করোনাভাইরাস : সরকার ও গণমনস্তত্ত্ব

শেখর দত্ত
শেখর দত্ত শেখর দত্ত
প্রকাশিত: ০২:৪৬ পিএম, ২০ মে ২০২০

গণমানুষের মন বোঝার চাইতে কঠিন বোধকরি আর কিছু নেই। সামানাসামনি থাকা একজন মানুষের মনই বোঝা যায় না। আর যখন জনে জনে মিলে গণ হয়, তখন এক যোগ এক সমান দুয়ের মতো যোগফল হয় না, হয় ভিন্ন একটা কিছু। এই ভিন্ন কিছু যাকে বলে সামাজিক মনস্তত্ত্ব, মিছিল-সমাবেশ হলে তাও বেশ কিছুটা আঁচ করা যায়। কিন্তু তা যখন থাকে বিক্ষিপ্ত ঘরে-ঘরে, তখন তা বোঝা কষ্টকর বৈকি! বলাই বাহুল্য বিশেষভাবে করোনাকালে আমাদের দেশের গণমানুষের মনস্বত্ত্ব বোঝা সত্যিই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। রোগের ভয়, মৃত্যুভয় থাকা সত্ত্বেও মানুষ নিয়ম ভাঙছে। এটা ঠিক আমাদের দেশে এখনও করোনা মহামারি আকারে দেখা দেয় নাই। কিন্তু রোগীর সংখ্যা ও মৃতের সংখ্যা তো বেড়েই চলেছে। এই অবস্থায় গণমানুষের মন বা মনস্তত্ত্ব এমন কেন, তা গভীরভাবে ভাবনার বিষয়।

করোনা প্রতিরোধে আমরা যথেষ্ট সময় পেয়েছি। ইউরোপ-আমেরিকা সেই সময় পায় নাই। ডিসেম্বর ২০১৯-এর শেষদিকে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান শহরে এই রোগ ছড়িয়ে পড়লে শুরুতে চীন এই বিষয়ে গুরুত্ব দেয় নাই, গোপন করেছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চীন সরকার এইসব বিষয়ে তাদের ‘দুর্বলতা’ ও ‘ঘাটতি’ স্বীকার করে। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভাইরাসের ভয়াবহতা প্রথম দিকে অনুধাবন করতে সক্ষম হয় নাই। জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এই সংস্থার সভায় এই ভাইরাস নিয়ে সতর্ক করলেও বলে যে, মহামারি আখ্যায়িত বা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করার মতো অবস্থা এখনও হয় নাই। অর্থাৎ ইউরোপ-আমেরিকার কাছে করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে করোনা ছড়িয়ে পড়ার আগে প্রথম দিকে কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আমাদের কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা সামনে ছিল।

ওষুধ না থাকার কারণে করোনা প্রতিরোধের একমাত্র দাওয়াই হলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা। আর তা করার জন্য যাতায়াত তথা সড়কপথ-রেলপথ-আকাশপথ, অফিস-আদালত, মিল-কারখানা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট সব বন্ধ করা অপরিহার্য বিধায় মহামারির বিপদ ঠেকাতে আমাদের দেশেও সব বন্ধ করে দেয়া হলো। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এই প্রচারও কম হয়েছে তা বলা যাবে না। সাংবাদিকরা জীবনের ভয় ত্যাগ করে সংবাদ পরিবেশন করছেন। সবার কানে সামাজিক দূরত্বের বিষয়টি পৌঁছে নাই এমনটা বলা যাবে না। কিন্তু প্রথম থেকেই দেখা গেল, মানুষ তা মানছে না। সব বন্ধ হয়ে যাবার সাথে সাথে মানুষ দলে দলে বাড়িতে যেতে বের হয়ে পড়লো। মানুষ বাজার-হাটে, কিংবা মসজিদ-মন্দিরে যাওয়া তেনম কমালো না। পাড়ার মোড়ে চায়ের দোকানে আড্ডা চললো। এমনকি কোনো বাড়িতে করোনা রোগী ধরা পড়ায় বাড়ি লকডাউন করলে মানুষ তা দেখার জন্য জটলা করতে থাকলো। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যখন আইন অমান্যকারীদের লাঠির বাড়ি দিয়ে কোথায়ওবা রক্ত ঝরালো তখন বর্বরতা (রাস্তাঘাটে পিটুনি বর্বরতাই) বিবেচনায় তা বন্ধ করার জন্য হৈ চৈ শুরু হলো। তারপর কিন্তু আবার আর্মি নামানোর কথা উঠলো।

