জেগে থাক প্রতিবাদী মন


প্রকাশিত: ০৪:৩৫ এএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৫

শিশু রাজন ও রাকিব হত্যাকাণ্ডের রায় নিশ্চিতভাবেই বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষকে আশাবাদী করে তুলবে। অন্যায় করলে যে পার পাওয়া যায় না, এবং দরিদ্র অসহায় মানুষরাও যে আইনের সহযোগিতা পায় সেটিও পরিষ্কার হল এর মধ্য দিয়ে। আইনের শাসনের মূল কথাই হচ্ছে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা। অন্যায়কারী শাস্তি পেলে, ভুক্তভোগীরা বিচার পেলে একটি স্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি হয়। যেটি সমাজে একটি শান্তির বাতাবরণ তৈরি করে। রাজন ও রাকিব হত্যাকাণ্ডের রায়ে এখন সেই ধরনের স্বস্তিদায়ক আবহ তৈরি হয়েছে। মানুষজন আশা করছে, উচ্চ আদালতেও দ্রুততম সময়ে এই মামলা দুটি নিষ্পত্তির পর অপরাধীর সাজা নিশ্চিত হবে।

সিলেটে শিশু রাজনকে চুরির মিথ্যা অপবাদে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও চিত্র ধারণ করে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ইন্টারনেটে। বিবেকবান মানুষ এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ, ব্যথিত ও মর্মাহত হন। অন্যদিকে খুলনায় শিশু রাকিবকে পায়ু পথে বাতাস ঢুকিয়ে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করা হয়। অভিযোগ ছিল অন্য প্রতিষ্ঠানে কাজ নেওয়া। দুটি ঘটনায়ই  দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের ব্যাপারে জোর দাবি উঠতে থাকে। বিচারের দীর্ঘসূত্রতার যে ইতিহাস রয়েছে আমাদের সেই পাহাড়সম বাধা উজিয়ে শিশু হত্যার বিচার হবে কিনা, হলেও সেটা কত সময়ের মধ্যে হবে- এটা নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ছিল। কিন্তু সকল জল্পনা-কল্পনা দূর করে অবশেষে গতকাল রায় এসেছে। উচিত সাজা পেয়েছে অপরাধীরা।

সিলেটে সামিউল আলম রাজন হত্যায় চারজনের ফাঁসি, একজনের যাবজ্জীবন ও পাঁচজনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে খুলনায় রাকিব হত্যায় দুইজনকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়ে বাদী পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।  উচ্চ আদালতে আপিল নিষ্পত্তির মাধ্যমে দ্রুত রায় কার্যকরের দাবিও জানিয়েছেন তারা।    

এই রায়ের উল্লেখযোগ্য দিক হল- মাত্র ১০ ও ১৪ কার্য দিবসে মামলা দু’টির কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। যা বাংলাদেশের বিচারের ইতিহাসে নজিরবিহীন।  রাজন হত্যার আসামী কামরুল সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়ার পরও তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে।  হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকায় তাকে ফাঁসির দণ্ড দেওয়া হয়েছে। মানুষের সোচ্চার প্রতিবাদ ও প্রতিরোধও এই হত্যার বিচারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সৌদি আরবে পালিয়ে গিয়েও বাঁচতে পারেনি ঘাতক কামরুল। তাকে ধরতে  সেখানকার বাঙালিরাই সহযোগিতা করেছে। এছাড়া গণমাধ্যমের ভূমিকাও ছিল প্রশংসনীয়। মূলত সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ন্যায় বিচারের একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। এবং তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে।

অন্যায়ের বিরুদ্ধে যদি উচ্চ কণ্ঠ থাকে কোনো সমাজ বা রাষ্ট্র সেখানে অন্যায়কারীরা খুব একটা সুবিধে করতে পারে না। শিশু রাজন ও রাকিবকে যে নির্মমতায় হত্যা করা হয়েছে তা পাশবিকতাকেও হার মানায়। এ রকম অন্যায়ের প্রতিবাদ হওয়াটাই ছিল  সঙ্গত। ভবিষ্যতেও যদি এই মনোভাব ধরে রাখা যায় তাহলে সমাজে অপরাধপ্রবণতা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। কেবল আইনের খড়গ দিয়ে অপরাধ দমন সম্ভব নয়, জনসচেনতার বিষয়টিও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। রাজন ও রাকিব হত্যার বিচারের মধ্য দিয়ে যা আবারও প্রমাণিত হল।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।