আস্থা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ
দক্ষিণ আফ্রিকার নারী ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ সফরে না আসা প্রসঙ্গে বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন- ‘বলা যায় আমাদের দু’বোর্ডের (বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ড) সম্মতিতেই এই সফর স্থগিত করা হয়েছে।’ নিজ বক্তব্যের সমর্থনে বিসিবি প্রধানের ব্যাখ্যা- ‘ওরা (দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ড) আমাদের কাছে নিরাপত্তা প্রসঙ্গ নিয়ে রিপোর্ট চেয়েছিল। আমরা বলেছি শুক্রবার আইসিসির দুবাই বৈঠকে মুখোমুখি বসে সমস্যার সমাধান করতে পারি। এসব কথা সামনা সামনি হওয়াটাই ভাল।’ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরিয়ে আনার জন্য শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া আইসিসির এ বৈঠককে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বিসিবি। পাপন খুব জোর গলায় বলেছেন- ‘আইসিসিতে বাংলাদেশের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। আশা করছি আমাদের যুক্তি আইসিসির সভায় গুরুত্ব পাবে।’ বাংলাদেশে বছরের পর বছর ধরে যে আন্তর্জাতিক আসর বসে সেখানে নিরপত্তা ঝুঁকি থাকতে পারে এমন একটা ঘটনাও ঘটেনি, যুক্তি হিসাবে এগুলোকে তুলে ধরার কথা বলেছেন বিসিবি প্রধান।
অস্ট্রেলিয়াকে স্পর্শকাতর উল্লেখ করে, দেশের মানুষকে আবেগে ভেসে না যাওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন বিসিবি প্রধান। একই সঙ্গে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড) ও আইসিসির সঙ্গে আগের মতই সুসম্পর্ক আছে দাবি করে পাপন বলেছেন- ‘ওদের (ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া) বোর্ড প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ডসের সঙ্গে শেষ দিনেও আমার কথা হয়েছে। ওরা আসবে নিশ্চিত ছিল। কিন্তু শেষ দিনে ওদের বোর্ড প্রধান জানালেন, দুঃখিত আমি আর পারলাম না। এছাড়াও আসিসিও আসতে বলেছিল ওদেরকে। আমাদেকে বুঝতে হবে, যা ঘটেছে তা ক্রিকেটের বাইরে। এখানে ওদের (অস্ট্রেলিয়া বোর্ড ও আইসিসি) কিছুই করার ছিল না।’ এটা থেকে স্পষ্ট যে, বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে বিসিবি। এবং এই চ্যালেঞ্জে জয়ী হবেন এমন আশাবাদ বিসিবি প্রধানের।
অস্ট্রেলিয়ার পর প্রোটিয়া নারী ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত করায় বিসিবি যে তৎপর হয়ে উঠেছে সেটাও লক্ষ্যণীয়। বাংলাদেশ সফরে এসেছে পশ্চিম বাংলা অনূর্ধ-১৭ দল। বুধবার বিকেএসপিতে শুরু হয়েছে তিন দিনের প্রথম ম্যাচটি। আগামী নভেম্বর মাসে জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশ সফরে আসছে এটাও নিশ্চিত করেছে বিসিবি। বাংলাদেশের মেয়েরা সফরের আগে পাকিস্তান সফর করে গেছে জিম্বাবুয়ে। তবে নিরাপত্তার ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে পাকিস্তান-জিম্বাবুয়ে সিরিজে কোন ম্যাচ অফিসিয়াল (আম্পায়ার, ম্যাচ রেফারি) পাঠায়নি আইসিসি। পাপনের ভাষ্য মতে, আইসিসির সঙ্গে বিসিবির সুসম্পর্ক আছে আগের মতই। বিসিবির প্রধানের এ বক্তব্যের প্রতিফলন দেখতে চায় আমাদের দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা। আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ-জিম্বাবুযে সিরিজে আইসিসি ম্যাচ অফিসিয়াল পাঠাবে এমনটাই আশা করছে দেশবাসী। আর এটা সম্ভব হলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরানোর চ্যালেঞ্জে খুব বড় একটা বিজয় হবে বিসিবি তথা তথা বাংলাদেশের।
