ধর্ম বলতে মানুষ বুঝুক মানুষ শুধু
বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা। পাঁচদিনের এই শারদীয় দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হচ্ছে আজ। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ দেশে প্রতিটা উৎসব-পার্বণ আসে আনন্দের বার্তা নিয়ে। ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। হিন্দু সম্প্রদায়ের দুর্গোৎসবে সেটি আবার প্রমাণিত হল।
এবার সারা দেশে ৩২ হাজার ১১৭টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়েছে; তার মধ্যে ঢাকা পূজা হচ্ছে ২৩৮টি মণ্ডপে। গত সোমবার সকালে ষষ্ঠী তিথিতে বেলতলায় বিহিতপূজার পর দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসবের সূচনা হয়। সন্ধ্যায় হয় দেবীর বোধন, অর্থাৎ ঘুম ভাঙানোর আরাধনা। মঙ্গলবার ছিল দেবী দুর্গার মর্ত্যে আসার দিন, মহাসপ্তমী। মণ্ডপে মণ্ডপে কলাবউ সাজিয়ে দেবী দুর্গার নয়টি বিশেষ রূপের আরাধনা করেন ভক্তরা, মঙ্গল কামনা করেন নিজের, পরিবারের এবং দেশের জন্য।
বুধবার মহাঅষ্টমীর দুপুরে মণ্ডপে মণ্ডপে প্রসাদ বিতরণ করা হবে; রাতে হবে সন্ধি পূজা। বৃহস্পতিবার বিহিত পূজার মাধ্যমে হবে মহানবমীর আরাধনা। শুক্রবার বিজয়া দশমীতে দর্পন বিসর্জনের পর প্রতিমা বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে এবারের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিকতা।
মণ্ডপে মণ্ডপে ঢাকের বাদ্য, শঙ্খ আর উলুধ্বনির শব্দ দেবী দুর্গার মর্ত্যে আগমনের কথা জানান দিচ্ছে। এ ছাড়া পূজার মন্ত্রোচ্চারণ, আরতি আর মাইকের আওয়াজে মাতোয়ারা হয় পূজা মণ্ডপগুলো। হিন্দুদের পাশাপাশি অন্য ধর্মের মানুষও এসব মণ্ডপে ঘুরতে আসায় উৎসব সার্বজনীন রূপ নেয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজা উপলক্ষে সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়। রাজধানীসহ সারাদেশে ৩২ হাজারেরও বেশি পূজামণ্ডপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। “মিথ্যা শুনিনি ভাই/ এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনও মন্দির-কাবা নাই ”। কাজী নজরুলের এই অমিয়বাণী হৃদয়ে ধারণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময়- বাংলার হিন্দু, বাংলার বৌদ্ধ,/ বাংলার খ্রীস্টান, বাংলার মুসলমান,/আমরা সবাই বাঙালী।।- এই মন্ত্রে বীর মক্তিযোদ্ধারা বাংলাদেশকে স্বাধীন করার জন্য রক্ত দিয়েছে। কাজেই এই চেতনা ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র। ধর্মীয় উগ্রবাদ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল সবুজের পতাকা। একটি মানচিত্র, একটি সংবিধান। সেই সংবিধান অনুযায়ী ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের সমান অধিকার এই দেশের মৃত্তিকায়। কেউ সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু নয়। মানুষের পরিচয় তার মনুষ্যত্বে।
প্রতিটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসবে তাই এক মহামিলন ঘটে সবার। এবারের পূজাও (কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে) সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐতিহ্য রক্ষা করে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে- এটি স্বস্তির দিক। যে কোনো মূল্যে সম্প্রীতির মেলবন্ধন ধরে রাখতে হবে।
সবাইকে বিজয়া দশমীর শুভেচ্ছা।
এইচআর/জিকেএস