বাজেট : গরীবের যন্ত্রণার ফুসকুড়ি

তুষার আবদুল্লাহ তুষার আবদুল্লাহ
প্রকাশিত: ১০:০১ এএম, ০৭ জুন ২০১৮

আবার নতুন বছর আসছে। এক সময়কে আমরা নিজের মতো করে বিভাজন করে নেই। তাই পৃথিবী আর সূর্যের ঘোরাঘুরির মতো একাধিক বছর সাজিয়েছি নিজেদের মতো করে। বর্ষবরণইতো করি তিনবার।

বিশ্বের সঙ্গে চলতে ইংরেজি। জাতি হিসেবে বাংলা। ধর্ম মেনে ও সরকারি খরচপাতির হিসেবেও বর্ষবরণ ও বিদায় পর্ব আছে। ব্যক্তিগত জীবনেও নানা উপলক্ষ দিয়েও সময়ের ক্ষণ গণনা করি আমরা। তবে এখানে যে বছর শুরুর কথা বলছি তা একক গোষ্ঠীর নয় রাষ্টীয়।

পহেলা জুলাই সেই বছরের শুরু। ৩০ জুন পুরাতন বছর বিদায় নেবে। নতুন বছর সরকার কতো রোজগার করবে, কতো খরচ করবে সেই হিসাব উপস্থাপন করা হবে আজ।

অর্থমন্ত্রী বাজেট প্রস্তাব রাখবেন, সেই প্রস্তাব নিয়ে আম মানুষকে উৎসুক হতে দেখেনি কখনো। বিশেষ করে যিনি উৎপাদনের প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করেন, সেই কৃষক বাজেট বরাদ্দ নিয়ে উদ্বিগ্ন হননা। তার উদ্বেগ, তিনি যা উৎপাদন করছেন, সেই ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া যাবে কিনা?

ন্যায্য দাম পেলেই তার পুরো অর্থ বছরের যাপন স্বস্তির হবে। পরের উৎপাদন শুরুতে তাকে অর্থ কষ্টে পড়তে হবেনা। ঘরে খাবারের যোগানও স্বাভাবিক থাকবে। তাই বলে এই মানুষগুলোর জীবন অর্থবছর বা বাজেট বিচ্ছিন্ন তা কিন্তু নয়। বরং উৎপাদন খরচ কম হবার জন্য বীজ, কীটনাশকের দাম, সেচ সুবিধার জন্য জ্বালানি ভর্তুকিসহ বিষয় গুলো যুক্ত।

একই ভাবে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়ার ক্ষেত্রে ঐ পণ্যটি আমদানীর উপর শুল্ক আরোপ, বাজার অবকাঠামো সুবিধা এবং সার্বিক ভাবে কৃষি ঋণের বিষয়টিও সংযুক্ত। এই বিষয় গুলো নিয়ে কৃষক ভাবেন না, তার নিজস্ব কোন দৃষ্টিভঙ্গি নেই এমন নয়। সমস্যা হলো তাদের ভাবনা বাজেট প্রস্তাবে নেয়ার উদারতা রাষ্ট্র দেখাতে পারেনি।

সরাসরি তাদের বক্তব্য নিতে মানসিক প্রস্তুতি তৈরি না হলেও, জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে পরামর্শ বা মতামত নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কিন্তু সমস্যার দিক হলো আমাদের জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রান্তিকের বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে। বাড়ছে বিচ্ছিন্নতার দূরত্ব। ফলে প্রান্তিকের চাহিদার সঙ্গে জনপ্রতিনিধিদের চাহিদাপত্রের কোন আত্মীয়তা থাকেনা। জনপ্রতিনিধিদের মনোযোগ পুল সিরাতের দিকে।

সঙ্গে যোগ হয়েছে এখন সামাজিক বেষ্টনীর হালুয়া-রুটি। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের বাজেট দৌড় ঐ ডেরা পর্যন্তই। অর্থনীতিবীদরা তাদের নমুনা গবেষণা এলাকার বাইরে প্রান্তিক মানুষের কথা জানেন হয়তো এক আধ আনা। বাজেট ভাবনায় কোরাস হট্টগোল শোনা যায় বণিক শ্রেণির কাছ থেকে। তারা টাকার রঙ বদলানো, কর চুরি, লাভের গুড়ের ঘনত্ব বাড়াতে লম্ফঝম্ফ করতে থাকে প্রস্তাবের আগে পড়ে। রাজনীতিবিদরা সরকারে, বেসরকারে যেখানেই থাকুন, মায়া কান্না কাঁদেন আম মানুষের জন্য। কিন্তু শেষমেষ টেবিল চাপড়ান বণিকদের পক্ষেই।

চাপড়ানোর আওয়াজ বাড়ছে কারণ, প্রস্তাব কক্ষে ঐ শ্রেণির জটলা বাড়ছেই। যারা ঐ শ্রেণির নন তাদেরও স্বার্থ জমা বণিকদের কাছে। দুঃখের কথা হলো বাজেট চূড়ান্তের আগে যে জনপ্রতিনিধিদের কথা বলার সুযোগ থাকে, সেখানে প্রসঙ্গের বাইরেই কথা বলেন সংখ্যা গরিষ্ঠ।

আম মানুষের বাজেট চাহিদা আড়াই আনা হলেও জানে গণমাধ্যম। কিন্তু তারা সেই ভাবনা প্রচার করে খাদ মিশিয়ে। নিজেদের মতলব ও বণিক গোষ্ঠীর ফড়িয়া হিসেবে তারা সেই ভাবনায় রঙ মেশায়। প্রান্তিক মানুষ তাদের এক চিমটি প্রস্তাবনাও কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেন না।

যেহেতু সাধারণের ভাবনা উপেক্ষিতই থাকে, সেহেতু তারাও জীবন যাপনে বাজেটকে উপেক্ষা করেই চলেন। তবে তাদের নীরবে সয়ে যেতে হয় বাজেটের যন্ত্রণাকর ফুসকুড়ি গুলো।

লেখক : হেড অব নিউজ, সময় টিভি।

এইচআর/আরআইপি

‘যেহেতু সাধারণের ভাবনা উপেক্ষিতই থাকে, সেহেতু তারাও জীবন যাপনে বাজেটকে উপেক্ষা করেই চলেন। তবে তাদের নীরবে সয়ে যেতে হয় বাজেটের যন্ত্রণাকর ফুসকুড়ি গুলো।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।