বাংলাদেশ নামেই পাকিস্তানের জলাতঙ্ক


প্রকাশিত: ০৪:৪৩ এএম, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৫

বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে পাকিস্তান।  যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় হওয়া মাত্রই সব রাজনৈতিক ভেদাভেদ ভুলে পাকিস্তানের সংসদে জোট বেঁধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে আসছে দেশটির সাংসদরা। এখানেই শেষ নয়, একাত্তরে বাংলাদেশে গণহত্যার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে পাকিস্তান । এমন ঔদ্ধত্য বিবেকবানদের অবাক করলেও, পাকিস্তানের কাছ থেকে এর চেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না। বাংলাদেশ পশ্নে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তানের যে অবস্থান ছিল তা থেকে একচুলও সরে আসেনি দেশটি। বাংলাদেশ নামটাই পাকিস্তানকে বিকারগ্রস্ত করে তোলে। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আচরণ করে জলাতঙ্ক রোগীর মত।

স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম নেয়া থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত  ইতিহাসের প্রমাণিত সত্যগুলোকে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টার কোনো বিরাম নাই পাকিস্তানের। স্বাধীন বাংলাদেশকে  পদে পদে বিপদে ফেলতে হেন কোনো কৌশল নাই যা তারা গ্রহণ করেনি। পাকিস্তানের বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ডের দিকে সংক্ষেপে চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক।

বাংলাদেশ যাতে জাতিসংঘের সদস্যপদ না পায় তার জন্য পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক অপতৎপরতা:
সদ্য স্বাধীন দেশের উন্নয়ন ও বৈদেশিক সহায়তা লাভের জন্য জাতিসংঘের সদস্যপদ পাওয়াটা হয়ে ওঠে ভীষণ জরুরি। বাংলাদেশ যাতে জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ না করে সেজন্য ওঠে পড়ে লাগে পাকিস্তান। আর এটা করতে গিয়ে বিশ্বস্ত বন্ধু চীনকে কাজে লাগায় পাকিস্তান। যুদ্ধবন্দীদের রক্ষা করার জন্য  ভুট্টো সরকারের অনুরোধে  ১৯৭২ সালের ২৫ আগস্ট জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদের বিপক্ষে নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো প্রয়োগ করে চীন। এটাই ছিল নিরাপত্তা পরিষদে চীনের প্রথম ভেটো।

পাকিস্তানে বাঙালি জিম্মি ও নির্যাতন:
বাংলাদেশে যুদ্ধবন্দীদের বিচারকে বাধাগ্রস্ত করতে পাকিস্তান সরকার সে দেশে আটকে পড়া ৪ লাখ বাঙালিকে জিম্মি করে রাখে। একাত্তরে ১৬ হাজার সরকারি বাঙালি কর্মচারী/ কর্মকর্তাকে চাকুরীচ্যুত  করেছিল পাকিস্তান সরকার। তাদের পাকিস্তান ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। যে সব বাঙালি জীবন রক্ষার জন্য ঝুঁকি নিয়ে আফগানিস্তান হয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা করছিলেন তাদেরকে ধরিয়ে দেয়ার জন্য এক হাজার রুপি পুরস্কার ঘোষণা করে ভুট্টো সরকার। আর এই রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পেয়ে অনেক বাঙালি বিদ্বেষী পাকিস্তানি এই সুযোগের চরম অপব্যবহার করে। অনেক বাঙালিই অন্যায় অভিযোগে গ্রেফতার হন, পড়েন পুলিশি নির্যাতনের মুখে। ১৯৭৩ সালের ২৭ মে নিউইয়র্ক টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে ভুট্টো বলেন- ‘বাংলাদেশ যদি অভিযুক্ত পাকিস্তানিদের বিচার করে, তবে পাকিস্তানে একই রকম ট্রাইবুন্যালে বাঙালিদের বিচার করা হবে। কেননা যুদ্ধের সময় বাঙালিরা তথ্য পাচার করেছিল।’

ক্ষমা চাওয়া থেকে দুঃখপ্রকাশ এখন অস্বীকার :
১৯৭৪ সালের ৪ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত  দিল্লি­তে বৈঠক করেন বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী। ওই বৈঠক নিয়ে ১১ এপ্রিল  নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদ শিরোনাম ছিল- ‘বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তানের ক্ষমা প্রার্থনা।’ ওই রিপোর্টে লেখা হয়- ‘এই ক্ষমা প্রার্থনা সরাসরি ছিল না। তবে পাকিস্তান এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে যা ক্ষমা প্রার্থনা বলেই বিবেচনা করা হচ্ছে।’ ত্রিপক্ষীয় ওই চুক্তিপত্রের ১৩ ধারায়  বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কামাল হোসেনকে উদ্ধৃত করে বলা হয়- ‘যুদ্ধাপরাধী হিসাবে অভিযুক্ত ১৯৫ জন পাকিস্তানি সেনা বহুধা অপরাধ করেছে  যা আন্তর্জাতিক  আইনানুযায়ী যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা হিসাবে চিহ্নিত। এ ধরনের অপরাধীদের আইনের মুখোমুখি করার ব্যাপারে সার্বজনীন ঐকমত্য রয়েছে।’ যার অর্থ ত্রিপক্ষীয় ওই চুক্তিতে গণহত্যা শব্দটি আছে। একাত্তরে  বাংলাদেশে গণহত্যার বিষয়টি লিখিতভাবে স্বীকার করে নিয়েছে পাকিস্তান। অথচ এখন পুরোপুরি অস্বীকার করছে সেদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল।

