পোড়া রোগীর কপাল পোড়া


প্রকাশিত: ০৪:৩৪ এএম, ১০ অক্টোবর ২০১৫

আগুনে রুমার শরীরের ৮০ শতাংশ  শুধু পুড়েই যায়নি।  তার কপালো যেন পুড়েছে। কেন না পোড়ার চিকিৎসা করতে গিয়ে ওষুধ কিনতে কিনতেই তার স্বজনদের দফাসারা। ঢাকা মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়ে প্রথম দফায়ই কিনতে হয়েছে ১০ হাজার টাকার ওষুধ। এরপরও শেষ রক্ষা হয়নি। ২২ ঘণ্টা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা গেছেন গৃহবধূ রুমা আক্তার (৩০)। রুমার মতো অনেক দুর্ভাগা রোগীই ভর্তি হন ঢামেকের বার্ন উইনিটে। কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামাদির অভাবে তাদের সঠিক চিকিৎসা হয় না। এরফলে তাদের দুর্ভোগের কোনো অন্ত নেই। বার্ন ইউনিটে যে সমস্ত রোগীরা আসেন এমনিতেই তাদের জীবন দুর্বিষহ। এরপর প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও যদি না পাওয়া যায় সেটা খুবই দুঃখজনক। কর্তৃপক্ষের উচিত এ ব্যাপারে নজর দেয়া।

জাগো নিউজের এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়েছে, বার্ন ইউনিটে ভর্তি রোগীদের স্বজনদের চিকিৎসকরা হাতে স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে বাইরে থেকে ওষুধ কিনে আনতে পরামর্শ দিয়েছেন। নিরুপায় হয়ে তারা সকলেই ফার্মেসি থেকে হাজার হাজার টাকার ওষুধ কিনে চিকিৎসা চালাচ্ছেন। অথচ পোড়া রোগীদের সব রকম ওষুধ এবং অন্যান্য চিকিৎসা সামগ্রী হাসপাতাল থেকেই সংগ্রহ করার কথা।

গত মঙ্গলবার থেকে বার্ন ইউনিটে পোড়া রোগীদের জন্য অত্যাবশ্যক সিল্ক ক্রিম, হার্টসল স্যালাইনসহ বেশ কয়েকপ্রকার ওষুধ, ইনজেকশন ও স্যালাইনের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এগুলো ছাড়া পোড়া রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বার্ন ইউনিট থেকে জরুরি ভিত্তিতে চাহিদাপত্র পাঠানো হলেও স্টোর থেকে সরবরাহ নেই এবং ৩ থেকে ৪ দিন পর সরবরাহ করা সম্ভব হবে। এই তিন দিন কয়দিনে গিয়ে ঠেকে সেটি দেখার বিষয়। এছাড়া ওষুধপত্রের সরবরাহ থাকলেও যে রোগীরা সবসময় তা পান সেটি নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কারণ ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে খুব একটা সুখকর নয়।

স্বামীর দেয়া আগুনে নিহত রুমার বোন ফাতেমার অভিযোগ, রুমাকে মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসলেও জরুরি বিভাগ থেকে রুমার ড্রেসিংসহ প্রয়োজনীয় চিকিৎসার জন্য সিল্ক ক্রিম, হার্টসল ইনট্রাভেনাস (আইভি) স্যালাইন, বেবি স্যালাইন ও অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ ও ইনজেকশন জোটেনি। সময়মত তা পাওয়া গেল হয়তো রুমাকে বাঁচানো যেত। বিষয়টি অবশ্যই তদন্ত করে দেখা দরকার। রুমার মত পরিস্থিতি যেন অন্য রোগীদের ক্ষেত্রে না হয় সেটিও নিশ্চিত করা জরুরি।

দেশে এমনিতেই পোড়া রোগীর চিকিৎসা সেবা অপ্রতুল। এরপর যতটুকু সেবা পাওয়া যাচ্ছে সেখানেও যদি রোগীরা বঞ্চিত হয় তাহলে তারা যাবে কোথায়? এছাড়া পোড়া রোগীর চিকিৎসা ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘস্থায়ী। পোড়া রোগীদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষজন। তাদের আর্থিক সামর্থ্যও কম। এসব বিবেচনায় বার্ন ইউনিটের রোগীরা যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পান সেটি নিশ্চিত করতে হবে যেকোনো মূল্যে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে শুধু অজুহাত খাড়া করে তাদের দায়িত্ব শেষ করলে চলবে না।

# ওষুধ সংকটে পোড়া রোগীদের ভোগান্তি

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।