বাচ্চাদের আন্দোলন : বিএনপির উল্লাদের আফসোস!


প্রকাশিত: ১০:৫৯ পিএম, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

অর্ধযুগেরও বেশি সময় হতে চললো বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন করে চলেছে। এতে সরকারেরতো কোনো ক্ষতি হয়ইনি বরং ক্ষয়িষ্ণু হতে চলেছে বিএনপি। আত্মউপলব্ধি করারও সময় পার হয়ে গেছে। কখনোই চিন্তা করলো না দলটি কি পেলো আর কি হারালো। সাম্প্রতিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভ্যাটবিরোধী আন্দোলনে তাদের আফসোস আরো বেড়ে গেল- ইস যদি এমন করে আন্দোলন করা যেতো! সেটা বুঝতেই অনেকখানি সময় পার হয়ে গেছে। শেষ পর্যন্ত ওই টিন এজারদের আন্দোলনে সমর্থন দিয়ে কিছু একটা করতে চেয়েছিল বিএনপি। আর সুযোগ হয়ে উঠেনি। ছাত্ররা রাজনীতিকে পাত্তা দেয়নি। সরকারও তাদের দাবি মেনে নিয়েছে।

এই বাচ্চা ছেলেপেলেদের কাছ থেকে বিএনপি আন্দোলনের কৌশল শিখে নিতে পারে। প্রথমত: তাদের দাবি ছিল যৌক্তিক। শিক্ষায় ভ্যাট আরোপ চলবে না। এই দাবিতে সমর্থন নেই, অর্থমন্ত্রী ছাড়া এমন কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। ব্যাপকসংখ্যক মানুষের দাবি নিয়ে যখন বাচ্চারা রাজপথে নামলো তারা খুবই শান্তিপূর্ণভাবে দাবি দাওয়া জানালো। যদিও রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ চরমে ওঠে গিয়েছিল। এই বাচ্চারাতো এদেশেরই। তারা শিখেছে তাদের পূর্বসূরিদেরই কাছ থেকে। রাজপথে না গেলে দাবি আদায় হয় না। আবার তারা পূর্বসূরিদের শিখিয়েছে রাজপথে আগুন জ্বালানো আর ভাংচুর ছাড়াও আন্দোলন হয়, দাবি আদায় হয়। দাবি আদায়ের পর আবার তারা দুঃখ প্রকাশ কর্মসূচিও পালন করেছে। যেখানে তারা রজধানীবাসীর প্রতি দুঃখ প্রকাশ করেছে। সরকারকে ধন্যবাদ দিয়েছে।

এখন এদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ওইসব টিন এজারদের কাছ থেকে কতোটুকু শিক্ষা নিতে পারে সেটাই দেখার বিষয়। বিশেষ করে এখন আন্দোলনের কর্মসূচি কিরুপ হবে, এর ধরন পদ্ধতি ও কৌশল নির্ধারণে বিএনপিকেই নতুন করে ভাবতে হবে। জ্বালাও পোড়াও আন্দোলনের যুগ শেষ এটা মানতে হবে। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন, নিশ্চয়ই তার গুণধর পুত্রের সঙ্গে এ বিষয়টির ফয়সালা করবেন। ছাত্রদের আন্দোলনে যুক্ত না হয়ে ছাত্রদলও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছে। বিএনপি আন্দোলনে সমর্থন দিলেও তারা ছাত্রদের সঙ্গে রাজপথে না নেমে বুদ্ধিমানেরই পরিচয় দিয়েছে। যদিও বিএনপির বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই এই আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হয়ে লাভের গুড় খাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন।

কিন্তু এরইমধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলাফল নিয়ে বিএনপির বুদ্ধিজীবীদের যে আফসোস দেখতেছি তাও উল্লেখযোগ্যভাবে বিশ্লেষণযোগ্য। ধরা যাক, গত মঙ্গলবারের কথা। সেদিন জাতীয় প্রেসক্লাবে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান ছিল। আলোচক প্রায় সবাই ছিলেন আওয়ামী লীগ বিরোধী বুদ্ধিজীবী। তারা এই পরিচয়টা সবাই অবশ্য স্বীকার করেন না। আচরণে আবার এর বাইরে যেতে পারেন না। তারা সবাই এককালের বাম। তাদেরই একজন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ভ্যাট বিরোধী আন্দোলনের কথা তুলে তিনি বললেন, বাচ্চা ছেলেমেয়েরা আন্দোলন করে সরকারের সিদ্ধান্ত পাল্টে দিয়েছে, অথচ পাঁচকোটি লোকের সমর্থন নিয়ে বিএনপি কাপড়-চোপড় নষ্ট করেছে।

কী আফসোস এই উল্লা সাহেবের!  বিএনপির আন্দোলনে পাঁচ কোটি মানুষের সমর্থনের হিসেব কই পেলেন তিনি? হতে পারে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে বিএনপিকে পাঁচ কোটি মানুষ সমর্থন দেয়। কিন্তু এই উল্লা সাহেবরা কী জানেন না পেট্রল বোমা দিয়ে নারী শিশুসহ প্রতিদিন সাধারণ মানুষকে মারার আন্দোলনে পাঁচজন মানুষেরও সমর্থন ছিলো না। এইসব বুদ্ধিজীবীরা যতদিন বিএনপির আশেপাশে থাকবে ততদিন এই দলটি যে একদা বিপুল জনসমর্থনপুষ্ট ছিল তা ইতিহাস হয়ে যাবে। ওই প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আরেক আলোচক ছিলেন মাহফুজ উল্লা। তার কথায়ও ছিল একই সুর। উল্লেখযোগ্যভাবে প্রণিধানযোগ্য এ দুজনই স্বৈরাচার এরশাদের সুবিধাভোগী ছিলেন। এখন বিএনপিতে যোগ না দিলেও বিএনপির অনুষ্ঠানগুলোতে তারা হাজির থাকেন। বিএনপিকে সাংগঠনিক পরামর্শ দেন। টকশোতে এসে সরাসরি বিএনপি-জামাতের পক্ষে কথা বলেন। বিএনপি নেতাদের শিখিয়ে দেয়া বুলি টকশোতে আওড়ান। এই উল্লারা এখন বিএনপি-জামাতের ওপর ভর করায় যে বিএনপির কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়েছে তা ওই বাচ্চা ছেলে-মেয়েরাও জানে। এটা বিএনপির নেতৃত্ব কবে বুঝবেন? যতো তাড়াতাড়ি বুঝবেন ততোই দেশের মঙ্গল।

pintu

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।