ক্ষমতার রোগ ও মানবাধিকার কমিশন


প্রকাশিত: ০২:৩৮ এএম, ২৯ আগস্ট ২০১৫

হাজারীবাগ থানার ছাত্রলীগ সভাপতি আরজু মিয়া  র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের ঘটনায় কিশোর রাজাকে পিটিয়ে হত্যার বিষয়টি আড়ালে চলে গেছে বলেই মনে হচ্ছে। নিহত কিশোরের পরিবার এ হত্যাকাণ্ডের বিচার পাবে কিনা তা নিয়ে শঙ্কা আছে। এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে যে রাজা হত্যায় জড়িত কয়েকজন তাদের ‘ভিটেমাটি ছেড়ে যাওয়ার’ হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবারটি।

স্থানীয় সাংসদ আরজু হত্যার প্রতিবাদ করেছেন। কিন্তু এই কিশোরের পরিবারটিও তার এলাকার। তাদের খবর কি তিনি নিয়েছেন? হয়তো এই প্রশ্ন ভাল লাগবে না অনেকের কাছে।

আসলে এমনটাই হয়। মানুষ কোনো আপন কাজের ব্যাপারে প্রশ্ন শুনতে চায় না। বিশেষ করে ক্ষমতা যাদের আছে, তারা যেসব কাজে অভ্যস্ত হয়, তার সম্পর্কে প্রশ্ন কেউ তুলুক তা চায় না। আবার আমরা যারা আমজনতা তারাও অভ্যস্ত হয়ে উঠি, যা কিছু ঘটে, যা কিছু বলে ক্ষমতাবানরা তাকেই  বিনা প্রশ্নে, বিনা তর্কে স্বাভাবিক, অমোঘ, এমনকী শাশ্বত বলে মেনে নেই।

কথায় কথায় আমরা বলি মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে। বিরোধী দলে থাকলে যতটা বলি, সরকারে গেলে তার ছিটেফোঁটাও বলি না। আর সাধারণ জনতা? তারাতো মেনে নিয়েছে সবই অদৃষ্ট। মানবাধিকার কমিশন বলে যে একটি প্রতিষ্ঠান আছে তার কাজ কি সেটাই বা ক’জন জানে?

আইনের শাসনের কথা সর্বত্র উচ্চারিত। কিন্তু জানতে মন চায় সেই শাসন কখন বাংলাদেশে ছিল? দেশের আইনে ব্যক্তির অধিকার যাতে সুরক্ষিত থাকে, অধিকার ভঙ্গ করলে যাতে অপরাধীকে শাসনে আনা হয় এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে শাস্তি দেয়া হয়, তার জন্যই প্রশাসনিক এতো এতো আয়োজন। আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ এবং বিচারবিভাগ, এই তিনটি স্তম্ভের উপরে শাসনতন্ত্র দাঁড়িয়ে আছে। এই তিনটি স্তম্ভ যদি যার যার স্থানে ঠিক থাকতো তাহলে হয়তো মানবাধিকার নিয়ে এতো কথা উঠতোনা। তাই মানবাধিকার কমিশনের প্রয়োজন আছে, আরো বেশি করে প্রয়োজন আছে তার সক্রিয়তা।

বাংলাদেশে এখন অবধি মানবাধিকার ব্যুরো বা কমিশনের কাজ গৌরবময় নয়। বিবিধ ঘটনায় চেয়ারম্যানের প্রতিক্রিয়া আর বক্তৃতা ভিন্ন এই কমিশনকে কাজের কাজ করতে খুব একটা দেখা যায় না। হয়তো বশংবদ মানবাধিকার কমিশন বলার সময় এখনো আসেনি, কিন্তু একথাতো সত্য যে সরকার একটি অনুগত মানবাধিকার কমিশন চায়। আগের সরকার চেয়েছে, বর্তমান জমানাতেও এই চাওয়া।

মানবাধিকার কমিশন কোনো আদালত নয়। কমিশন মানবাধিকার লংঘনের জন্য সরাসরি কাউকে শাস্তিও দিতে পারে না। কিন্তু কমিশনের যথাযথ সক্রিয়তা নিশ্চয়ই অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করায় এবং অপরাধ কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। সঠিক তদন্ত ও বিচার বিশ্লেষণ করে কমিশন চাইলে শাস্তির সুপারিশ করতে পারে। আমারতো মনে হয় এই ক্ষতিপূরণের সুপারিশই হওয়া উচিৎ কমিশনের মূল কাজ।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের এখন পর্যন্ত কর্মকাণ্ডে মনে হতে পারে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে কমিশনের প্রতিবেদন চাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই। কমিশনের চেয়ারম্যানও প্রায়ই বলে থাকেন “কমিশনের দাঁত নেই, জিহ্বা আছে”। কিন্তু মানুষের প্রত্যাশা কমিশনের কাছে অনেক বেশি।

বিগত সময়গুলোতে মানবাধিকার কমিশন যদি প্রতিটি ঘটনায় রিপোর্ট দিয়ে শাস্তির সুপারিশ করে যেতো, তাতেও সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর টনক নড়তো। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় নজির হয়ে থাকতো কমিশন। আর কিছু না হোক, সরকারের দিক থেকে সতর্কতা লক্ষ করা যেতো আর কমিশনের প্রতিও আম জনতার মানুষের আস্থা সৃষ্টি হতো।

রাজনীতির চরিত্রই এমন যে, তা শাসন ব্যবস্থায় যাদের বসায় তারা নাগরিকের অধিকার রক্ষার পরিবর্তে অধিকার হরণেই ব্যস্ত থাকে বেশি। এটা এমন এক অসুখ যা থেকে কেউ বের হতে পারেনা, তা সে বিএনপি হোক বা বর্তমানের শাসক গোষ্ঠি হোক। এই রোগ ক্ষমতার রোগ। ক্ষমতায় থাকলে এই রোগে সবাইকে ছোট করে ভাবা যায়, নিজেদের ছাড়া। সাধারণ মানুষের যে অসহায়ত্ব তা বাড়ে এমন রোগের বিস্তারে। মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠান এই ব্যাধির প্রতিষেধক স্বরূপ। সেখানেই তার গণতান্ত্রিক গুরুত্ব।



এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।