মাতৃত্বকে অবমাননা করলো গে ম্যারেজের বৈধতা


প্রকাশিত: ০৭:০১ এএম, ০৫ জুলাই ২০১৫

সম্প্রতি আমেরিকা LGBT গোত্রের অসম বিয়ের বিষয়টি আইন করে বৈধতা দিয়েছে। আর তারা হচ্ছে প্রকৃতির নিয়মের বাইরের মানুষ, যারা স্বাভাবিক আচরণের বাইরে, জৈবিকভাবে হোক আর পরিবেশগতভাবেই হোক, তাদের বায়োলজিক্যাল এক্সপ্রেশন অন্য সবার মত নয়। এদের মধ্যে আছে লেসবিয়ান, গে, বাইসেকচ্যুয়াল আর ট্রান্সজেন্ডার স্বভাবের মানুষ।

সে যাই হোক, সভ্যতা এগিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সেক্টর থেকে। সেই সাথে পরিবর্তিত হচ্ছে মানুষের রুচি। আর বর্তমানে পৃথিবীর কোনো প্রান্তে কোনো রুচির পরিবর্তন হলে এখন আর তা ঐ দেশের সংস্কৃতির অথবা মানচিত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না।প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে সমগ্র পৃথিবীতে এখন তার প্রভাব পড়ছে খুব দ্রুত এবং গভীরভাবে। আর পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে ধর্মীও নিয়ম শৃঙ্খলায় আবদ্ধ। তা নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম পালন করুক আর নাই করুক। যেমন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ধর্মের মানুষগুলো মুসলিমদের উৎসব খুব আনন্দের সাথেই উপভোগ করে। কারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ আচরণের প্রভাব মানুষকে চেতনভাবে হোক আর অবচেতনভাবেই হোক তা খুব স্বাভাবিকভাবেই নৈতিক আচরণের ভিত্তি গড়ে দেয়।

আর এখানেই হচ্ছে ভয়। আর সেই ভয় হচ্ছে সভ্যতা সংস্কৃতি, জেনারেশন আর ধর্মীয় মূল্যবোধ হারানোর ভয়। শুধু ইসলাম ধর্মে নয়, অন্যান্য ধর্মেও সমলিঙ্গ বা এই ধরনের যৌনতাকে নিষিদ্ধ করা আছে। কারণ এটি প্রকৃতির নিয়মের বাইরে। যাদের ধর্মে বিশ্বাস নেই তারা নিশ্চয়ই অস্বীকার করতে পারবে না যে এই ধরনের আচরণের মানুষদের মধ্যে ভয়াবহ রোগের বিস্তার খুব বেশি । কারণ হিসেবে জানা গেছে যে, এ ধরনের সম্পর্কে ইনজুরি হবার সম্ভাবনা বেশি থাকায় খুব সহজেই রক্তের মাধ্যমে রোগ ট্রান্সমিটেড হয় খুব দ্রুত। আর তাই পৃথিবীতে এর প্রভাব আশঙ্কাজনক। আর সামাজিক পরিচয়, বংশ, সম্পত্তি, এইসব বিষয় গুলো না হয় বাদই দিলাম ।

এ বিষয়ে দু’দিন আগে একটি নিউজ পড়লাম ঠিক আমি যা মনে মনে ভাবছিলাম। তারপর থেকে শুধু হাসছি আর হাসছি । হাসির কারণটি হচ্ছে জিম্বাবুইয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে তার স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে বারাক ওবামাকে ``গে ম্যারেজের`` পয়গাম নিয়ে নাকি কয়েকদিনের মধ্যেই ওয়াশিংটনের পথে রওনা হবেন । ধন্যবাদ প্রেসিডেন্ট মুগাবে। ‘প্লিজ গো এহেড’। ঠিক এমনটিই ভাবছিলাম যে, ওবামাকে কটাক্ষ করে কেউ যদি গে ম্যারেজের প্রস্তাব দিতো ! ছোটবেলা স্কুলে যাবার পথে রিক্সাওয়ালা ও দিনমজুরদের অনেক বুলি শুনতাম যা অন্যকে বোকা বানানোর জন্য গালাগাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকতো । অত্যন্ত নিচু, অশ্লীল এবং অমর্যাদাকর যেই গালিটি শুনতাম , তা আজ তথাকথিত ভালোবাসায় রূপ নিয়েছে । মানবাধিকারের অন্যতম আলোচ্য বিষয়ে রূপ নিয়েছে। আমিতো বলবো এটি মানবতাবিরোধী আইন। কারণ যার মাধ্যমে প্রকৃতির নিয়মকে অস্বীকার করা হয় , মাতৃত্ব ও পরিবারিক বন্ধনকে অস্বীকার করা হয়, তা কক্ষনো মানবাধিকার আদায়ের বিষয় হতে পারে না।

তবে কেউ কেউ যুক্তি দিতে পারে যে এটি একান্তই তাদের ব্যক্তিগত রুচি এবং পছন্দ। কিন্তু তাদের এই যুক্তি আমার কাছে খুব দুর্বল এইজন্যই মনে হয়, কারণ তাদের ব্যক্তিগত রুচি ও কামনা চরিতার্থ করার জন্য তারা কক্ষনো সমাজ ও সভ্যতাকে ধ্বংস করার অধিকার রাখে না । কারণ তারাও সমাজের অংশ। সমাজ ও সভ্যতার সমস্ত অগ্রগতির সমস্ত সুফলই তারা সমানভাবে উপভোগ করে । অনেকের সাথে মহিলাদেরকেও দেখছি মানবাধিকারের দাবিতে রংধনু লাগিয়ে নাচানাচি করছেন । নারী মানবাধিকার কর্মীরা এটি কেন বুