শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না খোলা শিক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য ও জনপ্রত্যাশা

ড. মিল্টন বিশ্বাস
ড. মিল্টন বিশ্বাস ড. মিল্টন বিশ্বাস , অধ্যাপক, কলামিস্ট
প্রকাশিত: ০৯:৫৬ এএম, ২৭ মে ২০২১

২৬ মে (২০২১) এক ভার্চুয়াল প্রেস কনফারেন্সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ও শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গের অবতারণা করেছেন। ভাইরাসের বিস্তার রোধে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ শুরু হওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ১২ জুন (২০২১) অবধি বর্ধিত করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়েও তিনি সুস্পষ্ট মতামত ব্যক্ত করেছেন। এমনকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের আবাসিক হলসমূহ খুলে দেওয়ার বিষয়েও করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় শিক্ষার্থীদের আনার কথাও বলা হয়েছে। সব মিলে বরাবরের মতো এবারও শিক্ষামন্ত্রীর সুচিন্তিত মতামত প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু শিক্ষা সংকটের মধ্যে পড়ে ধৈর্য্যহারা জনগণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যাচ্ছে। তবে গত দেড় বছর যাবৎ শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেশ কিছু ফলপ্রসূ সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে, যার ফলে শিক্ষার অগ্রগতিকে অটুট রাখা সম্ভব হয়েছে।

ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন, স্কুল-কলেজ খোলার পর ক্লাসে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে ২০২১ সালের এসএসসি ও এইচএসসি ছাত্র-ছাত্রীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তারা সপ্তাহে ছয় দিন ক্লাস করবে। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের বাকি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন ক্লাস করবে।তিনি জানান, এ বছর অটোপাস দেওয়ার ইচ্ছা সরকারের নেই। বিশ্ববিদ্যালয় খোলা নিয়ে তিনি আরো জানান, শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে। এ বিষয়ে খুব শীঘ্রই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক (এসএসসি) ও এপ্রিলে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি)পরীক্ষা শুরু হলেও এ বছর করোনার কারণে এ দুটি গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক পরীক্ষা এখনও নেওয়া সম্ভব হয়নি। গত বছর এসএসসি পরীক্ষা নেওয়া গেলেও এইচএসসিতে শিক্ষার্থীদের অটোপাস দেয় সরকার।এর আগে সময় পিছিয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে এসএসসি পরীক্ষা জুনে ও এইচএসসি পরীক্ষা আগস্টে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সেজন্য এসএসসি ৬০ দিন ও এইচএসসি ৮৪ দিন ক্লাস ধরে পরিমার্জিত সংক্ষিপ্ত সিলেবাসও প্রকাশ করেছিল শিক্ষা বোর্ড। হঠাৎ করে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় এ ঘোষণার বাস্তবায়নও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।দেশের শিক্ষা সেক্টরে অশনি সংকেত ধ্বনিত হলেও প্রথম থেকে শিক্ষামন্ত্রীর বাস্তবসম্মত পদক্ষেপগুলো ছিল যথার্থ। তিনি নিজে ডাক্তার হওয়ায় এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে এই ভাইরাসের ক্ষতিকর দিক সম্বন্ধে স্পষ্ট ধারণায় লাভ করায় যুবসমাজকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে চাননি। বরং একাধিক মিটিংয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা উল্লেখ করে অনলাইন ক্লাসের ওপর জোর দিয়েছেন।

অনলাইন শিক্ষার গুরুত্ব:

অনলাইন শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে বলতে গিয়ে ডা. দীপু মনি বলেছেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে আমাদের কর্মক্ষেত্র এত পরিবর্তন হবে যে বর্তমানে অর্জিত জ্ঞান হয়তো ভবিষ্যতে আর প্রয়োজন হবে না। সেক্ষেত্রে কর্মজীবীদের পক্ষে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে কোনো কর্মজীবী যে কোনো সময় যে কোনো পরিবর্তনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। সে যেন অনলাইনের মাধ্যমে শিখতে পারে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সে সুযোগ রাখতে হবে।তাঁর মতে, ডিজিটাল শিক্ষার যুগে বাচ্চাদের শেখার উপকরণগুলো সহজেই বোধগম্য এবং উপভোগ্য করে তৈরি করা দরকার। পড়াশোনা সবসময় পরীক্ষাকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়, বরং নীতিবান, দায়িত্বশীল এবং সংবেদনশীল মানুষ গড়তে যেসব শিক্ষা দরকার তার প্রয়োজনীয়তা অনেক, যেমনটা জাতির পিতা স্বপ্ন দেখেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভার্চুয়াল ক্লাস :

২০২০ সালের ২৩ জুন পুনরায় বলা হয়, করোনা পরবর্তী সময়েও দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভার্চুয়াল ক্লাস চলমান থাকবে।ডা. দীপু মনি তখন বলেছিলেন, ‘১০ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেওয়া যায় কিনা তার ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা ওয়ান স্টুডেন্ট ওয়ান ল্যাপটপ লোনও দিতে পারি।’ তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে উদ্যোগ নিয়ে চাহিদা অনুযায়ী জনশক্তি তৈরি করতে হবে।

আমার ঘরে আমার স্কুল :

চলমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধকালীন সময়ে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির পাঠদানের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য “সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন”-এ বিষয়ভিত্তিক ক্লাস শুরু করে।এ প্রসঙ্গেও শিক্ষামন্ত্রী কথা বলেছেন।

সংসদ টিভির ক্লাসগুলো প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছেছে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, ‘মাঠ পর্যায়ের জরিপে আমরা জানতে পেরেছি- সংসদ টিভির ক্লাসগুলো মোবাইল ফোনসহ প্রযুক্তির বিভিন্ন মাধ্যমে প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী দোরগোড়ায় পৌঁছেছে। তবে এখনও ১০ ভাগ শিক্ষার্থীর কাছে সংসদ টিভির ক্লাসগুলো পৌঁছায়নি। কিন্তু এই দশভাগকে পিছনে ফেলে আমরা সামনে এগিয়ে যাব না। তাই ইতোমধ্যেই আমরা টোল ফ্রি মোবাইল সুবিধা দেব যা খুবই দ্রুত সেটা চালু করতে যাচ্ছি যার মাধ্যমে সেই ১০ ভাগ শিক্ষার্থীও শিক্ষকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার মাধ্যমে পাঠের সুযোগ পাবে। এছাড়া ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে বাজেটে প্রস্তাবনা থাকলেও শুধু শিক্ষাক্ষেত্রকে এর বাইরে রেখে বা নাম মাত্র মূল্যে কিভাবে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়া যায় সেটা নিয়েও আমরা ভাবছি। এ ছাড়াও কমিউনিটি রেডিওর মাধ্যমেও তাদের কাছে শিক্ষা পৌঁছানোর বিষয়ে আমাদের কাজ চলছে। ইউনিয়ন পর্যায়ের তথ্য সেবা কেন্দ্র ও ডিজিটাল সেবা কেন্দ্রগুলোকে শিক্ষার জন্য ব্যবহার করা পরিকল্পনা রয়েছে।’

অনলাইন একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির কার্যক্রম:

২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে অনলাইন ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয় শিক্ষামন্ত্রীর সার্বক্ষণিক তদারকিতে।

২০২০ সালের এইচএসসি :

বিশ্বব্যাপী চলমান করোনা মহামারির কারণে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষার ফলাফলের গড়ের উপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়নের পর ডিসেম্বরে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল অটোপাস হিসেবে প্রকাশিত হয়।

সেসময় ডা. দীপু মনি বলেছিলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি কখন স্বাভাবিক হবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। আমাদের কাছে অবশ্যই পরীক্ষার্থীদের জীবনের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলাপ আলোচনার ভিত্তিতে ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা সরাসরি গ্রহণ না করে একটু ভিন্ন পদ্ধতিতে মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। পরীক্ষা না নিয়ে পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়ন শিক্ষা বোর্ডগুলোর জন্য একেবারেই নতুন।

‘শিক্ষানীতি ২০১০’ সংশোধনের উদ্যোগ :

‘শিক্ষানীতি ২০১০’ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, প্রায় ১০ বছর আগে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই দীর্ঘ সময়ে অনেক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তাই এখন শিক্ষানীতিকে সংশোধন, পরিমার্জন ও সংযোজন করা প্রয়োজন। এজন্য সরকার শিক্ষানীতি সংশোধন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

প্রযুক্তির প্রসার :

মহামারীর মধ্যে প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়।শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘ডিজিটালাইজেশন এর মাধ্যমে সরকারি সেবা সমূহের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ হয়।’ তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের ১৩০টি সেবা একই প্ল্যাটফর্ম এর মাধ্যমে প্রদানের কার্যক্রম myGov এর উদ্বোধন করেন। ২০২০ সালের ৭ আগস্ট এ সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হবে আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) এর বিপ্লব। যেখানে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সাথে একান্ত সঙ্গী হয়ে যাবে প্রযুক্তি। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এই শিল্প বিপ্লবের ফলে গতানুগতিক অনেক চাকরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আবার চাকরি ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে। এই চ্যালেঞ্জকে সরকার সম্ভাবনায় পরিণত করতে চায়। এজন্য প্রযুক্তিনির্ভর দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে হবে। আর এ লক্ষ্যে ২০৫০ সালের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ৫০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ও এর অধীন অধিদপ্তর/দপ্তর/সংস্থার ডিজিটাল সার্ভিস রোডম্যাপ ২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে a2i প্রোগ্রাম এর সহায়তা করা ছাড়াও করোনাকালে“ডিজিটাল সার্ভিস ডিজাইন এন্ড প্ল্যানিং ল্যাব” বিষয়ক কর্মশালা চালু হয়।

শিক্ষকদের পদোন্নতি :

২০২০ সালে শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন ব্যাচের ৬০৯ জন সহযোগী অধ্যাপক কে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।

এমপিও ভুক্তকরণ :

২০২০ সালের ৪ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব জমি নেই, সে রকমের প্রতিষ্ঠানকে ভবিষ্যতে আর এমপিও প্রদান করা হবে না। ইতোমধ্যে ভাড়া বাড়িতে স্থাপিত যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও প্রদান করা হয়েছে তাদেরকে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে নিজস্ব জায়গায় প্রতিষ্ঠান স্থানান্তর করতে হবে। মন্ত্রী বলেন, কোন ট্রাস্ট বা সংস্থা দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ট্রাস্ট বা সংস্থার সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হবে। এই রকমের যে সকল প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এমপিওভুক্ত হয়েছে ট্রাস্ট যদি না চায় তাহলে সেসকল প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করা হবে। এবং ঐ সকল প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ চাইলে অন্য এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে পারবেন। অথবা আগের প্রতিষ্ঠানে থেকে যেতে পারবেন। তাছাড়া ভবিষ্যতে ট্রাস্টের কোনো প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করতে হলে ট্রাস্টের পূর্বানুমোদন নিতে হবে।

নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রণোদনা :

২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নন এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছেচল্লিশ কোটি তেষট্টি লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকার বিশেষ অনুদান প্রদান করেন।কিন্তু এরপর এই অনুদান নিয়মিত প্রদান করা খুবই জরুরি ছিল।কারণ এখনো বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের অবস্থা করুণ।

উল্লেখ্য, দেশের ক্লান্তিলগ্নে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় করোনা ভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ৬৪ জেলার ৮,৪৯২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) ননএমপিও ৮০,৭৪৭ জন শিক্ষকের প্রত্যেককে ৫,০০০/= টাকা হারে এবং ২৫,০৩৮ জন ননএমপিও কর্মচারীর প্রত্যেককে ২,৫০০/= টাকা হারে মোট ১,০৫,৭৮৫ জন শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে শিক্ষা বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর “বিশেষ অনুদান” এর খাত থেকে ৪৬,৬৩,৩০,০০০/= (ছেচল্লিশ কোটি তেষট্টি লক্ষ ত্রিশ হাজার) টাকা ৬৪ জন জেলা প্রশাসকের অনুকূলে বরাদ্দ প্রদান করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের তালিকাভুক্ত EIIN ধারী ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিশাল সংখ্যক শিক্ষক-কর্মচারীদের হালনাগাদ তথ্যাদি ইত:পূর্বে সংগ্রহ করে ডাটাবেজ তৈরি করা হয় এবং স্থানীয় প্রাশাসনের মাধ্যমে নামের তালিকা যাচাই-বাছাই করা হয়। সেই তালিকার ভিত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর “বিশেষ অনুদান” খাত থেকে প্রাপ্ত অর্থ জেলা প্রশাসকগণ সংশ্লিষ্ট ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুকূলে চেক/ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে ২০২০ সালের জুন মাসে বিতরণ করা হয়।

