সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার চ্যালেঞ্জ
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসার দাবিদার। সূচকগুলোর মধ্যে সাফল্যের পাল্লাই ভারি হয়েছে। আটটি লক্ষ্যের মধ্যে অনেকগুলোতেই এসেছে সফলতা। এই সফলতা ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন বেশকিছু ক্ষেত্রে আরও উন্নতি। বিশেষ করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দুর্নীতিবন্ধ, সুশাসন নিশ্চিত ইত্যাদি। এটি এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আত্মনিয়োগ করাই এখন সময়ের দাবি।
বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বেশকিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে এমনটিই বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্যের গভীরতা কমানো, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন, জেন্ডার সমতা এবং নারীর ক্ষমতায়ন, শিশুমৃত্যু কমানো, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি/এইডস ও অন্যান্য রোগব্যাধি দমন এবং পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ। তবে খারাপ অবস্থায় রয়েছে সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে। বাকি চারটির মধ্যে একটি পূরণের কাছাকাছি ও অন্যগুলোও সঠিক পথেই রয়েছে বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
এ কথা ঠিক বাংলাদেশ সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার দিকে অনেকদূর এগিয়েছে। তবে এ উন্নয়ন এখনো কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছেনি। যদিও সময়সীমা পার হয়ে যায়নি। তবুও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনও বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। দারিদ্র্যের হার কমলেও দেশ থেকে পুরোপুরি দারিদ্র্য দূর করা যায়নি। এখনো বহুসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। এক্ষেত্রে বেকারত্ব এখন প্রধান বাধা। দেশে পাহাড়সম বেকারত্ব। শিক্ষিত ও তরুণ জনগোষ্ঠীর এক বিশাল অংশের যদি কোনো কাজ না থাকে সেটি কোনো কাজের কথা নয়। বেকারত্ব থেকেই আসে হতাশা। আর হতাশা থেকেই নানা নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্ম হয়। সন্ত্রাস, মাদকসমস্যাসহ সমাজে অস্থিরতা দেখা দেয়।
এ কারণে বেকারত্ব কমিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই। দেশে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি দক্ষ জনবল তৈরি করে কিভাবে সেই জনশক্তি রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যায় সেটি নিয়েও ভাবতে হবে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আরও দুই বাধা হচ্ছে অপুষ্টি ও পরিবেশ দূষণ। এখনও বিপুলসংখ্যক মানুষের পুষ্টি চাহিদা মিটছে না। এক্ষেত্রে খাদ্যে ভেজাল একটি বড় সমস্যা। এছাড়া উন্নয়শীল দেশ হিসেবে সবচেয়ে পরিবেশ ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। উন্নত বিশ্বের কার্বন নিঃসরণ সমস্যার কারণে যেমন আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি তেমনি নিজেরাও খাল-বিল-নদী নালা ভরাট করে পরিবেশের বারোটা বাজাচ্ছি।
জলবায়ূ পরিবর্তনজনিত ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশ দূষণে যে সমস্ত দেশ ভূমিকা রাখছে তাদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করাটা খুব জরুরি। পাশাপাশি নিজেদেরও পরিবেশ দূষণ বন্ধে সচেতন হতে হবে। সমুদ্রউপকূলবর্তী দেশ হিসেবে আমরা এমনিতেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছি। উষ্ণায়নের ফলে সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে গেলে দেশের ভূখণ্ডের এক বিশাল অংশ তলিয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো রাজনৈতিক দুর্যোগও আমাদের দেশে কম নয়। রাজনৈতিক বিরোধিতা, অনৈক্য, সন্দেহ, অবিশ্বাস এক অস্থির অবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছে। এই অবস্থা কখনোই উন্নয়ন সহায়ক হতে পারে না। এছাড়া দুর্নীতি, সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ঐকমত্য অত্যন্ত জরুরি। যে সমস্ত উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতি লাভ করে আমরা গোটা বিশ্বের প্রশংসা কুড়াচ্ছি এর সবই ভণ্ডুল হয়ে যেতে পারে যদি টেকসই উন্নয়নের মতো পরিবেশ পরিস্থিতি বজায় রাখা না যায়। এই লক্ষ্যে সবাইকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।
এইচআর/এমএস