আর সন্দেহভাজন যাদের কোয়ারেন্টাইন করা হলো তাদের অনেকেই এবং এমনকি পরিবারের সদস্যরাও তা মানতে অস্বীকার করলো। ইতালিফেরতদের থেকে আমাদের রোগটা এসেছে এবং বিস্তৃতি ঘটেছে। যখন প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হলো, তখন কর্তৃপক্ষের সাথে সংশ্লিষ্ট কারো কারো ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি, গালাগালির ঘটনাও ঘটলো। রোগী পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে বহু। এমনটা যখন হয়েছে, তখনই অনুমান করা গেছে রোগ ক্রমেই আরও ছড়িয়ে পড়বে। প্রশ্নটা হলো নিজে আর সেই সাথে পরিবার-এলাকার আপনজনের মধ্যে রোধ ছড়িয়ে দেয়া আর সেই সাথে মৃত্যুভয় থাকা সত্ত্বেও জনগণের একটা অংশ তা করলো কেন? নিজের মৃত্যুভয় কি তাদের নেই? পরিবার বা সমাজের প্রতি কি তাদের কোনো দায়িত্বরোধ নেই? এই প্রশ্নটা যখন সামনে আসবে তখন সরকারি প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা, গাফিলতি কিংবা ত্রুটির বিষয়টা অবশ্যই উঠবে এবং নিঃসন্দেহে এটা বিদ্যমান। কিন্তু ব্যক্তিবিশেষ বা গণমানুষ বিপন্নতা জেনেও তা করছে কেন? গণমনস্তত্ত্বটা আসলে আমাদের কী?

তবে অবস্থা পর্যবেক্ষণে এটা বলতেই হবে যে, একসময় নিয়ম মানা আর নিয়ম না মানার মধ্যে আমাদের দেশের মতো করে একটা মোটামুটি সহনশীল ভারসাম্যমূলক অবস্থা সৃষ্টি হয়। কিন্তু প্রথম আকস্মিকভাবে সেই ভারসাম্য ভেঙে দেয় গার্মেন্টস মালিকরা। সাথে সরকারের মন্ত্রণালয়ের সংযোগ রয়েছে। গার্মেন্টস খুলে দেয়ার ঘোষণার সাথে সাথে দলে দলে শ্রমিকরা স্রোতের মতো ঢাকার দিকে আসতে থাকে। বাস বন্ধ থাকা সত্ত্বেও পায়ে হেঁটে, ট্রাকে, ভ্যানে চড়ে নারী-পুরুষের মিছিল শুরু হয়। প্রচণ্ড সমালোচনার মুখে হঠাৎই আবার গার্মেন্টস বন্ধ করে দেয়া হয়। শুরু হয় মিছিল করে ফেরার পালা। এদিকে সব বন্ধ থাকায় মানুষ যখন চরম আর্থিক কষ্টে, তখনও গার্মেন্টস মালিকদের কেউ কেউ শ্রমিকদের বেতন দিল না কিংবা কারখানা লে-অফ পর্যন্ত করে দিল। শুরু হলো নিয়ম ভঙ্গ করে ঘেরাও-মিছিল। ভারসাম্য ভেঙে নিয়ম ভাঙার নাটক তখন বিয়োগান্তক রূপ পরিগ্রহ করলো। কথা উঠলো গার্মেন্টস মালিকরা সরকারকে চাপে ফেলে আর্থিক সহায়তা বাগিয়ে নিতে খোলা-বন্ধের এই খেলা খেলেছে। সঙ্গতভাবেই দাবি উঠলো যারা লাভ-লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষের জীবন নিয়ে খেলছে, তারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে।

