এত মন্ত্রী, মন্ত্রণালয় কী জন্য


প্রকাশিত: ০৫:৪৪ এএম, ১৫ জুলাই ২০১৫

মন্ত্রিসভায় কে নতুন যুক্ত হলেন এ নিয়ে বোধকরি দেশের সাধারণ মানুষের আর তেমন কোনো আগ্রহ নেই। বিতর্কিত ও অযোগ্য মন্ত্রীরা রয়ে গেছেন বহাল তবিয়তেই। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ না করে যদি সংকোচন করতেন সেটাতে বরং রাষ্ট্রের  কিছু অর্থ সঞ্চয় হতো। নতুন কে যুক্ত হলেন তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ হতো যদি কাউকে বাদ দেয়া হতো।  কারণ দেশের অনেক মানুষই বেশকিছু মন্ত্রীকে আর ওই পদে দেখতে চান না।

এই দেশেতো দায়িত্ব পালন ঠিকমতো না করতে পারলে পদত্যাগ করার নজির নেই। এই সংস্কৃতিটা চালু করা গেলে ভালো হতো। তাহলে মন্ত্রীদের অনুসরণ করে নানা সরকারি বেসরকারি দপ্তরেও এটা প্রথা হয়ে দাঁড়াত। জবাবদিহিতাও বেড়ে যেত। এদেশের সবখানেইতো ব্যর্থ অযোগ্য আর অদক্ষ লোকজনের রাজত্ব। সেটা দলের ভেতর হোক বা সরকারের ভেতরেই হোক।

এবার মন্ত্রিসভায় নতুন তিনমুখের অন্তর্ভুক্তি আর দুজনের পদোন্নতি তেমন কোনো আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠবে না। কারণ মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন বা পরিবর্ধন বা কলেবর বাড়ানো যা-ই বলি না কেন এতে সরকার পরিচালনায় গুণগত কোনো পরিবর্তন হবে না। সরকারের কার্যক্রমের গতি যেমন ছিল তেমনই থাকবে। শুধু সরকারি ব্যয় আরেকটু বাড়বে।

শেখ হাসিনা যদি ৪০০ কোটি টাকার পচা গম কেনার দায়ে খাদ্যমন্ত্রীকে তার রাজনীতির জায়গা মহানগর আওয়ামী লীগের পাতি নেতার কাজে ফেরৎ পাঠাতেন অথবা দুর্নীতির পুরোনো অভিযোগ ও নানা কারণে আলোচিত মন্ত্রী মায়াকে সরকারে না রেখে দলে রাখতেন সেটা বরং আলোচনায় ঠাঁই পেতো। শেখ প্রধানমন্ত্রীতো আর কারো কথায় তার মন্ত্রিসভা সাজাবেন না। এই একটা কাজ সম্পূর্ণই তিনি নিজে করেন। তাকে নানা চিন্তা মাথায় রাখতে হয়। কোন এলাকায় মন্ত্রী নেই, কোন নেতা ত্যাগী, কোন নেতা জীবনে বেইমানি করবেন না, কোন নেতার পক্ষে প্রভাবশালী মহলের শক্ত তদবির, কোন নেতা দলের তহবিলে মোটা অংকের টাকা দিতে পারেন, কোন নেতা আত্নীয়- এই সবকিছুই তাকে বিবেচনায় নিতে হয়। আনুগত্য আর প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দতো রয়েছেই।

দেশের সবচে বড়ো ও প্রাচীন দল হিসেবে মন্ত্রিত্বের দাবিদার দলের সব এমপিই। এতোসব বিবেচনায় নিয়ে মন্ত্রী বানাতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দলের ভেতর অনেকের বিরাগভাজনও হতে হয়। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রতো আছেই। এখনতো আবার প্রধানমন্ত্রীকে অন্য দলকেও খুশি রাখতে হয়। নজিরবিহীন মন্ত্রিসভা শেখ হাসিনার। বিরোধী দল থেকেও ৩ জনকে মন্ত্রী বানিয়েছেন তিনি। বর্তমান সংসদে যতো দল আছে প্রায় সবগুলো দল থেকেই মন্ত্রী নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, জেপি- ৫ দলীয় মন্ত্রিসভা। বৈচিত্র্যময় মন্ত্রিসভা। সেখানে আরো দুচারজন যুক্ত হলেই কী আর না হলেই কী? তবে যিনি হবেন তার অনেক কিছু। তিনি প্রটোকল পাবেন, বাড়ি পাবেন, গাড়ি পাবেন, পাইকপেয়াদা পাবেন আর আম জনতা আমই থাকবে।

মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণের মধ্যে ভালো (!) একটা দিকও আছে। তাহলো তারানা হালিমের অন্তর্ভুক্তি। বহু বছর ধরে রাজপথে আছেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী। মন্ত্রিসভার সৌন্দর্যও বাড়বে। চট্রগ্রামের নুরুল ইসলাম বিএসসি আর লালমনিরহাট থেকে নির্বাচিত নুরুজ্জামানকে হয়তো আঞ্চলিক কোটায় প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। কিন্তু একটা জিনিস বোধে আসছে না স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাহেব কোন যোগ্যতায় প্রমোশন পেলেন? তিনি এমন কি সাফল্য দেখালেন? তাঁর পদোন্নতির কোনো কারণ দৃশ্যমান নয়। হত্যা গুম খুন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির তেমন নড়চড় হয়নি। আগেও খারাপ ছিল, এখনো খারাপই আছে। হ্যা, বিরোধী দল দমনে তার পুলিশ বাহিনী সফল হয়েছে।

বিএনপির তিন মাসের মানুষ পুড়িয়ে মারার আন্দোলন সামাল দিতে পেরেছেন। এজন্য অবশ্য পুলিশ মন্ত্রীর পদোন্নতি হতেই পারে। আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি রাজনীতিতে সক্রিয় কখনোই ছিলেন না। কথায় কথায় ছড়া কাটেন, কথা সাহিত্যিক শওকত ওসমানের ছেলে তিনি, সংসদ সদস্যও নন, তিনি গত সাত বছর ধরে এই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সাত বছরে একটি পদোন্নতি তিনিও পেতে পারেন এতে জাতির কিছু যায় আসে না। নতুন মুখ একজনকে খাদ্য প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাতে হয়তো খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের কানে প্রধানমন্ত্রী হালকা একটি সতর্কবাণী পৌঁছে দিলেন।  তবে শোনা যাচ্ছে সামনে আবারো মন্ত্রিপরিষদে রদবদল হবে। সেটা হোক আর না হোক সদ্য নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পদোন্নতি পাওয়া এই জাতির এত মন্ত্রীর দরকার কী?

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা অধিকাংশ পুরোনো মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন ও আগের সরকারের সময় দলের বাদ পড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন করেন। সর্বশেষ সম্প্রসারণে মন্ত্রিসভায় পূর্ণ মন্ত্রী আছেন ৩২ জন, মন্ত্রীর পদমর্যাদায় আছেন প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশেষ দূত ও পাঁচজন উপদেষ্টা, ১৮ জন আছেন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। সব মিলিয়ে ৫২ জন মন্ত্রী আর ৬ জন মন্ত্রীর মর্যাদা পাচ্ছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২৪ জন মন্ত্রী ও আটজন প্রতিমন্ত্রী নিয়ে ছোট মন্ত্রিসভা করে প্রশংসিত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কারণ তার আগে ২০০১ সালে খালেদা জিয়া ৬৫ জনকে মন্ত্রী বানিয়ে রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় করেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনাও শেষ পর্যন্ত মন্ত্রিসভা ছোট রাখতে পারেননি। কয়েক দফায় তা ৫০ জনে ঠেকেছিল। মন্ত্রণালয় থাকলেতো মন্ত্রীও থাকবে। কথা হলো এত মন্ত্রণালয়েরই বা কী দরকার। রাষ্ট্রের মালিকানায় ১০-১২ টা এয়ার ক্রাফট তার জন্যও একজন বিমানমন্ত্রী লাগবে? রাজপথ, রেলপথ আর নৌপথের জন্য তিন মন্ত্রণালয় না করে এক মন্ত্রণালয় করলে কী কাজ হবে না? শিক্ষা আর প্রাথমিক গণশিক্ষা দুটি আলাদা মন্ত্রণালয়েরই বা কী দরকার? এভাবে পোস্টমর্টেম করলে এই তালিকা আরো বাড়বে। প্রশ্ন হলো আমরা কী সংখ্যায় গুরুত্ব দিবো নাকি গুণগতমানে গুরুত্ব দিবো? মনে রাখা দরকার ভারতের মতো বিশাল দেশে কেবিনেট মন্ত্রীর সংখ্যা ২৬ আর বাংলাদেশ ৩২।

pintu

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।