বাংলাদেশ সদস্যপদ পাওয়ায় কমনওয়েলথ থেকে পাকিস্তানের পদত্যাগ নাটক: 
বাংলাদেশ কমনওয়েলথের সদস্যপদ লাভ করে ১৯৭২ সালে। এর প্রতিবাদে এই সংস্থা থেকে পদত্যাগ করে পাকিস্তান। এটা ছিল পাকিস্তানের একটা নাটক। এর পর আবার কমনওয়েলথ সদস্যপদ ফিরে পাওয়ার জন্য চেষ্টা তদবির শুরু করে তারা। দুবছর পর সদস্যপদ ফিরেও পায় দেশটি।

পাকিস্তানের চরিত্র অনুধাবনের জন্য ভিন্ন একটি প্রসঙ্গ টানছি। পাকিস্তান ক্রিকেটে মি. ক্লিনম্যান হিসাবে মোটামুটি একটা ভাল ভাবমূর্তি আছে তাদের সাবেক অধিনায়ক রশিদ লতিফের। ২০০৩ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে মুলতান টেস্টে মাটি থেকে বল কুড়িয়ে নিয়ে অন্যায়ভাবে অলক কাপালিকে আউট করেন লতিফ। এর জন্য তাকে শাস্তিও পেতে হয়। পরবর্তীতে মাটি থেকে বল কুড়িয়ে কেন কাপালিকে আউট করেছিলেন এ নিয়ে বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে লতিফ বলেছিলেন- ‘ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হেরে গেলে সবাই বলত আমরা ম্যাচ ফিক্সিং করেছি। পাতানো ম্যাচের অভিযোগ যাতে না ওঠে সেজন্য টেস্টটা আমরা জিততে চেয়েছিলাম। তাই মাটিতে পড়া বল তুলে নিয়ে আউটের আবেদন করেছিলাম।’

গোটা দুনিয়ার কাছে পাকিস্তান ও পাকিস্তানিরা পরিত্যক্ত। বিশ্বাসযোগ্যতা বলতে তাদের কিছুই নাই। ক্রিকেট দুনিয়ায় পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের নিয়ে চালু রসিকতাটা হচ্ছে-  ‘কি- হে কত টাকা পেলে?’ ফিক্সিং, আর পাকিস্তান সমার্থক। বর্তমান সভ্যতার সঙ্গে তাল রেখে এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে প্রতিটা মানদণ্ডেই বাংলাদেশের চেয়ে ঢের পিছিয়ে পাকিস্তান।  দেশটি নিয়ে চালু কৌতুকটা হচ্ছে- ‘আজকের ব্রেকিং নিউজ: আজ পাকিস্তানে কোনো বোমা বিস্ফোরিত হয়নি।’

সহজ ভাষায় বলতে গেলে পাকিস্তান মানেই একটা পরিত্যক্ত দেশের বিজ্ঞাপন। সীমাহীন ব্যার্থতায় তাদের ডুবুডুবু অবস্থা। তারপরও তাদের অনুশোচনা তো দূরের ব্যাপার সামান্য বিকারও নাই। সারাক্ষণই সুযোগ খোঁজে বাংলাদেশ বিরোধিতার। আর এই বাংলাদেশবিরোধী অবস্থানে নিজেদের চরম রাজনৈতিক বিভেদও ভুলে যায় তারা। পাকিস্তান সরকারের সবচেয়ে কট্টর সমালোচক বহু নারী কেলেঙ্কারির নায়ক ইমরান খান। অথচ বাংলাদেশ বিরোধিতার জায়গাটিতে নওয়াজ শরিফ সরকার, ইমরানের তেহরিক- ই- ইনসাফ কিংবা চরম মৌলবাদী দল জামায়াত ও তেহরিক-ই- তালিবান সবার বক্তব্যই এক। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক নয় মাথা গলানোটাকেই ব্রত(!) বলে জ্ঞান করে পাকিস্তান।  এ যেন বাংলাদেশের গ্রাম বাংলার সেই দু কান কাটার গল্পটির মত-  ‘এক কান কাটলে মানুষ যায় গ্রামের পেছন দিয়ে। আর দু’কান কাটা গেলে যায় গ্রামের সামনে দিয়ে। সব লাজ-লজ্জার মাথা খেয়ে সদর্পে যুগ যুগ ধরে মিথ্যাচার ও পাপাচারে লিপ্ত পাকিস্তান।

nazmul-topon

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।