ওই ঘটনার পর আবারও কিছু একটা ভারসাম্যমূলক অবস্থা সৃষ্টি হলো। কিন্তু সব বন্ধ অবস্থায় থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে কর্মহীন মানুষেরা আয়-রোজগারের প্রশ্নটা সামনে আসলো। অর্থকষ্ট-খাদ্যকষ্টের বিষয়টা প্রধান হয়ে দাঁড়ালো। সরকারি-বেসরকারি রিলিফে আর কতটা চলে। এতে সরকারের মধ্যেও দোদুল্যমানতা দেখা দিল। সরকারি অফিস খুলে আবার বন্ধ করা হলো। ইতোমধ্যে এসে গেল ঈদ। বাড়লো দোকানদার-ব্যাবসায়ীদের চাপ। সরকার নিয়ম মানার শর্তে দোকান ও হোটেল খুলে দিল। দোকানে খুব একটা ভিড় হবে না, এমনটাই আশা বা ধারণা করা হয়েছিল। কেননা রোগের ভয়, মৃত্যুভয় নিয়ে কে যাবে নতুন জিনিস কিনতে বা খাবারের দোকানে খেতে! কিন্তু দেখা গেল দোকানে দোকানে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। শুরু হলো বাইরে থেকে ঢাকায় মানুষ আসার স্রোত। শিমুলিয়া-কাঁঠালিয়া ও পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট সূত্রে জানা যায়, ঈদের আগে বিশেষত দোকানপাট খুলে দেয়ার পর ঢাকামুখী ছিল মানুষের গতি। কোনাকাটা করতেও নাকি মানুষ এসেছে ঢাকায়। রোগ-মৃত্যু-শোকের সব ভয় উবে যেতে থাকলো।

এদিকে ঈদ সামনে রেখে ১৯ মে থেকে সব বন্ধ করে দিতেই উল্টো গণস্রোত। ১৫ মে শুক্রবার ঢাকা থেকে মানুষের গ্রামের দিকে যাত্রা শুরু হলো। ১৭ মে রবিবার ভিডিও কনফারেন্সে পুলিশ মহাপরিদর্শক সব ইউনিটকে নির্দেশ দিলেন, ‘আসন্ন ঈদে অনেকেই বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। এটা কিছুতেই হতে দেয়া যাবে না। সরকারের নির্দেশনা ব্যতীত কেউ ঢাকায় প্রবেশ বা ত্যাগ করতে পারবেন না।’ আন্তঃজেলা ভ্রমণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হলো বলেও তিনি ঘোষণা করলেন। প্রসঙ্গত বলতেই হয় যে, ইতোমধ্যে কথা হলো কলকাতায় নিকটজনদের সাথে। এক স্বজন বললেন, তোমাদের ওখানে বেশ কড়াকড়ি হচ্ছে। তোমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তো কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, ঈদের সময় রাস্তায় বের হওয়া যাবে না। ঘরে বসে ঈদ পালন করতে হবে। এবারে আর বাড়ি যাবার সেই দৃশ্য আমরা দেখতে পাব না। তিনি বললেন এই খবর তিনি সেখানকার সংবাদ মাধ্যম থেকে জেনেছেন। কোথায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কড়া নির্দেশ! আর কোথায় আইজিপির পুলিশ বাহিনী! আর কোথায় গণমনস্তত্ত্ব!

