কমিউনিটি ক্লিনিক জনগণের স্বাস্থ্যসেবার এক যুগান্তকারী মডেল
দেশ বিদেশের এবং বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থার বিশেষজ্ঞরা আজ একবাক্যে স্বীকার করেন যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের অভিনব ধারণা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। মৌলিক স্বাস্থ্য সেবার সুবিধাসমূহ আজ কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমেই দেশের প্রান্তিক ও অন্যান্য তৃণমূল মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছে-যার ফলে সরাসরি উপকৃত হচ্ছে দেশের গ্রামাঞ্চলের জনগণের বিশাল একটি অংশ।
কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মীরা জন্ম ও মৃত্যুর নিবন্ধন, টিকা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং পরামর্শ পরিষেবা সহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলিতে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের মধ্যে সফলভাবে কাজ করছে। দীর্ঘকাল ধরে চলমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থা অনেকটা শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় অপেক্ষাকৃত সচ্ছল বা ধনী লোকদের মত প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের গরীব বা হতদরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্য সেবার নিশ্চয়তা দিতে পারছিল না। তাই ‘সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা’র মত মানুষের জন্মগত মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্য অর্জন করা আমাদের জন্য সম্ভব ছিল না। এবং বৈপ্লবিক কোনো পদক্ষেপ ছাড়া একশ বছরেও এটা অর্জন করা কঠিন হত। তখন ১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের দুস্থ জনগণের জন্য তাঁর হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসার প্রকল্প এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন- যার মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় আরাধ্য স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছানোর সরকারী উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু অত্যন্ত সফল জনসেবা মূলক প্রকল্প হওয়া সত্তে¡ও কমিউনিটি ক্লিনিকের যাত্রাপথ মসৃণ ছিল না।
মাত্র ৩ বছরের মাথায় সরকার বদলের সাথে সাথে অন্যান্য অনেক উন্নয়ন প্রকল্পের মত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পকেও বন্ধ করে দেওয়া হয়, যা কেবল ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আবার প্রাণ ফিরে পায়। বর্তমানে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশব্যাপী বিস্তৃত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বিভিন্ন অনলাইন জরিপ এবং বিবিএসের তথ্য অনুসারে কমিউনিটি ক্লিনিকের ৯০ শতাংশের বেশি গ্রাহকেরা তাদের পরিষেবা ও সুবিধার ক্ষেত্রে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এই বিকেন্দ্রীভূত স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম একটি অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া এবং সময়ের সাথে সাথে নতুন নতুন সেবা যুক্ত হচ্ছে যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য আরও অধিকতর সুবিধা নিয়ে আসবে।
সরকার ক্লিনিকগুলি থেকে নিখরচায় প্রায় ২০ প্রকারের ওষুধ বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। ইপিআই প্রোগ্রামের মাধ্যমে শিশুদের টিকা ও ভিটামিন এ দেওয়ার কার্যক্রম এছাড়াও বিষয় ভিত্তিক পরামর্শ, যেমন পুষ্টির জন্য বা পরিবার পরিকল্পনার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ধাত্রীরা ক্লিনিকগুলির মাধ্যমে গর্ভবতী মায়েদের প্রসবের পরিষেবা সরবরাহ করায় ক্লিনিকগুলি মাতৃ এবং শিশু মৃত্যুর হার হ্রাসে সরাসরি অবদান রাখে। লোকেরা যখনই ডায়রিয়া, কাশি এবং সর্দি দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন তারা ক্লিনিকগুলিতে আস্থা রাখে।
বর্তমান সরকার দেশের সাগগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় সহ আরও কয়েকটি মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক সরকারের সর্বনিম্ন কিন্তু গ্রাহক হিসাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক প্রাইভেট স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো, যা এই সরকারের এমডিজি লক্ষ্য অর্জনের প্রধান হাতিয়ার হিসাবে কাজ করেছে, আর ভবিষ্যতে এসডিজির লক্ষ্য অর্জনের জন্যও অপরিহার্য।
সাধারণত, কমিউনিটি ক্লিনিকগুলি মানুষের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং রেফারেল পরিষেবা প্রদান করে থাকে তবে অবিলম্বে পরিষেবাটি আরও প্রশস্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবাকে সবার জন্য সহজলভ্য করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এরই পরম্পরায় তাঁর সুযোগ্য কন্যা "মাদার অফ হিউম্যানিটি" প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি দীর্ঘায়ু হোন, তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প চিরস্থায়ী হোক, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।
লেখক : ভাইস চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
এইচআর