নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখুন
আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য গোটা জাতি অপেক্ষা করছে। ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট নির্বাচনে অংশ গ্রহণের ঘোষণা দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছে। এখন নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখাটাই নির্বাচন কমিশনের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বের পাশাপাশি সকল পক্ষকেই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কাজ করতে হবে। এমন কোনো আচরণ বা কর্মপন্থা অবলম্বন করা যাবে না যাতে নির্বাচনী পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। গতকাল দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহের মধ্যেই ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে দলটির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে পুলিশের একটি পিকআপ ভ্যানসহ দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়। পুলিশ বলছে, বিনা উসকানিতে পুলিশের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। পুলিশ শুধু তাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলেছিল, যেন যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। কিন্তু তারা সে কথা না শুনে হঠাৎ পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পরে তারা আমাদের দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এতে পুলিশের সদস্যও আহত হন।
এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, বিনা উসকানিতে মনোনয়ন ফরম নিতে আসা নেতাকর্মীদের ওপর সরকার পরিকল্পিত হামলা চালিয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কি-না তা নিয়ে শুরু থেকে নানা মত ছিল। এর মধ্যে ১১ নভেম্বর রোববার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয়। এর পরদিন মনোনয়ন ফরমও বিক্রি শুরু করে বিএনপি। মনোনয়ন ফরম বিক্রির শুরুর দিন থেকেই বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়।
এর মধ্যে গত মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেয়ার সময় শোডাউন করা নির্বাচনী আচরণ বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন উল্লেখ করে এমনটি না করতে সতর্ক করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির আদেশে বলা হয়, ‘তফসিল ঘোষণার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দলীয় মনোনয়নপত্র গ্রহণ বা জমা দেয়ার সময় মোটরসাইকেল ও অন্যান্য যানবাহনসহকারে মিছিল ও শোডাউন করা হচ্ছে, যা সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থী আচরণ বিধিমালা ২০০৮-এর ৮ নম্বর বিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’ ইসির এ আদেশ আসার পরদিনই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিএনপি জোটের ডাকা হরতাল-অবরোধের মধ্যে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছিল। ভয়াবহতার চূড়ান্ত মাত্রা ছাড়িয়েছিল বাসে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনাগুলো। আবার সে ধরনের সন্ত্রাস হোক-এটি কেউ চায় না। কাজেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পল্টনের ঘটনায় দোষীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখতে হবে যে কোনো মূল্যে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় নির্বাচন কমিশনের ব্যাপক দায়িত্ব। আমাদের দেশে রাজনৈতিক সংকটের মূলে রয়েছে নির্বাচন ব্যবস্থা। এজন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়াটা নির্বাচন কমিশনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটা তাদের সাংবিধানিক দায়িত্বও। এই দায়িত্বে সামান্যতম কোনো অবহেলা বা বিচ্যুতির সুযোগ নেই। সবার জন্য সমতল ক্ষেত্র সৃষ্টি করার মধ্য দিয়ে কমিশন বিশ্বাসযোগ্যতার পথে এগিয়ে যেতে পারে।
এইচআর/আরআইপি