সঙ্গীকে সময় দেন কি?

নায়না শাহরীন চৌধুরী
নায়না শাহরীন চৌধুরী নায়না শাহরীন চৌধুরী , সঙ্গীতশিল্পী, লেখক
প্রকাশিত: ০৪:৩৬ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭

আমাদের এই ইট কাঠের বাস্তবতায়, আমরা সুখ খুঁজি নিজেদের ঘরে পরিবারে। নিজেদের পাওয়া না পাওয়া, হতাশা, প্রাপ্তি, সুখের মুহূর্তগুলো ভাগ করে আমরা মনকে সজীব রাখি। বাবা-মা , ভাই-বোন, সন্তান-সন্ততি, জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনী সব মিলিয়েই আমাদের পরিবার।

বাবা মা মৃত্যু পর্যন্ত থাকবেন সেই সৌভাগ্য সবার হয় না কিন্তু, জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত যার সাথে চলার প্রতিশ্রুতি আমরা করি, যার ভরসায়,যার সঙ্গের সৌন্দর্যে আমরা সুন্দর ভাবে বাঁচতে চাই, তার প্রতি কখন আসে ঔদাসীন্য? কুড়ি বছর আগে জীবন সঙ্গী/সঙ্গিনীর মধ্যে যে সম্পর্কের রং ছিল, যে বিশ্বাস, যে সম্মানবোধ ছিল তা এখন অনেকটাই ফিকে।

পিঠ দিয়ে ঘুমানো শুরু হয় কোনদিন থেকে? কথার উচ্ছ্বাস কবে থেকে হয় সীমিত। নিরীহ অভিমান, আবদার গুলো মূল্য না পেয়ে সম্পর্কের লতা গুলো কখন নেতিয়ে পরে, আমরা কি সত্যি খেয়াল করি? সম্পর্কের দূরত্ব বাড়লে তৃতীয় কেউ সুযোগ নেয় সেটা এখন একটা অলিখিত বাস্তবতা- যা এখন মহামারী আকারে সমাজে ছড়িয়ে পরেছে। পরকীয়া, দাম্পত্য কলহ, তালাক, মানসিক অসুস্থতা, আত্মহত্যা, খুন, কি হচ্ছে না এই দূরত্ব থেকে। ছাপ ফেলছে সন্তানের উপরেও।

আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনী বদলে গেছেন। আপনি নিজেও বদলে গেছেন সেটা কি আপনি নিজে টের পাচ্ছেন? দোষ ত্রুটি , ভুল বোঝাবুঝি, কথা বলে দূর করা যায়। কথা কি বলেন সেভাবে? সংসারের খুঁটিনাটি , সমস্যার বাইরে, প্রশংসার দুএকটা ঠাট্টা, পজিটিভ কয়টা কথা বলা হয় হিসেব করুন তো!

সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে থাকা, স্বাভাবিক স্পর্শ অন্য কারো সামনে লজ্জাজনক কেন লাগে? বিয়ে যখন আড়ম্বর করে করেছিলেন তখন তো বাসরঘরে ঢুকতে লজ্জা হয়নি।

দাম্পত্য সম্পর্কের ভিত-ভরসা, বিশ্বাস, ভালবাসা, নিশ্বাস নেওয়ার স্বাধীনতা। এটুকু না থাকলে অসুস্থতা স্পর্শ করবেই। সঙ্গী সঙ্গিনীর মাঝে প্রেম যদি নাই আসে, বন্ধুত্বের ভরসাটুকু আশা করাও কি অবাস্তব?

আর, খুব কি কঠিন, এই ব্যস্ত জীবনে বর বা স্ত্রীর মন সজীব রাখা? শারীরিক সম্পর্কের বাইরেও, কোথাও হঠাৎ ঘুরতে যাওয়া, সেটা কাছে পিঠেই একবেলার ঘোরাঘুরি হতে পারে। কাজ থেকে বাড়িতে ফেরার পথে এক গোছা ফুল, বা তার প্রিয় কিছু আনা, পছন্দের কোন রান্না, অথবা দিনে একবার জড়িয়ে ধরা অথবা মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়া। এগুলো টনিকের মত কাজ করে প্রায় মৃত সম্পর্কে।

আরেকটা কথা মাথায় রাখা দরকার। আপনি বাবা বা মা হতে পারেন। তার মানে এই নয় যে আপনাদের বর-স্ত্রীর প্রত্যেকটি আনন্দের মুহূর্ত আপনার সন্তানদের সাথে ভাগ করতেই হবে। আপনারা যেমন বাবা মা তার আগে কিন্তু আপনারা পার্টনার। আপনাদের সম্পর্কের আলাদা রং, আর তাকে বাঁচাতে একটু যত্ন, পারস্পারিক সৌহার্দ্য, প্রেম প্রকাশ, নিজস্ব সময় প্রয়োজন। ব্যক্তিগত ভাললাগায় সন্তান বা পরিবারের অন্য সদস্যের উপস্থিতি আবশ্যিক নয়। আগে নিজেদের সমস্যা ঠিক করুন তারপর বাকিদের সাথে আনন্দ ভাগের কথা চিন্তা করুন। যদি সত্যিই ঠিক করতে চান আরকি!

পড়ে আপনার ঠোঁটে মুচকি হাসি আসতেই পারে, কিন্তু এই ছোটখাটও বিষয় গুলো শেকড়ের মত সম্পর্ক ধরে রাখতে সাহায্য করে।

পাশ্চাত্যে পরিবার প্রথা বিলোপ হতে বসেছে, কিন্তু তাও আমাদের কেউ না কেউ কাছের মানুষ থাকতেই হয়। এখন বিষয়টা আমাদের হাতে আমরা কে কে আমাদের পার্টনারের কাছের মানুষ, প্রাণের মানুষ, অন্তত বন্ধু হতে পারি।

আমি কোন বিশেষজ্ঞ নই, কিন্তু আশে পাশের অনেক ঘটনা দেখে শুনে নিজের অনুভূতি দিয়ে বাজিয়ে যে কথা গুলো বললাম, একবার প্রয়োগ করে দেখুন। আমার মনে হয় লাভ ছাড়া ক্ষতি হবে না। যে সম্পর্ক গুলো অন্ধকারে গুমরে মরছে, তারা আবার আলোয় ভাসুক সেই চাওয়া হয়তো অন্যায় হবে না।

লেখক : সঙ্গীতশিল্পী।

এইচআর/আইআই

‘সঙ্গী বা সঙ্গিনীর সাথে থাকা, স্বাভাবিক স্পর্শ অন্য কারো সামনে লজ্জাজনক কেন লাগে? বিয়ে যখন আড়ম্বর করে করেছিলেন তখন তো বাসরঘরে ঢুকতে লজ্জা হয়নি।’ 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।