বৃদ্ধাশ্রমের জীবন


প্রকাশিত: ০২:১০ এএম, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঈদে সবাই পরিবার পরিজনের সান্নিধ্যে মেতে ওঠেন অানন্দ উৎসবে। কিন্তু বৃদ্ধাশ্রমে যারা বাস করছেন তাদের ঈদ কেমন হল সে খবর কী আমরা রাখি? যে পিতা-মাতা এক সময় সন্তানের ভরসাস্থল সেই পিতামাতাকেই কিনা বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নিতে হয়। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এও এক নিষ্টুর অমানবিক বাস্তবতা। বিশেষ করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যেখানে পিতা-মাতা ভাইবোন সন্তানসন্তুতি মিলে যৌথ পরিবারে সবাই মিলে মিশে বাস করে সেখানে এ ধরনের পিতামাতাকে বয়স হলেই বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হবে-এ কেমন কথা। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে যে পিতা মাতা সন্তানদের মানুষ করেন তারাই কিনা বড় হয়ে পিতামাতাকে ছুঁড়ে ফেলেন। নিরুপদ্রব এবং স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের আশায়। তখন এসব পিতামাতার দুঃখের কোনো অন্ত থাকে না।

অন্য কোনো দিন না হোক ঈদের দিন কিংবা বিশেষ বিশেষ দিনে বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দারা স্বজনদের একটু সান্নিধ্য চান। অপেক্ষা করে থাকেন যদি সন্তান-স্বজনরা একবার আসে। যতই মান অভিমান করুক না কেন নাড়ি ছেঁড়া ধন সন্তানদের পিতামাতা ভুলতে পারেন না কখনোই। সন্তানদের একবার দেখার জন্য ব্যাকুল থাকেন সবসময়। কিন্তু সেই সন্তানরা একবারও বৃদ্ধ পিতামাতার খোঁজ নেয় না। সাধারণ দরিদ্র পরিবারের বয়স্করা যেমন আছেন  বৃদ্ধাশ্রমে তেমনি ধনাঢ্য পরিবারের অনেক প্রবীণ ব্যক্তিরাও আছেন। কিন্তু সবার অবস্থা আজ এক। সবাই অসহায়। বয়সের ভারে ন্যুজ্ব।

প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে একদিন সবাই বৃদ্ধ হবেন। আজ যে টগবগে তরুণ বয়সের ভারে সেও এক সময় ন্যুজ্ব হবে। কিন্তু নির্মম পরিহাস হচ্ছে এই কথাটি কেউ মনে রাখে না। আজ বৃদ্ধ পিতামাতাকে যে সন্তান বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিচ্ছে কাল সেও যে তার সন্তান দ্বারা একই আচরণের শিকার হবে না তার কি কোনো নিশচয়তা আছে?

প্রবীণরা তাদের সমগ্র কর্মময় জীবন নিজ নিজ পরিবার গঠনে ও উন্নয়নে এবং সমাজ জাতির সার্বিক কল্যাণে ব্যয় করে বার্ধক্যে উপনীত হন। কিন্তু এই সমাজ তাদের কথা মনে রাখে না। ফলে শেষ বয়সে তাদের আশ্রয় হয় বৃদ্ধাশ্রমে। স্বাভাবিক নিয়মেই সন্তান সন্ততিরা তাদের পিতামাতার ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালন করার কথা। একান্নবর্তী পরিবারের সংস্কৃতি এটাই।  কিন্তু সময়ের অভিঘাতে পাল্টে যাচ্ছে সমাজ ব্যবস্থা। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে মূল্যবোধও। নানা বাস্তবিক কারণে একান্নবর্তী পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। তাই পিতামাতার স্থান হচ্ছে না সেখানে। অনেক পরিবারেই পিতামাতার ভরণ পোষণকে কেন্দ্র করে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া বিবাদ লেগেই আছে। এ কারণেই ঝুট-ঝামেলা এড়াতে পিতামাতাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাদের জীবন কিভাবে কাটে সে ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়াটাও অনেকে প্রয়োজন মনে করে না।

এই নিষ্ঠুর অমানবিকতা মনুষ্যত্বের পরিচয় বহন করে না। এছাড়া আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধও তা সমর্থন করে না। এমনকি ঈদ কিংবা অন্যান্য বিশেষ দিনেও পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের কোনো খোঁজ নেয়া হবে না- এর চেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। এক্ষেত্রে সরকারেরও কি করণীয় কিছু নেই? পিতা-মাতার ভরণ পোষণেও সন্তানদের বাধ্য করতে আইন প্রণয়ণের কথা ভাবছে সরকার। কিন্তু আইন প্রণয়ন করেই কি পরিস্থিতির উন্নতি করা যাবে? মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, সমাজে ধর্মীয় অনুশাসন এবং নৈতিক, সামাজিক মুল্যবোধের অনুশীলন এক্ষেত্রে একান্ত অপরিহার্য।

সমাজের একজন প্রবীণও যেন অবহেলা অনাদরে জীবন যাপন না করে সেটি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে। এবারের ঈদে স্বজনরা তো বটেই যার যার সামর্থ্য, সাধ্য অনুযায়ী এগিয়ে অাসতে পারেন বৃদ্ধাশ্রমবাসীর জন্য। তারা বেশি কিছু চান না। একটু আদর, ভালোবাসা। এক সময়  যা তারা অকাতরে বিলিয়েছেন । সবচেয়ে ভালো হয় এমন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করা যাতে কাউকে বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে না হয়।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।