মেয়র ঠিক বলেননি, ঢাকাকে আইসিইউতে নিতে হবে


প্রকাশিত: ০৩:১৬ এএম, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক রাজধানী ঢাকার বর্তমান অবস্থাকে হাসপাতালের আইসিইউতে থাকা রোগীর সাথে তুলনা করেছেন। বোধ করি মেয়র সাহেব আইসিইউ’র মানে জানেন না। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র অর্থাৎ আইসিইউতে মরণাপন্ন যে কোনো রোগীকে নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করা হয়। প্রশ্ন হলো ঢাকাকে কি নিবিড়ভাবে পরিচর্যা করা হচ্ছে? রাজধানীর প্রায় দুকোটি মানুষই নেতিবাচক জবাব দিবেন। কারণ ঢাকা শহর মরণাপন্ন হলেও তার চিকিৎসা হচ্ছে না। এই শহরের চিকিৎসা দরকার। এই শহরকে সত্যিকার অর্থেই যদি আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া যায় তাহলে নিবিড় পরিচর্যায় এই ঢাকা সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠতে পারে প্রাণের ঢাকা।     

এরই মধ্যে বসবাসের অযোগ্য শহর হিসেবে ঢাকা শহর বিশ্বরেকর্ড গড়েছে। পৃথিবীর আর কোনো শহরই এত নিম্নমানের নয়। যারা রেকর্ডের সূচক নিয়ে কাজ করেন মানে যারা নানা সূচক দিয়ে র্যাংকিং করেন তারা যদি আর একটু খোঁজ নিতেন তাহলে পরিকল্পনা করার দিক দিয়ে যে ঢাকা বিশ্ব রেকর্ড করেছে সেই খবরও বের হয়ে আসতো।  উত্তরের মেয়র ঠিকই বলেছেন রোগী মরে যাচ্ছে আর আমরা শুধু গবেষণা করছি।

আমরা কি বছরের পর বছর পরিকল্পনাই করে যাবো? নাকি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব? দেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৪ বছর হয়ে গেছে,তারপরও আমরা শুধু পরিকল্পনাই করে যাচ্ছি। বাস্তবায়ন আর হচ্ছে না। ঢাকা শহরের মাস্টারপ্ল্যান হয়েছিল ১৯৫৩ সালে। এরপর ঢাকার উন্নয়নে প্রথম মহাপরিকল্পনা নেয়া হয় ১৯৬০ সালে। ১৯৯৫ সালে ২০ বছর মেয়াদের পরিকল্পনাও নেয়া হয়। এর মেয়াদ শেষ হতে চললো। এই ২০ বছরে আমরা এগুলাম না পেছালাম? বোধকরি এর জবাব দিতে হবে না। এখন আবার ২০ বছরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই পরিকল্পনায় সহায়তা দিবে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক। আর বাস্তবায়নকারি সংস্থা রাজউক। ২০৩৫ সালে এর মেয়াদ শেষ হবে। যখন ঢাকার বাসিন্দা হবে ২ কোটি ৬০ লাখ।

যে কোনো কিছু করতে পরিকল্পনা লাগে। নগরায়ণে আরো বেশি পরিকল্পনার দরকার হয়। এতোসব পরিকল্পনার মাঝে ডিটেইল্ড এরিয়া প্লান বা ড্যাপও প্রণয়ন করা হয়েছিল। সেটা কোনো কাজে লাগলো না। যাদের জন্য এই পরিকল্পনা করা হলো তাদেরই কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। অর্থাৎ জনগণকে সঙ্গে নিয়ে যে এইসব পরিকল্পনা করতে হয় সেই জ্ঞানটুকুই আমাদের পরিকল্পনাবিদদের নেই। আমরা কী জানি না এই ঢাকা শহররের রোগ কী কী, কোন ধরনের? হাজার হাজার পরিকল্পনা করে আমরা আমরা রোগ শনাক্ত করেছি। রোগীরও পথ্য কী হবে তাও জানি। চিকিৎসকও পর্যাপ্ত আছেন। তাহলে চিকিৎসা হচ্ছে না কেন?

