পরীমনি, ব্যবসায়ী ও সোসাইটি
উন্নতি আর অগ্রগতি দুটোর সূচক আলাদা। উন্নতির সূচক উলম্ব, অগ্রগতির আনুভূমিক। উন্নতির সূচক উপরের দিকে, অগ্রগতির সামনের দিকে। উন্নয়ন হচ্ছে, অস্বীকারের সুযোগ নেই। ভবন, টানেল, সেতু, উড়াল সেতু নির্মিত হচ্ছে। কিন্তু মানবিক উন্নয়ন? বোধ, বিবেচনা, রুচি এসব তৈরি হবে কোথা থেকে যদি উন্নয়নের শিক্ষাকে কাজে লাগাতে না পারি।
দামি ব্র্যান্ড, ঘড়ি-গাড়ি, দুবাই-মরিশাস কি দেয়? পরিচয়? এসবে কী শেষাবধি ব্যক্তি নিজে ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠতে পারে? ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠে মানুষ কাজের মধ্যে দিয়ে। কামের মধ্য দিয়ে তা হয়ে ওঠা সম্ভব নয়? কেউ নিতান্ত ‘মদন’ ও ‘বসন্ত’ হতে পারে। কিংবা প্রাচীন গ্রিসের কোন কামের দেবতা।
মানুষের পরিচয় শেষাবধি তার কর্মেই। টাকা আছে কাজ নেই। উপার্জন হচ্ছে কিন্তু কোনো অর্জন নেই। অলস উপার্জন। কোটি কোটি মিলিয়ন বিলিয়ন ট্রিলিয়ন। স্বাভাবিকভাবেই সে তখন খপ্পরে পরে শয়তানের, ইবলিশের। তার কাজকর্মও তখন লুসিফার আর ম্যাফেস্টোফিলিসের ক্রিয়াকলাপ হয়ে ওঠে।
এমনই এক সময় অতিক্রম করছে বাংলাদেশ। এই উন্নয়নের উপার্জনকে কীভাবে ব্যয় করবে তা বুঝতে পারছে না। উৎকট পুঁজি তাকে মানবিকতার দিকে নেবে না। নিতান্ত ভোগবাদী হয়ে উঠছে সে। মদ-নারী ভোগবাদিতার অন্যতম অনুষঙ্গ। নারীর ক্ষেত্রে পুরুষও ভোগ্য। ক্লিওপ্লেট্রার কথা মনে আছে নিশ্চয়ই।
সমাজে মানবিকতা কমছে, আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। রীতিমতো হিমাংকের নিচে শূন্য ডিগ্রিতে অবস্থান করছে। অসভ্য, উলঙ্গ রীতিমতো। পোশাক খুলে গেছে অনেক আগেই। প্রাচীন গুহাচিত্রে, চিত্রপটে পোশাক নেই কিন্তু হাত দিয়ে যে আব্রু করার সংস্কৃতি দেখা গেছে এখন তাও নেই।
লোভ মানুষের বোধ নষ্ট করে ফেলে। পুঁজিবাদের নেতিবাচকতা এখানেই ক্রিয়াশীল। মানুষ আর মানুষ থাকে না। সে তখন যন্ত্র। পুরুষ বা নারী। হয় মানি মেশিন, নয় সেক্স টয়। কোনো না কোনো একটা যন্ত্র। মানুষ নয় কিছুতেই; যেহেতু তার বোধটি বিলুপ্ত হয়েছে।
আমি প্রতিদিনই ট্রেন্ডিং টপিক সার্চ দেই। আজ দেখলাম পরীমনি। চিনি না তাকে। দেখেছি তিনি নায়িকা। হয়তো সিনেমার খবর কম রাখার কারণে নায়িকাদের জানার সুযোগ কম হয়েছে। আর সিনেমাও তো এখানে আগের চেয়ে কমে গেছে। দেখলাম নানা ধরনের খবর। অনেকটা রগড়।
সাংবাদিকদের দিন দিন রুচি ধস ঘটছে। অনেকেই সকাল থেকে ফোন দিয়েছেন, বলেছেন আপনি একটা স্ট্যাটাস দেন এ ঘটনায়। কি স্ট্যাটাস দেব? আমার কাছে পুরুষ বা নারী বিষয় নয়। বিষয়- ন্যায্যতা, মানবিকতা, মানুষ। আমি বরাবরই সভ্যতার পক্ষে। অসভ্যতার বিপক্ষে। সমাজ যে লোভী, অর্থপিপাসু, কামার্ত, লুটেরাদের ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে- সে খেয়াল কারও আছে?
পুনশ্চঃ সেদিন জনপ্রিয় একটি অনলাইনে ইউটিউব কনটেন্ট নিয়ে লিখতে গিয়ে বিকারগ্রস্ত এক মেয়ের কথাও লিখেছিলাম। যে স্তন ইনপ্ল্যান্ট করে তরমুজ অবয়ব করেছে শুধু অর্থ উপার্জনের আশায়। আবার পুলিশের ডিবি অফিসে গিয়ে মুচলেকা দিয়ে লাইভে এসে ক্ষমাও চেয়েছে।
হ্যাঁ, শরীর আমার সিদ্ধান্ত আমার। তাই বলে তো আমি সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারি না। দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই অনলাইনটি আমার লেখার এই অংশটি বাদ দিয়েছে। তাহলে কোথায় যাচ্ছি আমরা? মনে রাখতে হবে, আমি কিন্তু স্বেচ্ছা পতিতাবৃত্তিরও বিপক্ষে। কেননা পতিতাবৃত্তি শেষ পর্যন্ত যৌন নির্যাতনকেই সমর্থন করে।
লেখক : সম্পাদক, আজ সারাবেলা; সদস্য, ফেমিনিস্ট ডট কম, যুক্তরাষ্ট্র।
এইচআর/এমকেএইচ