বলাবাহুল্য, করোনা মহামারীর চলমান দুর্যোকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিশাল সংখ্যক ননএমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অনুকূলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রাপ্ত বিশেষ অনুদান এবং ইত:পূর্বে গত অর্থবছরে নতুন ২৭৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তিসহ উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রায় ৩০,০০০ শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্তির আওতায় এনে তাঁদের বেতন-ভাতাসহ চাকুরি সুনিশ্চিত করা শেখ হাসিনা সরকার তথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।করোনাকালে রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার মধ্যে দিয়ে শিক্ষাবান্ধব সরকারে পরিণত হয়েছেন শেখ হাসিনা।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুম :

২০২০ সালের ২৩ জুন বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন, করোনাকালে এবং করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের সব বেসরকারি ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চুয়াল ক্লাসরুমের ব্যবস্থা করা হবে। তাঁর মতে, ‘নতুন দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের জন্য অনলাইন শিক্ষাই বড় সহায়ক।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদেরকে কয়েক বছর পর অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় যেতেই হতো। করোনা পরিস্থিতির কারণে আগেই শুরু করতে হলো। রূপকল্প ২০৪১ ছাড়াও চতুর্থ শিল্প বিপ্লব রয়েছে, তা যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তাহলে আমাদের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নতুন দক্ষতা অর্জনের প্রয়োজন রয়েছে। ক্লাসরুমে এসে আর নতুন দক্ষতা অর্জনের সুযোগ থাকবে না। সুতরাং, অনলাইন শিক্ষাই তাদের জন্য বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে।’

বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে অনলাইনে শিক্ষার উদাহরণ রয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পাঠ্যবইয়ের কনটেন্ট ই-কনটেন্টে রূপান্তরিত করতে হবে। আমাদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করতে হবে। ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী— যাদের অনলাইনে শিক্ষার সুযোগ (অ্যাকসেস) দিতে পারছি না। কীভাবে দেওয়া যাবে, সেক্ষেত্রে লোন দেওয়া যায় কিনা, ইন্টারনেটের খরচ কমানো যায় কিনা, সেটা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আইসিটি মন্ত্রণালয় এ নিয়ে কাজ করছে। কোভিড পরবর্তী সময়েও এটি বহাল রাখতে হবে।’এই প্ল্যাটফর্ম আরও কত ভালো করতে পারা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে উল্লেখ করে ডা. দীপু মনি বলেন, ‘শিক্ষক প্রশিক্ষণ বড় বিষয়। শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করতে হবে।’

অনলাইনে বিজ্ঞান শিক্ষা :

অনলাইনে বিজ্ঞান শিক্ষা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন- ‘অনলাইনে বিজ্ঞান শিক্ষা কোনোভাবেই করা যাবে না তা নয়। বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভার্চুয়াল ল্যাবরেটরি রয়েছে। এটি অসম্ভব তা নয়। যত রকমের চ্যালেঞ্জ থাকুক আমরা তা মোকাবিলা করবো। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারেও এটি রয়েছে। আমাদের কোথাও আটকে রাখার সুযোগ নেই। আমাদের আটকে রাখতে পারে আমাদের মাইন্ড সেট। তাই আমাদের মাইন্ড সেট পরিবর্তন করতে হবে।’

স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ :

করোনাকালে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন দীপু মনি। তিনি বলেছিলেন, অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এতে অংশগ্রহণ করার ক্ষেত্রে অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষেই ইন্টারনেটের ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই শুধু শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইন্টারনেট দিতে অথবা স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়ার আহ্বান জানান।সেসময় তিনি আরও বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই হয়তো ভর্তির ফি একসাথে দিতে পারবে না। সেক্ষেত্রে তারা যেন কিস্তিতে ভর্তি ফি দিতে পারে সে ব্যবস্থা রাখতে হবে।’

এখানে উল্লেখ্য, ইউজিসি’র মাননীয় চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস নেবার জন্য শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে ৩টি মোবাইল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে স্বল্পমূল্যে ইন্টারনেট প্যাকেজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।এছাড়া তাঁর চেষ্টায় জুম-এ ক্লাস নেওয়ার সুযোগ ঘটেছে শিক্ষকদের।

শিক্ষাবর্ষ :