এতোগুলো প্রতিষ্ঠান এতো এতো পরিকল্পনা করে কাজের কাজ কী করছে? এই শহরে যদি রাজউক না থাকতো, ওয়াসা, ডেসা, তিতাস না থাকতো, যদি কোনো সিটি করপোরেশন না থাকতো তাহলেওতো বসবাসের সবচে অযোগ্য শহরই হতো। তাহলে জনগণের করের টাকায় ওইসব প্রতিষ্ঠান পোষার দরকার কী। দক্ষিণের মেয়র বলেছেন, মানুষের সেবা দিতে ৫৬টি দফতর রয়েছে। কিন্তু একটির সঙ্গে অন্যটির কোনো সমন্বয় নেই। এই কথা তার বাবার আমলেও শুনেছি। তিনি মেট্রো গভর্নমেন্ট বলতে বলতে গলা শুকিয়ে ফেলেছেন। কেউ তার কথা কানে নেয়নি। নিবেও না। সরকার কী এমনিতেই আরেকটি সরকার বানিয়ে দেবে?  আর আমলারাই বা তা করতে দিবে কেন? তাহলে ওই যে ৫৬ টি সংস্থার কথা বললেন তারা তো মেয়রের অধীনে চলে আসবে। এটা যে করতে দিবে না সেটা বুঝেও কেন ওই দাবি তুলছেন। নির্বাচনের আগে কী জানতেন না আপনাদের সীমাবদ্ধতা কতোটুকু? তখন এত্তো এত্তো প্রতিশ্রুতি কেন দিয়েছিলেন মেয়ররা? শুধু দক্ষিণের মেয়রের একটি কথা মনে করিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেছিলেন, নির্বাচিত হলে মেয়াদের প্রথম বছর বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে কাজ করবেন। দ্বিতীয় বছর থেকে ঢাকাকে আন্তর্জাতিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলবেন। মেয়র সাহেব বাসযোগ্য ঢাকাই করেন, আন্তর্জাতিক নগরী করার স্বপ্ন আমরা ঢাকাবাসীরা দেখি না।

আর একজন আছেন আমাদের পূর্তমন্ত্রী। তিনিও দেখলাম বললেন, ঢাকা রিকশার নগরীতে পরিণত হয়েছে। ফুটপাত দিয়ে হাঁটার উপায় নেই, ছোট ছোট দোকানে দখল হয়ে গেছে। নগরবাসী ময়লা-আবর্জনা ফেলে খাল ভরাট করছে। ধানমণ্ডি বনানী আর গুলশানে আবাসিকের জন্য অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। কিন্তু সেখানে সবাই বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করেছেন। আরে মন্ত্রী সাহেব আপনি কাকে এইসব কথা বলছেন। এত অনুমোদন কী আমরা ঢাকাবাসী দিয়েছি। খাল ভরাট করে অট্টালিকা বানানোর অনুমোদন কী আমরা দিয়েছি? দিয়েছেতো আপনার প্রতিষ্ঠান রাজউক। ব্যবস্থা তাদের বিরুদ্ধে না নিয়ে আপনিও অভিযোগ করে গেলেন। এভাবে আর কতো গা বাঁচাবেন!

বক্তৃতা না দিয়ে আমাদের ঢাকায় শান্তিতে থাকতে দিন। আমরা বিশ্বের এক নম্বর শহর হতে চাই না। মিনিমাম বাসগযোগ্য শহর চাই। আপনারা যদি না পারেন, তো, যারা পারবে তাদের ভাড়া করে আনেন। ঢাকার মানুষতো কর দিচ্ছে। দরকার হয় আরো কর দিবে যদি ওই আস্থায় আনতে পারেন শহরটাকে বসবাসযোগ্য করে তুলতে পারবেন। আপনারা যারা মন্ত্রী হয়েছেন, যারা ওইসব ৫৬টা প্রতিষ্ঠান চালান বা যেসব নগর বিশেষজ্ঞ টকশোতে গলাবাজি করেন তারা বাতিল হয়ে গেছেন। তাদের কর্মপরিকল্পনায় কাজ হচ্ছে না, এটাতো পরিষ্কার। তাই খোল নালচেই পাল্টানো দরকার। পৃথিবীর যেসব স্থপতি বড় বড় শহরের পরিকল্পনা করেছেন তাদেরকে হায়ার করে আনুন। ঢাকার ওপর চাপ কমান। ঢাকার বাইরে মেডিকেল সিটি, ডিজিটাল সিটি, এডুকেশন সিটি, গার্মেন্টস সিটি, ইন্ডাস্ট্রি সিটি, সিনেমা সিটি যতো সিটি আছে তৈরি করুন। সবকিছুই ঢাকা শহর কেন্দ্রিক করে ভীড় আর বাড়াবেন না। ঢাকাকে আইসিইউতে ভর্তি করেন। নিবিড় পরিচর্যা করুন। নয়তো এই শহরের মৃত্যু হবে। মৃত নগরী হওয়ার আগে আমি নিশ্চিত ঢাকাবাসী রুখে দাঁড়াবে।

pintu

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।