বর্বরোচিত, নিন্দনীয়
আবারো হামলার ঘটনা ঘটলো ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। এবার সন্ত্রাসী হামলায় কেঁপে উঠলো গোটা প্যারিস। স্থানীয় সময় শুক্রবার প্যারিসের ছয়টি স্থানে ভয়াবহ এ হামলা হয়েছে। হামলার পর ফ্রান্সে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাঁদ। শুক্রবার কনসার্ট দেখতে প্যারিসের বাটাক্লঁ কনসার্ট হলে কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। এ সময় পাঁচ সন্দেহভাজন হামলাকারী হলে ঢুকে একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। কনসার্ট হলে হামলায় অন্তত ১১২ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের অভিযানে আট হামলাকারী নিহত হয়েছে। এছাড়া ফ্রান্সের অন্যান্য স্থানে হমলায় ৪০ জন নিহত হয়েছে।
২০০৪ সালের পর ইউরোপে এটিই বড় ধরনের হামলার ঘটনা। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের ব্যাঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি হেবদোর অফিসে দুই বন্দুকধারী হামলা চালায়। এ সময় অন্তত ১২ জন নিহত ও ১১ জন আহত হয়। এই হামলার পর ফরাসি প্রধানমন্ত্রী ‘দেশ যুদ্ধের মধ্যে রয়েছে’- বলে মন্তব্য করেন। একই সঙ্গে তিনি এটা স্পষ্ট করেছিলেন যে এই যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে নয়। তখন জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলেই সমর্থন জানিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে।
ইউরোপের মধ্যে ফ্রান্স সবচেয়ে বেশি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। ফ্রান্স সিরিয়ায় আইএস বিরোধী কোয়ালিশনে অংশ নিচ্ছে। অন্যদিকে ফ্রান্সের শত শত নাগরিক সিরিয়ায় গেছে আইএসের পক্ষে যুদ্ধ করতে। তাদের কেউ কেউ ফ্রান্সে ফিরেও এসেছে। হামলার পেছনে এসব ঘটনার পূর্বাপর বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়া ওলাঁদ এই হামলার জন্য আইএসকে দায়ী করেছেন। অপরদিকে আইএস-ও দায় স্বীকার করেছে। হামলার ধরন, ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণসহ সবকিছু বিবেচনায় এটা স্পষ্ট যে এই হামলা পরিকল্পিত, সুসংগঠিত। বিশেষ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতেই যে এই হামলা চালানো হয়েছে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
ফ্রান্স শান্তিপ্রিয় একটি দেশ। বহুজাতি ধর্ম, বর্ণের, মানুষের বাস এখানে। এক উদার গণতান্ত্রিক পরিবেশের ফ্রান্সকে বলা হয় শিল্প-সাহিত্যের তীর্থভূমি। এই ভাতৃত্ববোধ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশকে যারা ধ্বংস করতে চায় নিশ্চিতভাবেই তারা মানবতার শত্রু। এদের বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বকেই এ কাতারে শামিল হতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতেও দেশটি তাদের সাম্য, মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্ববোধকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে স্থান দিবে সেটাই প্রত্যাশিত।
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমরা এই বর্বরোচিত হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে আশা করছি ফ্রান্স এই হামলাজনিত ক্ষয়-ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবে। এই হামলায় বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় উঠেছে, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এই হামলার ঘটনায় শোক ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। এবং সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে ফ্রান্সের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন।
এইচআর/এমএস