আইসিসি থেকে স্বস্তি সংহতি কি নির্বাসিত?


প্রকাশিত: ০৫:৩২ এএম, ২৭ অক্টোবর ২০১৫

ললিত মোদি ভারতীয় ক্রিকেটে অমরত্ব পেয়ে যেতে পারেন আইপিএল নামক ‘লোলিত কলা’-র উদ্ভাবক হিসেবে। আর আইপিএলে স্বার্থের দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আর একজন ভারতীয় ক্রিকেটে প্রায় নির্বাসিত হলেও অমরত্বের দাবিদার। তিনি এন শ্রীনিবাসন। সাবেক পরিচয় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। আর বর্তমান পরিচয় আইসিসির চেয়ারম্যান। শ্রীনি অমরত্ব দাবি করতে পারেন একটা কারণে। নিজের কার্যক্রম দিয়ে তিনি ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল আইসিসি-র নতুন একটা অর্থ দাঁড় করাতে পেরেছেন ক্রিকেট বিশ্বে। মানুষ এখন আইসিসিকে বলতে শুরু করেছে- ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল! এবং বলার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণও আছে। ক্রিকেট বিশ্বের শাসক এবং শোষক দু’টোই এখন ভারত। আর সেটা সম্ভব হয়েছে শ্রীনি-র অক্লান্ত পরিশ্রমে। মস্তিষ্কের দুর্দান্ত (অপ) ব্যবহারে!

মস্তিষ্কের ব্যবহার ছাড়া কি বলবেন! আইসিসির গঠনতন্ত্রটা পাল্টে ফেললেন তিনি। নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার জন্য আইসিসির গঠনতন্ত্র সংশোধন করে ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডকে নিয়ে তৈরি করলেন ‘বিগ থ্রি’! যারা ক্রিকেটের হর্তাকর্তা! তারা যা বলবেন ক্রিকেটের বাকি বিশ্ব তা শুনবেন। এবং মানবেন। গঠনতন্ত্র সংশোধনের সময় বাকিদের কাছে প্রলোভন ছিল একটাই। ভারত অন্যদের সঙ্গে অনেক বেশি সিরিজ খেলবে। আর তাতে অন্যদেশগুলো বাড়তি অনেক টাকা আয় করতে পারবে। নিজেদের বোর্ডের অ্যাকাউন্টে প্রচুর ডলার জমা পড়বে। অনেক দেশ প্রথম দিকে আইসিসির গঠনতন্ত্র সংশোধনীতে সায় না দিলেও বিদ্রোহী হওয়ার সাহস দেখাতে পারেনি। বরং বিগ থ্রি-র  প্রাধান্য মেনে নিয়েছিলেন তারা বাড়তি ডলারের আশায়! পাকিস্তান যেমন এখন স্বীকার করছে। পাক বোর্ডের সভাপতি শাহরিয়ার খান খানিকটা ক্ষোভের সঙ্গে এখন অনেক কিছু বলতে শুরু করেছেন। ‘আট বছরে ভারত আমাদের সঙ্গে ছ’টি সিরিজ খেলবে, এই শর্তেই আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আইসিসি-র গঠনতন্ত্র সংশোধনে আমরা সায় দিয়ে ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের প্রাধান্য মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু তার এক বছরের মধ্যেই যদি এমন বৈষম্যের শিকার হতে হয়, তাহলে গোটা বিষয় আমাদের পুনর্বিবেচনা করতে হবে।’

