হতে পারে সোনায় বাঁধানো দিন
সোনায় বাঁধানো দিন। শব্দটা একটু বেশি ওজনদার মনে হতে পারে। কিন্তু হলেই বা কী করার আছে! ১১-১১ সংখ্যা দু’টো-ই কেন যেন একটু অন্যরকম তাৎপর্য বহন করছে। আর এরকম একটা তারিখে যদি বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন এক সাফল্যগাথা লেখা হয়; তাকে সোনায় বাঁধানো দিন বলবেন না কেন?
বলা যেতে পারে। বললে তাতে দোষের কিছু নেই। তবে তার আগে সেই সাফল্যটা ধরা দিতে হবে। কিন্তু সাফল্যের সোনালী আভা যে স্পষ্ট বাংলাদেশ ক্রিকেট দিগন্তে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম দু’টো জিতেছে বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ও নিশ্চিত করেছে। টানা পাঁচটা সিরিজ জয়। আর শেষ ম্যাচ জিতলে আবার বলতে হবে ‘বাংলাওয়াশ’! ক্রিকেট উৎসবের এই শব্দবাজি শুরু হবে। তখন দিনটাকে সোনায় বাঁধানো দিন না বলে উপায় থাকবে কী? টানা পাঁচটা সিরিজ জয়! তাও আবার তিনটা যদি হয় ‘হোয়াইটওয়াশ’ তাহলে এক মৌসুমে তৃতীয় হোয়াইটওয়াশের দিনকে একটু অন্যভাবে মনে রাখবেন না? আর মনে করতে গিয়ে সেই দিনটাকে সোনায় বাঁধানো বা হীরায় মোড়ানো বললে বাড়াবাড়ির কিছু দেখছি না। কারণ, এরকম ঘটনা ক্রিকেট গ্রহের অন্য কোথায় ঘটলে এ নিয়ে মাতামাতিটা আরো বেশি হতো তা জোর দিয়ে বলা যায়।
তারচেয়ে জোর দিয়ে বলতে হচ্ছে এই জিম্বাবুয়েকে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করতে না পারলে সেটা হবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক রঙ হারা দিন। হ্যাঁ, বাংলাদেশ দুই ‘এস’-কে দলের বাইরে রেখে মাঠে নামবে তার পরও কথাটা বলতে হচ্ছে। কারণ, দলটা জিম্বাবুয়ে। যারা এখন নিজের মাঠে আফগানিস্তানের বিপক্ষেও সিরিজ হারে! সেই জিম্বাবুয়েকে হারাতে বাংলাদেশের দুই বড় তারকা সাকিব আল হাসান আর সৌম্য সরকারের প্রয়োজন পড়ছে না। এটাই বাংলাদেশ ক্রিকেটের এগিয়ে চলার নতুন এক সূচক। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে এটাও এক প্রাপ্তি। গত কয়েক বছরে সাকিব শুধু বাংলাদেশ দলে নয়, ক্রিকেট বিশ্বে এমন এক নাম যেটাকে বোল্ড করেই লিখতেই হবে। আর সৌম্য সরকার গত বিশ্বকাপ থেকে বাংলাদেশ দলের নতুন এক তারকা। যিনি বহুবার শিরোনাম। এরকম দুই ‘এস’-কে মাঠের বাইরে রেখে ম্যাচ জেতা অনেক বড় ব্যাপার। সেটা দ্বিতীয় ওয়ানডেতে করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এরপর তৃতীয়টা জিতে যদি হয় ‘বাংলাওয়াশ’ তাহলে দিনটাকে আলাদাভাবে মনে রাখবেন না কেন?
টানা সিরিজ জয়ের পঞ্চপর্ব শেষ হয়েছে আগেই। এবার পালা আরো একবার হোয়াইটওয়াশের। হয়তো হয়েও যাবে। তখন সমালোচকরা আবার উল্টো সুর তুলতে পারেন। আরে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তো জিতবেই! হ্যাঁ, জিতবেই। জিম্বাবুয়ে দুর্বল দল এটাও ঠিক। কিন্তু তাদের ওয়ানডে স্ট্যাটাস, টেস্ট স্ট্যাটাসতো আছে। তাহলে সেই জয়কে ছোট করে দেখার কী আছে!
ইতিহাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় টেস্ট প্লেয়িং দলের বিপক্ষে জয় হিসেবেই লেখা থাকবে। আর তাতে যখন টানা পাঁচ সিরিজ জয় হয় মাশরাফির নেতৃত্বে তাহলে তাই। এই জয়ের নিচে কোনো ফুটনোট দেয়ার প্রয়োজন পড়বে না। তবে একটা কথা একটু বোল্ড করে লিখতে হবে; অস্ট্রেলিয়া যেখানে নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে এলো না, সেখানে জিম্বাবুয়ে এখনও পর্যন্ত নিরাপদ বোধ করেই ক্রিকেট খেললো। বাংলাদেশের মানুষ গ্যালারিতে বসে সেই সিরিজ উপভোগ করলো নির্বিঘ্নে। এটাও বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড় এক জয়। তবে সেটা আরো বড় মনে হতো যদি সিরিজের দু`একটা ম্যাচ ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, খুলনা কিংবা সিলেটে আয়োজন করা হতো। সেটা হোক বা নাই হোক জিম্বাবুয়ের এই সফরটাকে বাংলাদেশের উচিৎ কৃতজ্ঞচিত্তে মনে রাখা।
অর্থকষ্ট আর রাজনৈতিক বিভাজনে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট এখন ধুঁকছে। এ কারণে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয় বা হোয়াইটওয়াশ কোনোটাই হয়তো বাড়তি তাৎপর্য বহন করছে না। তারপরও তাৎপর্য থাকছে এ কারণে, এই পঞ্চম সিরিজ জয়ের আগে বাংলাদেশ কিন্তু পাকিস্তান, ভারত, সাউথ আফ্রিকার মত ভারী ভারী নামের দলের বিপক্ষেও সিরিজ জিতেছে। তাহলে পঞ্চমটাকে গুরুত্বহীন মনে করব কী কারণে! বরং বাড়তি গুরুত্ব দিতে পারি; সৌম্য, সাকিবের মত তারকা-মহাতারকাকে বাইরে রেখেও বাংলাদেশ সিরিজ জিতছে। আর সেই সিরিজ জয় যদি হয় সাদা ধোলাইয়ের মধ্যে দিয়ে, তাহলে সেটা আরো একটু বেশি উজ্জ্বল মনে হতে বাধ্য। ১১-১১ তারিখটাও তখন অন্যরকম মনে হবে। সোনায় বাঁধানো দিন ভাবতে যদি আপনার আপত্তিও থাকে।
তবে মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ টানা পাঁচ ওয়ানডে সিরিজ জিতল। বিশ্বকাপে ভাল ক্রিকেট খেললো। ইংল্যান্ডকে ছিটকে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনাল খেললো। ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশের সোনায় বাঁধানো এক বছর ছাড়া অন্য কি বলবেন একে?
লেখক : স্পোর্টস এডিটর, দীপ্ত টিভি
এইচআর/আরআইপি