খোলস ভাঙছেন মোদি!
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি রোববার কুয়ালালামপুরে অ্যাসিয়ান সম্মেলনে ধর্ম এবং সন্ত্রাসের সম্পর্ককে ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, তার নিজ দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) কর্মী-সমর্থকরা দেশটিতে ধর্মীয় সহিংসতার নামে সংখ্যালঘু মুসলিমদেরকে পিটিয়ে হত্যা করছে। দলটির কর্মীরা উগ্র ধর্মীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী এতে কোনো সন্দেহ নেই। ধর্ম এবং সন্ত্রাস নিয়ে মোদির ওই বক্তব্য কি তার ধর্মীয় সহিংসতার খোলস থেকে বের হয়ে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছে?
ভারতে গত আগস্ট থেকে গরু হত্যা, পাচার এবং চুরির গুজব ছড়িয়ে অন্তত চার মুসলিমকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়া আগস্টে হিন্দু ধর্মের সমালোচনাকারী এক পণ্ডিতকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করেছে। এসব ঘটনায় শত শত লেখক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, শিক্ষাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা দেশটির জাতীয় পুরস্কার ফেরত দিয়েছেন।
কুয়ালালামপুরের সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নেই। তারা ধর্মের নামে সব ধর্মের মানুষকে হত্যা করছে। মোদি ধর্ম থেকে সন্ত্রাসকে বিচ্ছিন্ন করার আহ্বান জানিয়েছেন। ভারতের কট্টরপন্থী হিন্দুরা ধর্মের নামে যে দিনে দিনে আরো সহিংস হয়ে উঠেছে, গুজব ছড়িয়ে মাঝে মাধ্যেই হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে তা কি দমন করতে পারবেন মোদি? নিজ দেশে ধর্মের নামে চলমান এই সংঘাত কি থামাতে পারবেন? যে কারো মনেই এরকম প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক। কেননা ভারতের ইতিহাস এবং সাম্প্রতিক সহিংসতার দিকে তাকালে বিশ্ব নেতাদের প্রতি মোদির আহ্বানের সঙ্গে কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না।
২০০২ সালে মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন প্রদেশটিতে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গা চরম আকার ধারণ করে। এ সময় এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। ওই দাঙ্গায় নিয়ন্ত্রণে মোদি যথাযথ ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র মোদিকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল।
গত কয়েক মাসে ভারতজুড়ে ধর্মীয় অসহিংসতা ব্যাপক মাত্রায় ছড়িয়ে পড়ে। এসব ঘটনায় সরকারের অনেক এমপি ও মন্ত্রীরা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকলেও মোদি নীরবে এসব বিষয়কে এড়িয়ে গেছেন। এর প্রতিবাদে দেশটির লেখক, কবি-সাহিত্যিক, বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এবং চলচ্চিত্র নির্মাতারা জাতীয় পুরস্কার ফিরিয়ে দিয়েছেন।
কিছুদিন আগে বিজ্ঞানী পি এম ভার্গব রাষ্ট্রীয় পুরস্কার পদ্মভূষণ ফিরিয়ে দিয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তার আশংকা, ভারত সরকার গণতন্ত্রের পথ ছেড়ে হিন্দু স্বৈরতন্ত্রের পথে হাঁটছে। তার মতে, ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকার ডানপন্থী হিন্দু সংগঠন আরএসএস দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। আসিয়ান সম্মেলনে মোদি রাজনৈতিক মতাদর্শের ঊর্ধ্বে উঠে বিশ্ব নেতাদের প্রতি সন্ত্রাস মোকাবেলায় কৌশল নির্ধারণের কথা বলেছেন। ফ্রান্সের প্যারিসে ও লেবাননের বৈরুত ও মিসরের সিনাইয়ে রুশ বিমানে ধর্মীয় জঙ্গিদের তাণ্ডবে প্রায় চার শতাধিক লোকের প্রাণহানির ঘটনার পর তিনি এ কৌশল নির্ধারণের আহ্বান জানালেন। কিন্তু দিল্লিজুড়ে যে সহিংসতা চলমান আছে তা মোকাবেলায় মোদি কি কৌশল নেবেন? মোদির এ বক্তব্য কি লোক দেখানো। নাকি খোলস ভাঙছেন মোদি?
এসআইএস/পিআর