প্রশ্নের মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা, আন্তরিকতা


প্রকাশিত: ০৩:১৬ এএম, ১০ অক্টোবর ২০১৫

দুই বিদেশি হত্যা, বাড্ডায় পিডিবি’র চেয়ারম্যান খুন আর পাবনায় খ্রিস্টান ফাদারকে হত্যা চেষ্টা, এই চারটি ঘটনার এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি দেখাতে পারেনি পুলিশ। কিছু কিছু পত্রিকা লিখছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন নাজুক হয়ে পড়ছে। হয়তো নাজুক হয়ে পড়েছে সরাসরি বলা যাচ্ছে না, কিন্তু একটা ভয়ের আবহ যে তৈরি হয়েছে সে বিষয়টিতো নিশ্চিত।

হত্যা, হত্যার চেষ্টা, অপহরণ। পুলিশ বলছে এসব ঘটনা কোনো সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের কাজ। তারা বলছে কোনো মহল দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় ঘটাচ্ছে এসব। এসবই শুধু এখন পর্যন্ত প্রমাণ ছাড়া কথার মালা।

চাঞ্চল্যকর হত্যাগুলোর বেশিরভাগই রয়ে গেছে অনুদ্ঘাটিত। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি থেকে শুরু করে গোপীবাগের পীর বা ইন্দিরা রোডের মাওলানা ফারুকী হত্যাকাণ্ড, মানুষের স্মরণে থাকা একটি হত্যার তদন্তেও কোনো অগ্রগতির কথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানাতে পারেনি। একের পর এক ব্লগার খুন হয়েছেন, কিন্তু পুলিশের দিক থেকে কোনো তদন্তে অগ্রগতি নেই। তাই স্বাভাবিকভাবেই ধারণা তৈরি হয় যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। আর এতে করে হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন বড় ধরনের অপরাধের দ্রুত বিচার না হওয়ায় অপরাধপ্রবণতা বাড়ছে।

অপরাধীদের শনাক্তকরণে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে মানুষের কাছে যা অপরাধীদের উৎসাহিত করে। ঘাতকরা দেশের দুই প্রান্তে দুই বিদেশি নাগরিককে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে গেল, অথচ গোয়েন্দারা আগে থেকে এর কিছুই জানতে পারেনি, এটি দুর্ভাগ্যজনক। হত্যাকাণ্ডের পরও ঘাতকরা অথবা ঘটনার পরিকল্পনাকারিরা রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এতে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিদেশিরাই।

বিদেশি দূতাবাসগুলো তাদের স্ব স্ব দেশের নাগরিকদের জন্য সতর্ক বার্তা দিয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষেরও এক ধরনের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আছে। দেশের আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রমে বিদ্যমান দুর্বলতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে না পারলে সরকার ও তার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর থেকে মানুষের আস্থা উঠে যেতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নানা ধরনের আশ্বাস দেয়, সরকারের পক্ষ থেকেও সন্ত্রাসীদের বিষয়ে জিরো টলারেন্সের কথা বলা হয়, কিন্তু এসবের বাস্তব প্রতিফলন মানুষ দেখতে পায় না। সন্ত্রাসীদের শনাক্ত করা যায় না বিধায় ব্যবস্থাও নেয়া হয় না।

বিভিন্ন বাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী, তাদের প্রযুক্তি সক্ষমতাও অনেক বেড়েছে, দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণও বেড়েছে। তাহলে তারা ব্যর্থ হচ্ছে কেন? দক্ষতার অভাব যেমন বোঝা যাচ্ছে, তেমনি আশঙ্কা তৈরি হয়, কোথাও কি তাদের আন্তরিকতা বা অঙ্গীকারের অভাব আছে?

প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত একটি বড় ব্যাপার। কিন্তু শুধু প্রযুক্তি দিয়ে বেশিদূর এগুনো যায় না। অপরাধীচক্র সম্পর্কে গোয়েন্দা বাহিনির কাছে তথ্যভাণ্ডার কেমন আছে সেটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আইএস, সরকারবিরোধী কিংবা অন্য কোনো গোষ্ঠী যারাই ঘটাক না কেন এক সপ্তাহের মধ্যে পরপর দুই বিদেশিকে গুলি করে হত্যার ঘটনা দেশে- এটাই প্রথম। ঘটনা দুটো পরিকল্পিত এবং এ কারণে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাষ্ট্রের ইমেজ দুটোই আজ প্রশ্নের মুখে।

এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত খুনিদের শনাক্ত ও বিদেশিদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের পাশাপাশি সমাজে বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপনের তাগিদ আসছে সব মহল থেকে। বিদেশিরা বলছে না যে বাংলাদেশে আসা যাবে না। কিন্তু বিচারহীনতার সংকেত একবার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়লে তার বড় প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে।

রাজধানীর কূটনৈতিক জোনে ইতালিয়ান নাগরিক হত্যা এবং রংপুরে জাপানি নাগরিক হত্যার পর এতগুলো দিন পার হয়ে গেলো, অথচ  কেউ আটক হল না। ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দক্ষতা ও আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন যেমন বিদেশিরা তুলছে, প্রশ্ন উঠছে নাগরিক সমাজেও। অভিনব এ দু`টি ঘটনায় বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরিরও সুযোগ করে দেবে, যা দেশের জন্য অকল্যাণকর।

বাংলাদেশে এই প্রথম পর পর দু`জন বিদেশি খুনের ঘটনা ঘটলো, যদিও ইতিপূর্বে বিভিন্ন কারণে দু-একজন বিদেশির ওপর আক্রমণ হয়েছে। আমরা মনে করতে পারি বিগত চারদলীয় জোটের আমলে বৃটিশ রাষ্ট্রদূত  আনোয়ার চৌধুরীর ওপর সিলেটে গ্রেনেড হামলা এবং ঢাকায় সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ হত্যাকাণ্ডের কথা। আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা ছিল সেসময় গজিয়ে উঠা জঙ্গি সংগঠন জেএমবি’র কাজ আর খালাফ খুন হয়েছে তার একান্ত ব্যক্তিগত কারণে।   

আইএস আছে কি নেই, সে বিতর্ক চলবে। কিন্তু অন্তত দু’জন বিদেশি  হত্যাকাণ্ডের নির্মোহ এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তদন্ত হবে, বিচার হবে এটাই প্রত্যাশিত। অন্যথায় আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে দেশে বিদেশে যে ধারণা তৈরি হবে তা তাদের নিজেদের জন্যই বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিবে। মানুষের আস্থা কমার পাশাপাশি এই বাহিনীগুলোর সদস্যদের মনোবলে বড় সংকট তৈরি করবে। তাই দুর্বলতা, ত্রুটিবিচ্যুতি, দক্ষতার অভাব যা আছে সেসব সংশোধনের উদ্যোগ নেয়ার সময় এসেছে। একের পর এক হত্যাকাণ্ড মানুষকে আতঙ্কিত করে। পরিস্থিতি সত্যিই অস্বস্তিদায়ক, উদ্বেগজনক।

syed-Ishtiaque-Reza 

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।