কে নেবে এই মৃত্যুর দায়?
পবিত্র রমজানের প্রাক্কালে ইফতার সামগ্রী নিতে গিয়ে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা দেখিয়ে দিল মানুষের জীবন কতটা অনিরাপদ। এ ধরনের ঘটনার দুঃখজনক স্মৃতি থাকার পরও তেমন কোনো প্রস্তুতি না নিয়েই ইফতার সামগ্রী বিতরণের সিদ্ধান্তটি ছিল অপরিণামদর্শী। যদি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা থাকতো তাহলে এই মৃত্যু এড়ানো যেত-এমনটি বলছেন বিশ্লেষকরা। কথা হচ্ছে কে নেবে এই মৃত্যুর দায়? সামান্য দান-খয়রাতের বলি হবে আর কত অসহায় মানুষ?
সাতকানিয়ায় গরিব ও দরিদ্রদের মাঝে ইফতার এবং জাকাত সামগ্রী বিতরণের বিশাল আয়োজন করেছিল চট্টগ্রামের অন্যতম বৃহৎ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএম (কবির স্টিল এ্যান্ড রি- রোলিং মিলস) কর্তৃপক্ষ। গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিতরণ শুরু করার পরক্ষণে ঘটে যায় এই মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনা। ইফতার ও জাকাত সামগ্রী গ্রহণের জন্য হাজির হয়েছিল ৩০ সহস্রাধিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মানুষ। ফলে ব্যাপক ভিড় সৃষ্টি হয়। এদের ৯০ শতাংশেরও বেশি ছিল নারী। একদিকে প্রচণ্ড গরম, অপরদিকে মানুষের ওপর মানুষ ঠাসা হয়ে ইফতার ও জাকাত সামগ্রী নিতে গিয়ে হিট স্ট্রোক, ধাক্কাধাক্কি ও পদদলিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে ১০ জন। আহত হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক। নিহতদের সকলেই নারী। এদের সকলেরই বয়স ১৫ থেকে ৫৪ বছরের মধ্যে।
এবারের ইফতার ও জাকাত সামগ্রী বিতরণের প্রাক্কালে গত কয়েক দিন ধরে নলুয়া ইউনিয়নের প্রায় মসজিদে ইমামদের মাধ্যমে এই আয়োজনের তথ্য জানান দেয়া হয়। কর্মসূচি উপলক্ষে কেএসআরএম কর্তৃপক্ষ মাদ্রাসা ময়দানে সামিয়ানা টাঙ্গিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করে। কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ৮০ সদস্যের সিকিউরিটি গ্রুপও নিয়োজিত করা হয়। প্রস্তুতি রাখা হয় চিকিৎসক ও অ্যাম্বুলেন্সেরও। তবে থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করা হয়নি। অবশ্য ঘটনার পর শতাধিক পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের নিয়োজিত করা হয় নিহত ও আহতদের উদ্ধারে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। ঘটনার পর পর ইফতার ও যাকাত সামগ্রী বিতরণ কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়া হয়। আহতদের দ্রুত স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও গুরুতরদের চট্টগ্রাম মেডিক্যাল হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। ১০ জনই ঘটনাস্থলে প্রাণ হারায়।
বাংলাদেশে জাকাতের কাপড় আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগেও এ ধরনের দুঃখজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। তারপরও কর্তৃপক্ষ থানা-পুলিশকে অবহিত না করেই এত বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য ইফতার সামগ্রী বিতরণের আয়োজন করেছে। বার বার অপমৃত্যুর ঘটনা ঘটলেও কারো কোনো হুঁশ হচ্ছে না। ফলে প্রাণ যাচ্ছে অকাতরে। যারা নিহত হয়েছে তারা দরিদ্র পরিবারের। মিল কর্তৃপক্ষ নিহত ও আহতদের পাশে থাকার কথা বলছেন। কিন্তু মৃত্যুর ক্ষতিপূরণ হয় কী করে? চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মাসউদুল কবিরকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আমরা আশা করবো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পুনরাবৃত্তি কিছুতেই কাম্য নয়।
এইচআর/আরআইপি