বৈষম্য মানে গঠনতন্ত্র সংশোধনের এক বছরের মাথায় এসে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ক্রিকেট সিরিজ খেলতে রাজি হচ্ছে না। শুধু তাই নয়; পাক-ভারত ক্রিকেট নিয়ে আলোচনার জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি শশাঙ্ক মনোহর আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন পাকিস্তান বোর্ডের সভাপতি শাহরিয়ার খানকে। কিন্তু ভদ্রলোক ভারতে আসার পর মুম্বাইয়ে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কার্যালয়ে শিবসেনা যা করলো তাতে গোটা ক্রিকেট বিশ্বের চমকে যাওয়ার কথা। কিন্তু সবাই চুপসে গেলেন! শিব সেনার সরব প্রতিবাদের  মুখে শশাঙ্ক মনোহর-শাহরিয়ার খানের বৈঠক বাতিল হলো! ভারতীয় বোর্ডের সাধারণ সম্পাদক অনুরাগ ঠাকুর বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দিলেন আলোচনা আপাতত স্থগিত। ক্রিকেটও স্থগিত! কিন্তু কেউই স্তম্ভিত হলেন না! কারণ, কথা বললে যদি অন্যদের সঙ্গে ভারত ক্রিকেট খেলতে রাজি না হয়, তাহলে ডলার কমে যাবে! সুতরাং শ্রীনিবাসন ধন্যবাদ পেতেই পারেন ক্রিকেট বিশ্বে ভারতকে এরকম একটা ক্ষমতাধর দেশের সার্টিফিকেটধারী ক্রিকেট শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়ার জন্য। তা শ্রীনি-র আর্শীবাদধন্য মহেন্দ্র সিং ধোনি যতোই দেশের মাটিতে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি কিংবা ওয়ানডে সিরিজ হারুক না কেন। কিংবা বাংলাদেশের কাছে সিরিজ হেরে দেশে যান। তাতে ভারতীয়দের ডলারের কমতি পড়ছে না।

ভারত খেলতে চাইলো না পাকিস্তানের সঙ্গে। কারণ, পাকিস্তান সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছে এই অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগ সত্য-মিথ্যা সেটা নিয়ে অনেক কথা হতে পারে। কিন্তু শিবসেনা যা করছে ক্রিকেট নিয়ে গত কয়েক যুগ ধরে, বিশেষ করে পাকিস্তান ভারতে এলেই, তাতে ‘ ক্রিকেট সন্ত্রাসী’-র তালিকা করলে ভারতের ঐ উগ্রপন্থী রাজনৈতিক দলটা কি বাদ পড়বে? সে জায়গায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কেন চুপ থাকলো! ক্রিকেট বিশ্ব কেন নীরব থাকলো! থাকলো। কারণ, ‘বিগ থ্রি’-র  হাতে আইসিসি-র  সমস্ত ক্ষমতা এবং সিংহভাগ উপার্জন। তাই বৈষম্যমূলক, অগণতান্ত্রিক সব আচরণ অন্যদের মেনে নিতে হচ্ছে। পরিস্থিতির বদল না হলে আগামীতে আরো অনেক কিছু মেনে নিতে হবে। যেমন বাংলাদেশকে মেনে নিতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সফর বাতিল করার ঘটনা! বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থের ওপর আঘাত হতে পারে। অতএব সতর্কবার্তা জারি করা হলো। অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফর বাতিল করলো। নতুন করে আবার প্রতিশ্রুতি দিলো; আগামীতে বাংলাদেশ সফরে আসবে তারা। আমরাও গদগদ হয়ে বললাম; তারা বলেছে আগামীতে আসবে। ওরকম কথা পাকিস্তানকেও ভারত বলেছিল, আট বছরে ছ’টা সিরিজ খেলবে। এখন এক বছরের মাথায় এসেই উল্টো কথা বলতে শুরু করেছে শশাঙ্ক-অনুরাগের ভারত। ভারতের পাকিস্তানকে ‘না’, বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার সফর বাতিল। ‘বিগ থ্রি’-র বিগ বিগ ইস্যুগুলো টের পাওয়া যাচ্ছে কি?

‘বিগ থ্রি’-র জন্মদাতা শ্রীনি কেন ক্রিকেটে এরকম অবদানের জন্য অমর হয়ে থাকবেন না? আইসিসি-থেকে অন্তত তিনি সংহতি, স্বস্তি -কে নির্বাসনে পাঠাতে পেরেছেন নিজেদের সমৃদ্ধির জন্য। ভারতের ক্রিকেটের যতোই হতশ্রী চেহারা বেরিয়ে পড়ুক না কেন, শ্রীনি-কে ধন্যবাদ।

লেখক : স্পোর্টস এডিটর, দীপ্ত টিভি

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।