ওষুধে ভেজাল : গুরু পাপে লঘু দণ্ড
জীবন রক্ষার জন্য মানুষ ওষুধ ব্যবহার করে। কিন্তু সেই ওষুধই যদি জীবনহানির কারণ হয় এরচেয়ে ভয়ানক আর কী হতে পারে। গণমাধ্যমে হরহামেশাই ভেজাল ওষুধের খবর আসছে। কিন্তু ভেজাল নিয়ন্ত্রণে কার্যকর তেমন উদ্যোগ লক্ষণীয় নয়। এ কারণে ভেজালকারিরা পার পেয়ে যাচ্ছে। আশার কথা হচ্ছে দেরিতে হলেও এ ধরনের একটি ঘটনায় দোষী ব্যক্তির শাস্তির ঘটনা ঘটেছে।
জাল প্যারাসিটামল সিরাপ তৈরির অভিযোগে প্রায় ২৩ বছর আগে দায়ের করা দুই মামলায় একটি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের ছয় কর্মকর্তাকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি মামলায় কারাদণ্ডের অতিরিক্ত প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। ঢাকার বিভাগীয় স্পেশাল জজ ও ড্রাগ আদালতের বিচারক এম আতোয়ার রহমান গতকাল ১৭ আগস্ট সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন। উল্লেখ্য, বিসিআই ফার্মার তৈরি ওই ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ `প্যারাসিটিন` সেবন করায় ১৯৯২ সালে ৭৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে সারা দেশে প্রায় দুই হাজার ৭০০ শিশু মারা যায়। ভেজাল প্যারাসিটামল সিরাপ খেয়ে এত শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশে তোলপাড় হলেও ওই সব কোম্পানি এবং এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো হত্যা মামলা হয়নি। মামলা হয়েছিল ওষুধ নিয়ন্ত্রণ আইনে। এ অবস্থায় বিসিআই ফার্মার কর্মকর্তাদের যে দণ্ড দেওয়া হয়েছে তা গুরু পাপে লঘু দণ্ড। যদি দায়ীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হতো তাহলে এদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডই প্রাপ্য ছিল বলে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন।
বিচার কাজের অন্যতম উদ্দেশ্যই হচ্ছে দেশে অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনা। এবং দোষীদের শাস্তির মাধ্যমে এই দৃষ্টান্ত স্থাপন করা যে, অপরাধ করলে তার জন্য সাজা পেতে হয়। এরফলে একটি সতর্কবার্তা উচ্চারিত হয়। কিন্তু গুরু পাপ করে লঘু দণ্ড পেলে সেক্ষেত্রে একটি নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয়। অপরাধ করেও যে ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আসা যায় সেটিই প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপরও বলা যায়, যতটকু সাজা হয়েছে সেটিও দৃষ্টান্তমূলক। কারণ ওষুধে ভেজালের বিস্তর অভিযোগ থাকলেও এ নিয়ে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তির আওতায় আনা খুব একটা সহজ কাজ নয়।
আমাদের সমাজে ভেজাল এখন নতুন কোনো বিষয় নয়। ভেজালের ভিড়ে আসল খুঁজে পাওয়াটাই দায়। ওষুধ তো বটেই খাদ্যপণ্য থেকে শুরু করে এমন কোনো বস্তু নেই যার মধ্যে ভেজাল নেই। কোনো ভেজালকেই খাটো করে দেখার অবকাশ নেই। এরপরও সবচেয়ে মারাত্মক ভেজাল হিসেবে অবশ্যই ওষুধে ভেজালকে আমলে নিতে হবে। কারণ জীবন রক্ষাকারী ওষুধে ভেজাল সরাসরি মানুষের জীবনকে বিপন্ন করে তোলে। মানুষ রোগ-শোক থেকে মুক্তির জন্য ওষুধ খায়। সেই ওষুধে ভেজাল তাই কোনোভাবেই মনে নেওয়া যায় না।
বাজারে যাতে কোনো ধরনের ভেজাল ও মানহীন ওষুধ না থাকতে পারে যেটা দেখতে হবে। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কারণ হতে পারে সে ওষুধ অবশ্যই প্রত্যাহার করে নিতে হবে। এ জন্য নিয়মিত মনিটরিং জোরদার করতে হবে। শুধু তাই নয় ওষুধে ভেজালকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা ভেজাল ওষুধ খেয়ে আর কোনো অপমৃত্যুর ঘটনা দেখতে চাই না।
এইচআর/পিআর