ব্যান্ডউইথের মূল্যহ্রাসের সুফল ভোক্তা পর্যায়েও পৌঁছাক


প্রকাশিত: ০৬:০৬ এএম, ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৫

ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে। ফলে বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার কেবল শ্লোগানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি।  ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্যতম অনুষঙ্গ ইন্টারনেট। দেশে ব্যাপকসংখ্যক মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী রয়েছে। তারা ইন্টারনেট ব্যবহার করায় এর প্রসার ঘটেছে প্রান্তিক পর্যায়ে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ইন্টারনেটের দাম এখনো সাধারণ ভোক্তাদের নাগালের বাইরে। আশার কথা হচ্ছে, সেপ্টেম্বর মাস থেকে ব্যান্ডউইথের দাম কমানো হয়েছে। ১ এমবিপিএস ইন্টারনেটের দাম ১ হাজার ৬৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৬২৫ টাকা করা হয়েছে। তবে শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে, ন্যূনতম ১০ গিগাবাইট ব্যান্ডউইথ কিনলে এই মূল্য পাওয়া যাবে। এছাড়া এই মূল্য কেবল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে কার্যকর হবে। কিন্তু ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (আইএসপি) বা মোবাইল অপারেটরগুলোর কেউই এই কম দামের সুফল গ্রাহককে দিতে পারছে না।এরফলে ভোক্তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। ভোক্তা পর্যায়ে যদি মূল্যহ্রাসের সুফল না পৌঁছায় তাহলে দাম কমানোর কোনো মানে হয় না।  

বিশেষজ্ঞের মতে, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)এর দুর্বল ভূমিকার কারণেই গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমছে না। রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থার মতেই  বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা পাঁচ কোটির বেশি। এই বিপুলসংখ্যক গ্রাহক যাতে ন্যায্যমূল্যে ইন্টারনেট সেবা পায় সেটি নিশ্চিত করার দায়িত্বও বিটিআরসির। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের দায়িত্বহীনতা বরদাশত করা যায় না।

দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, রাষ্ট্রায়ত্ত এই সংস্থাটির আচরণে সন্তোষ্ট নন গ্রাহকরা। ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে তারা প্রতিযোগিতামূলক বাজার ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আশাব্যঞ্জক ভূমিকা রাখতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, টেলিটককেও দাঁড়াতে দিচ্ছে না বিটিআরসি। বেসরকারি মোবাইল অপারেটরদের অনৈতিক সুবিধা দিতেই টেলিটককে নানা কায়দায় দমিয়ে রাখা হয়েছে। যেমন করে দোয়েল ল্যাপটপকে মানুষের কাছে পৌঁছতে দেওয়া হয়নি। এক্ষেত্রেও একই নীতি নিয়েছে বিটিআরসি। প্যারালাল সরবরাহ নিশ্চিত করে প্রতিযোগিতামূলক  বাজার সৃষ্টির জন্যই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান রাখা হয়। সেক্ষেত্রে সেই প্রতিষ্ঠানই যদি মুনাফার দিকে ঝুঁকে তাহলে সাধারণ ভোক্তারা সেবা পাবে কোত্থেকে?

ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো স্বচ্ছতাও নিশ্চিত করা যায়নি। দাম নিয়ে কথা তো রয়েছেই, কতটুকু ইন্টারনেট ব্যবহার করা হল, মেয়াদ শেষে বাকি থাকলে তা পরবর্তী বান্ডল বা প্যাকেজের সঙ্গে যুক্ত করার বিষয়ে যুক্তিসঙ্গত কোনো নিয়ম মানে না মোবাইল অপারেটরগুলো। এ ব্যাপারেও উদাসীনতা রয়েছে বিটিআরসির। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এ বিষয়ে জাগো নিউজকে বলেছেন, তিনি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যানকে এনটিটিএন (ন্যাশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক), আইএসপি (ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) এবং মোবাইল অপারেটরদের নিয়ে বসে দ্রুত গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রীর এই আশ্বাসে আমরা আশান্বিত হতে চাই । তবে শুধু আহ্বান জানালেই হবে না। সেটি যাতে কার্যকর হয় সে ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

মনে রাখতে হবে তথ্য প্রযুক্তির সেবা জনসাধারণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বর্তমান সরকারের যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেটি তখনই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে যখন সেবার মূল্য ব্যবহারকারীর নাগালের মধ্যে থাকবে। 

# ব্যান্ডউইথের দাম কমলেও সুফল পাবেন না গ্রাহকরা

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।