১৮ মে সোমবার ঢাকা থেকে বাড়ি যাত্রী জনস্রোত করোনাকালীন সব যাত্রার রেকর্ডকে ভঙ্গ করে দিল। শিমুলিয়া কিংবা পাটুরিয়া ফেরিঘাটে মানুষের ভিড় দেখলে একটুও মনে হবে না, দেশে করোনা মহামারির আশঙ্কা রয়েছে। বাস নাই তো কি? সেহেরি খেয়েই মানুষ ট্রাক, মাইক্রো বাস, লেগুনা, মোটরসাইকেল দিয়ে ঘাটে পৌঁছেছে। শিমুলিয়া ফেরিঘাটে ছিল ১ থেকে ২ কিলোমিটার প্রাইভেট গাড়ির লাইন। শিমুলিয়ার বিআইডাব্লিউটিসির কর্মকর্তা বলেছেন, ১৩টি ফেরি চলাচল করেছে। মানুষের ভিড়ে গাড়ি উঠতে পারছে না। একজন কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, সব কর্মচারী ভয়ে অস্থির। কিন্তু ফেরি আসছে আর যাচ্ছে। এই ঘাটে প্রশাসন বা পুলিশের কোনো নজরদারি ছিল না বলে জানা যায়। এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাটে চালু ছিল ১০টি ফেরি। গাড়ি আর মানুষের ভিড়ে আর ওপরের নির্দেশে এক সময় ফেরি বন্ধ করে দেয়া হয়। তাতে ফেরি চালু করার দাবিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং ভাঙাভাঙির ঘটনা পর্যন্ত ঘটে। যাত্রা চলাচল বন্ধ করার জন্য ঢাকা-আরিচা রোডে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়। কিন্তু বাধা পেয়েও বিকল্প পথে মানুষ ঘাটে চলে যায়। মানুষ যদি চায়, তবে আটকানোর সাধ্য আছে কার! হায় রে মানুষের মন আর ইচ্ছা বাস্তবায়নের চেষ্টা!

ধরে নেয়া যেতে পারে যে, সাধারণ মানুষের সচেতনতা নেই, সব বুঝে না তাই গ্রামমুখী হচ্ছে। কিন্তু এত গাড়ি ফেরি ঘাটে জমা হয় কীভাবে? শিক্ষিত গাড়িওয়ালারাও কি তেমনই অসচেতন। আর আন্তঃজেলা ভ্রমণ নিষিদ্ধ থাকলে এত গাড়ি প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর দিয়ে ফেরিঘাটে যায় কীভাবে? গণমানুষকে হয়তো আটকানো যায় না, বিকল্প পথ খুঁজে নেয়। কিন্তু গাড়ি তো আটকানো সম্ভব। গাড়ির মানুষের যদি বাড়ি যেতে ইচ্ছে হয়, তবে গণমানুষের ইচ্ছা থাকবে না কোন যুক্তিতে? গাড়ির জন্য ফেরি খোলা রাখলে গণমানুষের যাত্রায় দোষ কী! প্রশ্নটা হলো গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হলো না কেন? সোমবারই দুপুরে ঢাকা উত্তরে বনানী-উত্তরা সড়কে দুই ঘণ্টা যানজট ছিল। আর দক্ষিণে যানজটতো দোকানপাট খুলে দেয়ার পর থেকেই চলছিল। মানুষের ভিড় ও যানজট দেখিয়ে দিচ্ছে, সবকিছু বন্ধ করা অর্থবহ হচ্ছে না।

এদিকে অফিস-আদালত সব বন্ধ থাকার কারণে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, মানুষর জীবনে অর্থকষ্ট সৃষ্টি হচ্ছে, সরকার ত্রাণে খরচ করছে, প্যাকেজ ঘোষণার সুবিধা দিচ্ছে, হাসপাতাল-ক্লিনিক প্রায় বন্ধ থাকায় জনগণ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি। সরকারকে রিলিফ দিতে হচ্ছে। আর অন্যদিকে নিয়মকানুন সব ভেস্তে যাচ্ছে। কাজের কাজও হচ্ছে না, অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেল, ক্ষোভে-দুঃখে-অভিমানে অনেকেই লকডাউন আর সামাজিক দূরত্বকে গালাগালি করছেন, সব খুলে দেয়ার প্রস্তাব করছেন। এদিকে পরীক্ষা বাড়ায় গত সপ্তাহে করোনা রোগী লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মৃত্যুও বাড়ছে। এসব খবরও সবাই শুনছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তায় রোগীরা করোনা পরীক্ষার জন্য সকাল থেকে বিছানা পেতে শুয়ে আছেন। এই যখন অবস্থা তখন উৎসব পালনের জন্য দোকানে ভিড় করা কিংবা বাড়িমুখী হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর।

