ফারুকীর পিঁপড়াবিদ্যা এবং একটি ম্যাসেজ
শেরিফ আল সায়ার
একটা ভিডিও ক্লিপস নিয়ে গল্প বিস্তার করেছে। বর্তমান শহরের হট টপিকগুলো উঠে এসেছে পিঁপড়াবিদ্যায়। এমএলএম কোম্পানির হাত বৃদ্ধির পদ্ধতি, মানুষের সঙ্গে ধোকাবাজি করে লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়া। পরে সরকারের হস্তক্ষেপে সেই কোম্পানি বন্ধ হলে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীর করুণ পরিণতি দেখতে পাবে দর্শক।
ফারুকীর সিনেমার লোকেশন সিলেকশন বরাবরই চমৎকার। ওয়াইড অ্যাঙ্গেল শর্টগুলোতে এ শহরের চিত্রগুলো দেখতে সত্যিই অসাধারণ লেগেছে।
পুরো সিনেমা দুটি চরিত্রকে কেন্দ্র করে এগিয়ে গেছে। রিমা চরিত্রে অভিনয় করেছেন শিনা চৌহান এবং মিঠু চরিত্রে ছিলেন মিঠু। দু’জনের দুর্দান্ত অভিনয় দর্শককে অাটকে রেখেছে। মনে হয়েছে এই দুজনই নিজস্ব চরিত্রগুলোর জন্য পারফেক্ট। এখানে অন্য কাউকে নিয়ে শিনা চৌহানের মতো মডেল চরিত্র এবং মিঠুর মতো সাধারণ বেকার যুবককে ফুটিয়ে তুলতে পারতো না। মিঠুর এটা প্রথম সিনেমা। সেই ক্ষেত্রে মিঠুর ভবিষ্যত ঝকঝকে তকতকে বলেই অান্দাজ করা যাচ্ছে।
সিনেমা অনেক সুড়সুড়ি অাছে। মানুষ নিজেকে কল্পনার জগতে নিয়ে সেটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার গল্পটা ফারুকী সুন্দর করে বলে দিয়েছে। মানুষের যৌন লালসা তার মনের ভেতর বিস্তার করে তারপর সেটাকে কৌশলে বাস্তবে রূপ দেওয়া চেষ্টা মিঠুকে দিয়েই দেখায় ফারুকী। যখন মিঠুর সঙ্গে বউয়ের অভিনয়ের জন্য রিমাকে সে অামন্ত্রণ জানায়। তখন বেড রুমের অ্যাঙ্গেল থেকে ক্যামেরা ধরে রাখা হয়। ক্যামেরা ফোকাস থাকে একটি পুতুলের দিকে কিন্তু কিছুক্ষণ পর মুভ করে বিছানার অাংশিক দেখানো হয়। দর্শক ভাবে এই বুঝি কাঙ্ক্ষিত লালসা মেটাতে সক্ষম হবে মিঠু। কিন্তু দর্শক হতাশ হয়।
সিনেমার অর্ধেক ছিল দুর্দান্ত। গল্পের বিস্তার, চরিত্রগুলোর নাড়াচাড়া হয়েছে অসাধারণ প্রেক্ষাপট নিয়েই। কিন্তু বিপত্তি হয় ইন্টারভেলের মানে বিরতির পর। মনে হলো গল্প খেই হারিয়ে ফেলেছে। মিঠু যেমন সব কিছুর থেকে অাধিপত্য হারাতে থাকে তখন যেন পিঁপড়াবিদ্যার `বিদ্যা` দর্শকের অায়ত্তের বাইরে যেতে থাকে। তারপরের সমীকরণ বোঝার জন্য দর্শককে গভীর ভাবনায় থাকতে হবে। অাসলে কী চলছে পিপড়াবিদ্যায়? ফারুকী কোন বিদ্যা বোঝাতে চাইছেন?
অচেনা নায়ক, নতুন করে অাগত শিনা চৌহান নিয়েও ফারুকী বাংলা সিনেমায় নিজের অাধিপত্য বজায় রাখতে পারে সেটা সাড়ে সাতটার শোতেও হাউজফুল হলই প্রমাণ করে। সত্যিকার অর্থে পিঁপড়াবিদ্যা একটি ম্যাসেজ। ফারুকীকে বহু সাক্ষাৎকারে বলতে শুনেছি, অামাদের নিজের গল্পে সিনেমা তৈরি করতে হবে। না হলে সিনেমা এগুবে না। ফারুকীর পিঁপড়াবিদ্যার প্রেক্ষাপট সিলেকশন এ দেশে ঘটে যাওয়া হাজারো গল্পের একটিই।