এবারে আসা যাক আইসিসির শুক্রবারের বৈঠকের কথায়। দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনা করে সেদেশের নারী ক্রিকেটারদের বাংলাদেশ সফরে আনা সম্ভব এমনটাই জানিয়েছেন বিসিবি প্রধান। তার ভাষায়-‘দক্ষিণ আফ্রিকা মেয়েদের ১৫ অক্টোবর আসার কথা ছিল। হয়ত কয়েকটা দিন পরে আসবে।’ বহুল প্রতিক্ষীত সেই শুক্রবারের দুবাই বৈঠক শুরু হওয়ার পথে। বড় মুখ করে দেশবাসীকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, আশা করা যায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে রাজি করিয়ে, সেই প্রতিশ্রুতি রাখবে বিসিবি। কয়েকটা দিন কিংবা এক দুই সপ্তাহ পরেও যদি প্রোটিয়া নারী ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে আসে, তাতে বিসিবির গৌরব বাড়বে বৈ এতটুকুনও কমবে না। প্রোটিয়া নারী ক্রিকেট দল সফরে আসলে বাংলাদেশ নিয়ে যে আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে তার পুরোটাই কেটে যাবে। অস্ট্রেলিয়ার না আসাটাও খুব বড় হয়ে উঠবে না। হয়ত দেখা যাবে, বাংলাদেশ সফর নিয়ে নতুন করে ভাববে অতি স্পর্শকাতর (!) অস্ট্রেলিয়াও। শিগগিরই সংক্ষিপ্ত হলেও বাংলাদেশ সফরে সিরিজ খেলতে এক ধরনের চাপও তৈরি হবে অস্ট্রেলিয়ার ওপর।
এদিকে বিপিলের (বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ) দিন-ক্ষণ চূড়ান্ত। বিপিএলের আগের দুটো আসর ছিল বিশ্ব সেরা ক্রিকেটারদের মিলন মেলা। বিশ্ব মানের তারকাদের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের লড়াই বিপিএলের আকর্ষণকে এনে দিয়েছিল ভিন্ন এক মাত্রা। অস্ট্রেলিয়া ও প্রোটিয়া নারী ক্রিকেট দলের সফর বর্জনের কারণে, বিদেশি তারকা ক্রিকেটাররা এবারের বিপিএলে আসবে কি-না তা নিয়ে সংশয়ে অনেকেই। তবে বিপিএল আয়োজক তথা বিসিবি থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হচ্ছে, বিদেশি ক্রিকেটারদেরও বিপিএলে খেলা নিয়ে কোনো শঙ্কা কিংবা সংশয় দেখছেন না তারা। ওয়েস্টইন্ডিজ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা তো বটেই ইংলিশ কিংবা কিউই ক্রিকেটাররাও বাংলাদেশ সফরে আসবে এমন আশার কথাই শুনাচ্ছেন বিপিএল আয়োজকরা। বাংলাদেশ ক্রিকেট কর্নধারদের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দেখার অপেক্ষায় ১৬ কোটি মানুষ।
বিদেশিদের আস্থা ফিরিয়ে আনার চ্যালেঞ্জটা শুধু ক্রিকেটের নয়, এই চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশের গোটা ক্রীড়াঙ্গনের। সামনে নভেম্বর মাসে বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবলে অংশ নিতে বাংলাদেশ সফর করার কথা অস্ট্রেলিয়ার। বাংলাদেশে না আসার জন্য এফসি তথা ফিফার কাছে ধর্ণা দিচ্ছে অস্ট্রেলিয়া ফুটবল ফেডারেশন। স্বভাবতই বাফুফের জন্য পরীক্ষাটা অনেক বড়। বাংলাদেশে আসার জন্য অস্ট্রেলিয়ার ওপর চাপ তৈরি করাটা এখন বাফুফের প্রাণের দায়। তবে এটা বলতে হবে যে এখন পর্যন্ত সঠিক পথেই আছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। সবে ঢাকায় শেষ হয়ে গেল এএফসি অনূর্ধ- ১৯ বাছাই পর্ব। স্বাগতিক বাংলাদেশ ছাড়াও এফসির এই আসরে খেলেছে উজবেকিস্তান, ভুটান ও শ্রীলঙ্কা। এরই মধ্যে শেখ কামাল টুর্নামেন্টের আয়োজন চূড়ান্ত করে ফেলেছে বাফুফে। এই আসরে দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব বড় ক্লাবগুলোকেই আনার পরিকল্পনা নিয়েছে বাফুফে। ভারত থেকে আসার কথা দুই ঐতিহ্যবাহী দল ইস্ট বেঙ্গল ও মোহামেডানের। আর বাংলাদেশের সেরা দলগুলো তো থাকছেই। ফুটবলে একের পর এক আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আয়োজন নির্বিঘ্নে সফলভাবে করতে পারলে, বাংলাদেশ সফর বাতিল করাটা খুব দুঃসাধ্য হয়ে পড়বে অস্ট্রেলিয়ার জন্য। কেন না আইসিসির ওপর যেভাবে প্রভাব বিস্তার করা যায় ফিফার ওপর সেরকম কিছু করাটা ভীষণ কঠিন। তবে বড় পরীক্ষায় সাফল্য পাওয়ার আগে অনেকগুলো ধাপ পেরুনোর চ্যালেঞ্জে জিততে হবে বাংলাদেশকে।
এইচআর/পিআর