এসএসসি ও এইচএসসি’র সিলেবাস কমানো হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি শিক্ষাবর্ষ নিয়েও।অথচ ২০২০ সালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেছেন, ‘করোনার কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়তে পারে। পাশাপাশি শ্রেণিঘণ্টার সঙ্গে সমন্বয় করে কমানো হতে পারে মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন শ্রেণির সিলেবাস। এমন পদক্ষেপের কারণে আগামী বছরে ঐচ্ছিক ছুটি কমিয়ে আনা হতে পারে। যেসব পরীক্ষা এখনও অনুষ্টিত হয়নি সেগুলোর সংখ্যা কমিয়ে আনা যায় কি না তাও ভাবছি। তবে সিলেবাস কামানোর ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী জ্ঞানার্জন ও দক্ষতা অর্জনের ব্যাপারে কোনো আপোস করা হবে না।’

আসলে সংকট পুষিয়ে নিতে গত শিক্ষাবর্ষ ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হবে কি-না, না ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবে তা ভাবনা-চিন্তা চলছিল। শিক্ষাবর্ষ বাড়ানো হলে ২০২১ সালের ঐচ্ছিক ছুটি কমানোর প্রয়োজন হবে। একটি শিক্ষাবর্ষে ১৪০-১৪২ দিন পড়ানো হয়। বাকিটা ছুটি থাকে। তাই ২০২০ সালের শিক্ষাবর্ষ বাড়াতে হলে ২০২১ সালের ছুটি কমিয়ে হলেও তা করা হবে বলা হয়েছিল। তবে এ ক্ষেত্রে বয়স ও শ্রেণি অনুযায়ী শিক্ষার্থীর জ্ঞানার্জন ও দক্ষতা অর্জনের দিকটিতে আপোস করা হবে না। কারিগরি শিক্ষায় যতটুকু শিখনফল ও দক্ষতা কাম্য সেটুকু যদি শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে না পারে তাহলে তাদেরকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে না বলেও মন্তব্য করেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী।

ডিজিটাল শিক্ষার যুগে করণীয় :

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ডিজিটাল শিক্ষার যুগে বাচ্চাদের শেখার উপকরণগুলো সহজেই বোধগম্য এবং উপভোগ্য করে তৈরি করা দরকার।তাঁর মতে, পড়াশোনা সবসময় পরীক্ষাকেন্দ্রিক হওয়া উচিত নয়, বরং নীতিবান, দায়িত্বশীল এবং সংবেদনশীল মানুষ গড়তে যেসব শিক্ষা দরকার তার প্রয়োজনীয়তা অনেক। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ স্টপ মোশন অ্যানিমেশনটি শিশুদের জন্য উপযোগী মাধ্যম, ভাষা এবং স্টাইল ব্যবহার করে সংবিধানের চারটি স্তম্ভকে তুলে ধরেছে। যেসব মূল্যবোধ ও রাজনৈতিক আদর্শ বাংলাদেশের সংবিধানের ভিত্তি হিসাবে কাজ করে, এ অ্যানিমেশন তরুণ প্রজন্মকে সেসব সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলবে।’

উল্লেখ্য, শিশুদের উপযোগী রঙিন রূপক এবং প্রতীক দিয়ে অ্যানিমেশনটি তুলে ধরেছে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির চারটি মূলনীতি- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্ম-নিরপেক্ষতা, এবং জাতীয়তাবাদ। যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান একটি ছোট মেয়েকে পাখির বাসা তৈরি শেখান, সাথে তিনি বলে যান সেসব পেছনের গল্প যা জাতির জন্য একটি কাঠামো পরিকল্পনায় তার নীতি-আদর্শকে প্রভাবিত করেছিল।

বাজেট বক্তৃতায় শিক্ষা :

২৩ জুন(২০২০) জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘অনলাইন ও টেলিভিশনের মাধ্যমে শতকরা প্রায় ৯২ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে আমরা পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি। অনলাইনে পাঠদানে আজ নতুন একটি প্লাটফর্ম চালু করা হবে। সব বিশ্ববিদ্যালয় এটি ব্যবহার করতে পারবে।’ এসময় শিক্ষামন্ত্রী অনলাইন শিক্ষা সহজলভ্য করতে মোবাইল ও ইন্টারনেটের ওপর প্রস্তাবিত শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে ভিসি নিয়োগ :

