জনআস্থা ফিরিয়ে আনুন


প্রকাশিত: ০৪:২৮ এএম, ২৫ অক্টোবর ২০১৫

শারদীয় দুর্গোৎসব নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন হওয়ায় আশা করা গিয়েছিল পবিত্র আশুরা পালনেও কোনো সমস্যা হবে না। কিন্তু নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও এই প্রথম তাজিয়া মিছিলে ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটলো। শুক্রবার ভোরে পুরান ঢাকার ঐহিত্যবাহী হোসনী দালান এলাকায় তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতি চলছিল। এর মধ্যেই কোনো কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ বিস্ফোরণ। কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসাইনের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে শোকের আবহের মিছিলটি সত্যিকার অর্থে আরও শোকাবহ হয়ে ওঠে। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে নিহত হয় একজন। আহত হয় শতাধিক। তৈরি হয় এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। এ ঘটনায় নিহত হয়েছে কিশোর সাজ্জাদ হোসেন। তার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। আহতরাও হাসপাতালে কাঁতরাচ্ছে। কিন্তু এভাবে আর কত?

দুইজন বিদেশি নাগরিক হত্যার পর  যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে, এমনকি দেশে বিদেশে এ নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক এরই মধ্যে এই ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটলো। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, পবিত্র মহররম উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে তাজিয়া মিছিলকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটতে পারে সেদিকে জোর নজর দেয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, নিরাপত্তায় হয়তো কোথাও ঘাটতি ছিল। নইলে এতবড় ঘটনা ঘটলো কী করে? হোসনী দালান এলাকায় যেখানে ঘটনা ঘটেছে সেখানে সবাইকে তল্লাশি করে ঢোকানো হয়েছে। তাহলে বোমা বহনকারীরা সেখানে ঢুকলো কী করে। হামলার ঘটনা ঘটেছে ভেতর থেকে। এবং হামলাকারীরা বোমা নিক্ষেপও করেনি। আস্তে করে ছেড়ে দিয়েছে। পায়ের আঘাতে সেগুলো বিস্ফোরিত হয়েছে। এমন খবরই এসেছে গণমাধ্যমে।

বিস্ফোরিত বোমার সাথে জঙ্গিদের কাছ থেকে উদ্ধার করা বোমারও মিল আছে এমন কথাও বলা হচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। আবার  যথারীতি আইএস-এ ঘটনার দায় স্বীকার করেছে। এই ঘটনায় যুক্তরাজ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিন্দা জানিয়েছে। দেশে-বিদেশি গণমাধ্যমেও হামলার খবর ব্যাপক গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ পেয়েছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক বাদানুবাদও শুরু হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, আখেরে ক্ষতিটা হচ্ছে কার?

ক্ষতি হচ্ছে দেশের মানুষের, দেশের। জীবন যাচ্ছে সাধারণ মানুষের। আর দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে একের পর এক ঘটনায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে জনআস্থায় চিড় ধরেছে। নিরাপত্তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। কোথায় কে কখন আক্রান্ত হবে তার কোনো ইয়ত্তা নেই। ষড়যন্ত্র হোক, স্বাধীনতা বিরোধীদের কাজ হোক, জঙ্গিবাদ বা আইএস- যেই ঘটনার সাথে জড়িত থাকুক না কেন মানুষ দেখতে চায় সরকার কী করছে। কিভাবে ঘটনা সামাল দিচ্ছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা এবং সক্ষমতার বিষয়টিও তারা নজরে রাখছে। কাজেই এখন কঠোর, কঠিন ব্যবস্থা নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। অপরাধী আইনের আওতায় না এলে কোনো ওষুধেই এ রোগ সারবে না- সরকারকে এ বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্যদিকে যারা এসব ঘটনায় আপাত আত্মতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন তাদেরও কিন্তু সতর্ক হওয়ার সময় এসেছে। কারণ ‘নগর পুড়লে দেবালয়ও কিন্তু এড়ায় না।’

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।