প্রাণহীন বাঘের প্রাণ কেড়ে নেওয়ার দায় কার


প্রকাশিত: ০৭:১৭ এএম, ২২ আগস্ট ২০১৫

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সুন্দরবন হোটেলের সামনে স্থাপিত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ভাস্কর্যের নিচে চাপা  পড়ে একজন ভ্যান চালকের মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। মানুষের অস্বাভাবিক কিংবা অপমৃত্যু যে কত প্রকার তার একটি উদাহরণ যেন এই মৃত্যুটি। কর্তৃপক্ষীয় অবহেলাজনিত দুর্ঘটনায় দেশে অনেক দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। কিন্তু বাঘের নিষ্প্রাণ এই ভাস্কর্যটি যে কারও প্রাণ কেড়ে নিবে সেটি ছিল ভাবনারও অতীত। গত শুক্রবার ভোরে ঘটেছে সেটিই। বাঘটি না হয় প্রাণহীন কিন্ত যারা এটি বসিয়েছে, রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল যাদের ওপর তাদের কি কোনো দায়দায়িত্ব নেই?

মো. আলী নামে এক ভ্যানচালক বৃষ্টি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাঘের ভাস্কর্যের নিচে নিজেকে পলিথিনে মুড়িয়ে ভ্যানের ওপর শুয়েছিলেন।  এ সময় হঠাৎ করে ২৫ মণ ওজনের ভাস্কর্যটি তার ওপর ভেঙে পড়ায় তিনি মারাত্মক আঘাত পান। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

২০১১ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে এই ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয়। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের বিউটিফিকেশন সেল ভাস্কর্যটির দেখভালের দায়িত্বে রয়েছে। তারা যদি ঠিক মত দায়িত্ব পালন করতেন তাহলে হয়তো এই মৃত্যুর ঘটনাটি এড়ানো যেত।

গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলা, নির্মাণ কাজে ত্রুটি ও রক্ষণাবেক্ষণের গাফিলতিতেই ভাস্কর্যটি ভেঙে পড়ে। এছাড়া এ ধরনের ভাস্কর্য স্থাপনের ক্ষেত্রে রড বা ঝালাই করে নিচের অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। কিন্তু এই ভাস্কর্যটির ক্ষেত্রে তা না করায় ভারী বর্ষণে মাটি নরম হয়ে আছড়ে পড়ে সেটি। দেখা যাচ্ছে, একটি জনবহুল রাস্তার পাশে পূর্বাপর না ভেবেই সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ভাস্কর্যটি বসানো হয়েছিল। আর জীবন দিয়ে এর খেসারত দিতে হল একজন সাধারণ মানুষকে। অত্যন্ত দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে রাজধানীজুড়েই রয়েছে অসংখ্য মৃত্যুর ফাঁদ। রাজধানীতে অনেক বড় বড় বিলবোর্ড বসানো হয়েছে। ঝড়ে সেগুলো পড়ে গিয়েও পথচারির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ইতিপূর্বে। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ এবং অসংখ্য অবৈধ বিলবোর্ড এখনো রয়ে গেছে। এছাড়া বিদ্যুত, টেলিফোন, ডিশলাইনের তারসহ অসংখ্য তার বিপদজনক ভাবে জড়াজড়ি করে আছে রাজধানীজুড়ে। যে কোনো মুহূর্তে এগুলো বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এগুলো দেখভালের কেউ আছে বলে মনে হয় না। সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন।

ভাস্কর্য দুর্ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। কোনো কিছুর বিনিময়েই মৃতের কোনো ক্ষতিপুরণ হয় না। তারপরও বলব নিহতের যথাযথ ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে এ ধরনের মৃত্যুর দায় কিছুটা এড়ানো যেতে পারে। একটি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে যেন এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যায়।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।