বাল্যবিয়ে : কবে যাবে এ আঁধার!
এটা খুবই দুঃখজনক যে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগের পরও বাল্যবিয়ে বন্ধ হচ্ছে না। গণমাধ্যমে প্রায়ই বাল্যবিয়ের খবর আসে। এরসঙ্গে জড়িত থাকার অপরাধে জেল-জরিমানারও বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বাল্যবিয়ে থেমে নেই। বাল্যবিয়ে সমাজের জন্য অভিশাপ। কাজেই যেকোনো মূল্যে এটা বন্ধ করতে হবে।
গতকাল শুক্রবার জাগো নিউজে প্রকাশিত হয়েছে বাল্যবিয়ের অপরাধে জেল-জরিমানার খবর।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বাল্যবিয়ের অপরাধে বর ও তার বাবাকে জেল-জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। বর ফাহিমকে (২৩) এক বছরের জেল ও তার বাবা ফজলুল হককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের জেল দেয়া হয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার আসমাউল হুসনা লিজা শুক্রবার সন্ধ্যায় এ দণ্ডাদেশ দেন।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার কচুয়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে ফাহিমের সঙ্গে সখীপুর পৌরসভার গৌরগোবিন্দপুর গ্রামের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে হয়।
এ খবর পেয়ে বর ও তার বাবাকে শুক্রবার সন্ধ্যায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে বর ফাহিমকে এক বছরের জেল ও তার বাবা ফজলুল হককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের জেল দেয়া হয়।
এদিকে বাল্যবিয়ে পড়ানোর দায়ে কচুয়া উত্তরা জামে মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ আইন উদ্দিন আল আজাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত থেকে।
আইন অনুযায়ী পুরুষের বিয়ের বয়স ২১ বছর, নারীর ১৮ বছর। ব্যতিক্রম হলে বিয়ের সঙ্গে জড়িত বর-কনের অভিভাবক, আত্মীয়, স্থানীয় কাজিসহ সবার শাস্তির বিধান রয়েছে।
কন্যাশিশুরাই বাল্যবিয়ের শিকার হয় বেশি। দারিদ্র্য, অসচেতনতা, সামাজিক নিরাপত্তার অভাব, যৌন হয়রানি ও কন্যাশিশুর প্রতি নেতিবাচক মনোভাবের কারণে কন্যাশিশুদের বিয়ে হচ্ছে বেশি। পাশাপাশি ভুয়া জন্মনিবন্ধনের মাধ্যমে বয়স বাড়ানোর ঘটনাও ঘটছে। দেখা যায়, সন্তান জন্ম দেয়া ও লালন-পালন করা অল্প বয়সী মায়েদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই অবস্থায় মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ছে।
নানা ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে- এমন স্বপ্ন দেখছি আমরা। কিন্তু বাল্যবিয়ে এর মধ্যে বিরাট এক বাধা। এ সমস্যা সমাধানে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে সবচেয়ে বেশি। বিয়ে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেল- এই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
অল্প বয়সে বিয়ে হওয়ার কারণে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া আর্থ সামাজিক নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এ জন্য বাল্যবিয়ে বন্ধে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা ও মানসিকতার পরিবর্তনও অত্যন্ত জরুরি।
এইচআর/বিএ/এমএস