলে পেশাদারী কনটেন্টস তৈরির একটি চলমান প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে হবে।

এর সাথে আরও বড় বিষয় হবে শিক্ষার পাঠ্যসূচি এবং পাঠ্য বিষয়ে আমূল সংস্কার করা। ইন্টারনেটের যুগে যেসব পেশা থাকবে না সেইসব বিষয় না পড়িয়ে যেসব নতুন পেশার জন্ম হচ্ছে সেইসব বিষয় পড়াতে হবে।

এর চাইতেও জরুরি বিষয় হচ্ছে প্রতিটি শিশুকে বাঙালির জাতিসত্ত্বার মূল ভিতটি জানতে হবে। প্রতিটি ক্লাশে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাথা ও শহীদের জীবনদানের কাহিনী বাধ্যতামূলকভাবে পাঠ্য করা ছাড়াও বাঙালি জাতিসত্ত্বার মূল বিষয় পড়াতে হবে। পাকিস্তানি হানাদারদের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে হবে ডিজিটাল মুক্তিযোদ্ধাদের দল।

আমি মনে করি, আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য বাঙালি জাতিসত্ত্বার মুল বিষয়গুলো তুলে ধরতে পারিনি। সেই কাজটি না করে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে না-বিজয়ের স্বাদও পাওয়া হবে না। আসুন একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।

জ্ঞানকর্মীদের জন্য গবেষণা ও আবিষ্কারে মনোযোগী হওয়াটাও খুবই জরুরি। তাদেরকে মেধার মূল বুঝতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তিতে নিমগ্ন থেকে আবিষ্কারের নেশায় মেতে ওঠা এই জাতির প্রতিটি তরুণের স্বপ্ন হতে হবে। একই সাথে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মেধাসম্পদের মূল্য দিতে জানতে হবে। পাইরেসি প্রতিরোধ করতে হবে এবং নিজের ও অন্যের মেধার স্বীকৃতিও দিতে হবে।

আসুন এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসকে মনে রেখে প্রতিজ্ঞা করি যে বাংলাদেশে একটি জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার জন্য আমরা ডিজিটাল মুক্তিবাহিনী গড়ে তুলবো। আমি আমার নিজের কথা বলতে পারি যে, এই প্রত্যয় নিয়ে ২০১৬ সালে আমরা শিক্ষার ডিজিটাল রূপান্তরের প্রথম সিঁড়িটা দৃশ্যমান করতে পারবো। এবার আমরা দেখাতে পারবো যে শিশুরা বই খাতার বদলে ল্যাপটপ নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে। এবার আমরা দেখাতে পারবো যে জ্ঞানকর্মী গড়ে তোলান মহাযজ্ঞটা আমরা শুরু করেছি। দুনিয়ার উন্নত দেশগুলোর মতো করেই আমাদের সন্তানেরা ডিজিটাল যুগের শিশু হবে এবং নিজেদেরকে জ্ঞানকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। আমি এবং আমাদের জাতির সবাই বিশ্বাস করি, বাঙালির বিজয় অনিবার্য। আর এই বিজয়টা হবে মেধার লড়াই। একাত্তরে আমরা যে সশস্ত্র লড়াই করেছিলাম সেই লড়াইটাই এবার ডিজিটাল লড়াই। আমাদের নতুন প্রজন্মকে আহ্বান জানাই আসুন ডিজিটাল মুক্তিযোদ্ধা হই। তাতেই আমাদের মেধার জয় হবে। আমরা তখনই আমাদের বুদ্ধিজীবী শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে পারবো।

লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ,  কলামিষ্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার-এর জনক।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।