ইতোপূর্বে এই কলামে লেখা হয়েছে আর পত্রপত্রিকায় খবরও উঠেছে, চীনের নববর্ষের উৎসবকে কেন্দ্র করেই মূলত ইউরোপ-আমেরিকায় করোনা ছড়িয়ে পড়ে। চীনের নববর্ষ উৎসবকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানবভ্রমণ। এক হিসাবে দেখেছিলাম, বর্ষবরণ শেষে এক লাখ মানুষ নাকি চীন থেকেই ইতালি ফেরত গেছে। তাতেই রোগটা ছড়িয়ে পড়েছে। চীন থেকে ৪ লাখ ৩০ হাজার মানুষ করোনাকালীন আমেরিকা গিয়েছে, যার একটা বড় অংশ নববর্ষ উদযাপনের সাথে সংশ্লিষ্ট। সিঙ্গাপুরসহ অনেক জায়গায়ই সংক্রমণ ছড়িয়েছে গির্জা থেকে। ইতোমধ্যে সরকার ঘোষণা করেছে, খোলা জায়গায় ঈদের নামাজ পড়া যাবে না। নিয়ম মেনে মসজিদে নামাজ পড়তে হবে। মসজিদে কার্পেট বিছানো যাবে না। জীবণুনাশক দিয়ে ফ্লোর পরিষ্কার করতে হবে। সকলকে সাথে জায়নামাজ নিতে হবে। প্রবেশ পথে সাবান বা স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করতে হবে। কোলাকুলি করা যাবে না। এইসব আদেশ-নির্দেশ কতটা কার্যকর হয় তা এখন দেখার বিষয়। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুর থেকে যেসব মানুষ গ্রামে গেছেন, তাদের ক্ষুদ্র হালেও একটা অংশ কিন্তু করোনাভাইরাস বহন করে গ্রামে নিয়ে গেছেন। যারা বাড়ি গেছেন, তারা আবার উৎসব শেষে ফিরবেন। তাই কি হয়, কী হবে তা নিয়ে গভীর শঙ্কার কারণ রয়েছে।

ইতোমধ্যে জানা গেছে, বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার সরকার করোনাভাইরাস যাতে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সে জন্য বড় বড় শহর থেকে জনগণকে গ্রামে না যেতে নির্দেশ দিয়েছে, প্রায় সোয়া কোটি মানুষ সেখানে ঈদে ঘরমুখী হয়। সৌদি আরব ২৩-২৭ মে ৫ দিন দেশব্যাপী কারফিউ জারি করেছে। তুরস্ক ঈদ উৎসবের বন্ধের দিনগুলোতে কারফিউ দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। ১৫টি বড় বড় শহরে যাতায়াত ১৫ দিনের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ করেছে। ওইসব দেশে নির্দেশ কার্যকর হবে নাকি আমাদের মতো অবস্থা হবে, তা গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয়। যদি ওইসব দেশ বন্ধ করতে পারে এবং উৎসবের মধ্য দিয়ে যদি করোনা মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়ে, মৃত্যু বেশি হতে থাকে, তবে নিঃসন্দেহে আদেশ-নির্দেশ কার্যকর না করাতে পারার জন্য জনগণ সরকারি কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করবে। সরকারকে অভিযুক্ত করা যাবে, এটা সহজ এবং কারণ থাকলে প্রয়োজনও। কিন্তু জনগণকে কীভাবে কী বলে অভিযুক্ত করা যাবে? গণমনস্তত্ত্ব বিষয়ে বোঝাপড়াটাইবা কী হবে? ভাগ্যের ওপরই কি সব ছেড়ে দিতে হবে? এমনটা যাতে না করতে হয় সেটাই উৎসবের দিনগুলোর একান্ত কামনা।

লেখক : রাজনীতিক ও কলামিস্ট

এইচআর/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।