মোবাইল সেটে জীবনের কত গল্প


প্রকাশিত: ০২:৫১ এএম, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫

আড্ডা চলছে, তুমুল আড্ডা। উচ্চ হাসির ঝংকার কাঁপিয়ে দিচ্ছে আশপাশ। কিন্তু হঠাৎই সব এলোমেলো। সবাই স্তব্ধ। একজন আরেকজনের মোবাইল হাতে নিয়ে দু’একটি কমান্ড দিতে না দিতেই যার মোবাইল তার চিৎকার, কেন ধরলে মোবাইল? বহুদিনের বন্ধুত্ব বুঝি যায় যায়। ঘটনার আকস্মিকতায় বাকি সবাই বিস্মিত। সেদিনের মতো গল্প আড্ডার সমাপ্তি। কিছুটা মন খারাপ করেই সবার চলে যাওয়া।

“সব কিছুতেই সৌজন্য থাকতে হয়, মোবাইল ফোনে অনুমতি ছাড়া হাত দেয়া, সে তুমি যত কাছের মানুষ হও, অসৌজন্যমূলক আচরণ,” বলছে রাগান্বিত বন্ধু।   
 
আসলে এমনটাই ঘটে। একজন নারী তার পুরুষ বন্ধুর শরীর ছুঁতে পারে, পুরুষ পারে অন্য নারীটির শরীর ছুঁতে। কিন্তু কেউ কারও মোবাইল ছুঁতে পারবে না। কারণ মোবাইলে যে লুকিয়ে থাকে হাজারো মুহূর্ত, হাজারো আবেগঘন সময়ের ইতিহাস, চাওয়া-পাওয়ার একান্ত ব্যক্তিগত টুকরো-টুকরো অভিব্যক্তি।

মোবাইলের কললিষ্ট যেমন মনে করিয়ে দেয় কতশত মুখ। তেমনি এক একটি এসএমএস মানে এক একটা দীর্ঘ কাহিনির সারাংশ, কত অভিমানের অভিব্যক্তি, হৃদয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া কত অনুচ্চারিত কথা, কত পাওয়া না পাওয়ার স্মৃতি।

আমি দেখেছি, আপনিও দেখবেন, বুঝবেন। মোবাইল থেকে অনেক সময় পুরোনো এসএমএস ফেলতে গিয়ে কত মুহূর্ত, কত অনুভূতি, কত স্মৃতি মুছে ফেলতে হয়। কত মুখ ভেসে উঠে আসে চোখের সামনে। স্ত্রী, কত ছেলেবেলার বন্ধু, কত বড় বেলার বান্ধবী, কত সহকর্মী, কত শুভাকাঙ্খীর মুখ ভেসে উঠে। এক একটি এসএমএস একটি গল্প। কত সুখের মুহূর্ত, কত বেদনার কাহিনী, কত জটিলতার প্রতিচ্ছবি। এসব এসএমএসে থাকে কত হেরে যাওয়ার কথা, কত পাওয়ার আনন্দ, কত বেঁচে যাওয়ার গল্প, কত মান-অপমানের কাহিনী।

আমাদের কাজ, আমাদের বেঁচে থাকা, বেঁচে থাকায় কতনা সম্পর্ক, কত অসম প্রেম, সব চরিত্রই হাতের মুঠোয় মনে করিয়ে দেয় মোবাইল ফোন, তার মেসেঞ্জার বা এসএমএস। তাই বন্ধুত্বে যাকিছু শেয়ার করিনা কেন, মোবাইল নামের যন্ত্রটি নয়।  

এই মোবাইল আর তার ইন্টারনেটের সংযোগে যাদের সাথে পরিচয় হয়, তাদের অনেকেই কত বিশিষ্টজন, অনেকেই প্রেমময়, আবার অনেকেই উপর-চালাকিতে ভরপুর স্মার্ট মানুষ। কতজনের কত কথা হারিয়ে যায়, কিন্তু কিছু কথা রেখে দেয়া হয়, ফেলতে গিয়েও ফেলা যায় না।   

তথ্য-প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষে মানুষে যোগাযোগ বেড়েছে, ফেসবুক, টুইটার থেকে এসএমএস, কি নেই মোবাইলে! দূরের মানুষ কাছে আসছে, কাছের মানুষ কাছে থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

কাছের মানুষ যা বলতে পারছে না, অনায়াসেই দূরের মানুষ বলে দিচ্ছে সেই কথা। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এই দুনিয়ায় বড় বন্ধু যে এই মোবাইল। কত প্রাণের কথা, প্রেমের কথা, কত জরুরি বাণী, কত শত্রুতা মিত্রতার কথা থাকে এখানে। সবইতো ব্যক্তিগত, শেয়ার করার জন্য নয়।

তবে কি মানুষ কিছুটা অসৎও হয়ে যাচ্ছে? একজনকে দেয়া কথা লুকিয়ে রাখছে আরেকজনের কাছে? কিংবা খুব গোপন কথা কি প্রকাশ করে দিচ্ছে অনাকাঙ্খিত ব্যক্তির কাছে বা সময় ও সুযোগ বুঝে এই বাণীগুলো অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে? পরিবারের ভিতরেও কি তৈরি হচ্ছে অবিশ্বাসের দেয়াল?

মোবাইল ফোন আসলে খুব বেশি ব্যক্তিগত। প্রযুক্তির এই আবিষ্কার ব্যক্তিগত জীবনকে আরো বেশি ব্যক্তিগত করে সময়ের জীবনকে গাঁথছে নতুন করে। মোবাইল ফোনের প্রতিটি কল লিষ্ট, প্রতিটি এসএমএস বা ম্যাসেঞ্জারের কথা ভালবাসা আর বিরহের কথা, জিতে যাওয়া বা হেরে যাওয়ার গল্প, আনন্দ-বিষাদের খণ্ড খণ্ড উপাখ্যান।



এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।