২০২০ সালে দেশের তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং এবং ২৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসির পদ ছাড়াও দেশের ১৯টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এবং ৮৩টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসির পদ শূন্য ছিল।এজন্য ২০২০ সালের ৯ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন- বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শূন্য পদে ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে ভিসিপুল গঠন করা হবে। এই লক্ষ্যে ৩১ আগস্ট ২০২০ তারিখের মধ্যে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ সিনিয়র প্রফেসরদের নামের তালিকা ও জীবন বৃত্তান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে আহবান জানানো হয়।তিনি ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখের মধ্যে যে সকল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে সে সব শূন্য পদে নিয়োগের জন্য নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণেরও আহ্বান জানান। ওই সময়ের মধ্যে তালিকা প্রেরণ করতে না করলে মন্ত্রণালয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে বলে তিনি মিটিংয়ে জানান।

অবশ্য ২০২০ থেকে ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে ইউজিসি কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অনিয়ম তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠিয়েছে। সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ অদ্যাবধি দেখা যায়নি।অনিয়মের কারণে পদে না রাখার সুপারিশও মানা হয়নি। তবে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ প্রচেষ্টায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি ভালো দিকে এগিয়ে চলেছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সততা এবং ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহর দক্ষতা এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা পালন করছে।

উপসংহার :

সব মিলে করোনাকালে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার শিক্ষাখাত। এজন্য সাধারণ জনগণের কারো কারো বক্তব্য হলো-শপিং মল খোলা, গণপরিবহন চলাচল করেছে, ট্রেন-লঞ্চ চলছে, তাহলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে ও পরীক্ষা নিতে সমস্যা কোথায়। কারো মতে, সকল কিছু যেভাবে সীমিত পরিসরে খোলা হচ্ছে তেমনি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হোক।আবার কারো মতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা মাঝপথে বন্ধ করে দেওয়ায় তাদের জীবন ২ বছর পিছিয়ে পড়েছে। ফলে হতাশা বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।এসব প্রশ্নের জবাব আছে শিক্ষামন্ত্রীর ২০২০ সাল থেকে আজ অবধি দেওয়া উপরি-উক্ত বিভিন্ন বক্তব্যের মধ্যে।

বিশেষত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও শিক্ষকরা বসে বসে বেতন নিচ্ছেন না। বরং অনলাইন ক্লাস নিয়ে, খাতা দেখে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এজন্য এটা সত্য নয়- ‘মানুষের বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ চাকরি নিয়ে বসে বসে বেতন পাবে।অন্যজন চাকরির অভাবে পরিবার তথা সমাজের বোঝা হবে।সরকারি কর্মচারীরা বেতন পাচ্ছে তাদের দিন চলে যাচ্ছে। কিন্তু বেসরকারি কলেজে চাকুরিরত শিক্ষক-কর্মচারীরা বেতন না পেয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনযাপন করছে। এর সুরাহা কি করা হবে?’

মূলত শিক্ষায় ক্ষতি পুষিয়ে নেবার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নিরলস প্রচেষ্টা যদি শিক্ষকদের সহযোগিতায় ঋদ্ধ হয় তাহলেই উত্তরণ সম্ভব। অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের হতাশার হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। পাস করার সঙ্গে সঙ্গে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য তাদের পথ দেখিয়ে দিতে পারলে স্বস্তি পাবে পরিবারগুলো। সকল প্রতিকূল অবস্থা জয় করে শিক্ষার পরিবেশ আশা জাগানিয়া সময়কে ফিরিয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি।

লেখক : ইউজিসি পোস্ট ডক ফেলো এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

এইচআর/এমকেএইচ

মূলত শিক্ষায় ক্ষতি পুষিয়ে নেবার জন্য শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নিরলস প্রচেষ্টা যদি শিক্ষকদের সহযোগিতায় ঋদ্ধ হয় তাহলেই উত্তরণ সম্ভব। অন্যদিকে ছাত্র-ছাত্রীদের হতাশার হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয়গুলোকেও এগিয়ে আসতে হবে। পাস করার সঙ্গে সঙ্গে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য তাদের পথ দেখিয়ে দিতে পারলে স্বস্তি পাবে পরিবারগুলো। সকল প্রতিকূল অবস্থা জয় করে শিক্ষার পরিবেশ আশা জাগানিয়া সময়কে ফিরিয়ে আনবে বলে আমরা মনে করি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।