গৌরবের পদ্মাসেতু


প্রকাশিত: ০৫:১৫ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর মূল কাজের উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘বিশ্ব দেখুক, আমরাও পারি`- উক্তির মধ্য দিয়ে যে প্রত্যয়ী মনোভাবের পরিচয় দিয়েছেন সেটি আমাদের আত্মমর্যাদাবোধকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। শনিবার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের শরীয়তপুরের জাজিরায় প্রকল্পটির নদীশাসন এবং এরপর মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় মূল সেতুর পিলার বসানোর কাজ উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি আরো বলেন- ‘দেশে বড় কোনো কাজ করতে গেলেই বিদেশিদের কাছে হাত পাততে হবে- এ মানসিকতা থেকে বাংলাদেশের মানুষ বেরিয়ে এসেছে।`  প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যও অনুপ্রেরণামূলক এবং দেশাত্মবোধের পরিচায়ক। বস্তুত পদ্মাসেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে বাঙালির একটি নবজাগরণ লক্ষ্য করা গেছে। বিজয়ী বাঙালি জাতির মধ্যে এই বোধ জেগে উঠেছে-‘আর পরমুখাপেক্ষি নয়-এবার ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।’ বাঙালি জাতির ঐক্যের প্রতীক স্বাধীনতা। সেই জাতি দেশগঠনেও যে এক কাতারে শামিল হতে পারে তার প্রমাণ তারা বার বার দিয়েছে। সর্বশেষ পদ্মাসেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও সেটি দেখা গেল।   

বহুল কাঙ্খিত পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য সরকারের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি করেছিল ২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই একই বছরের ২১ সেপ্টেম্বর সংস্থাটি প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তোলে। একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংক প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করে। এই প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালের ৯ জুলাই সরকার নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। দেশের মানুষও নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের জন্য অকুণ্ঠ সমর্থন জোগায়। প্রধানমন্ত্রীও তার বক্তব্যে সেটি স্মরণ করে বলেন, ‘দেশের সাধারণ মানুষের সমর্থনই তাকে শক্তি জুগিয়েছিল। অনেকে চেক দিয়েছিল, অনেকে অর্থ দিয়েছিল। এই যে সাহস, এই যে সহযোগিতা, এটাই আমাকে সাহস দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে।’

নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ এক সময় স্বপ্ন থাকলেও আজ সেটি বাস্তবের দোরগোড়ায়। নানা ষড়যন্ত্র আর ভ্রূঁকুটি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ প্রথম বারের মত এই ধরনের বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। ৪৪ বছরে নানা চড়াই-উৎরাইয়ের পরও দেশ এগিয়েছে। যে কারণে পদ্মাসেতু সেতু নির্মাণের অর্থ আমরা নিজেরাই দিতে পারছি। আমাদের রিজার্ভ ২৭ বিলিয়ন ডলারের ওপরে। সেখান থেকে দুই-চার বিলিয়ন খরচ করা বাংলাদেশের জন্য কোনো কষ্টকর বিষয় নয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। সবকিছু ঠিক থাকলে প্রত্যাশিত সময় অর্থাৎ ২০১৮ সালের মধ্যেই এই সেতু যানবাহন ও রেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে দীর্ঘদিন ধরে একটি বৃহৎ সেতু নির্মাণের দাবি ছিল।  প্রধানমন্ত্রীর সেতুপ্রকল্পের মূল কাজের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে সেই স্বপ্নের চূড়ান্ত পরিণতি দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এই সেতুর কাজ যাতে যথা সময়েই শেষ হয় সেটি নিশ্চিত করাটাই এখন জরুরি। কারণ এটি শুধু একটি স্থাপনা নয় এর সঙ্গে বাঙালির আত্মমর্যাদাবোধের প্রশ্নটিও জড়িত। বিজয়ী বাঙালি জাতি চাইলে যে অনেক অসাধ্য সাধন করতে পারে সেই গৌরবের কথাই সদম্ভে উচ্চারিত হবে পদ্মাসেতু বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে। দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় আছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।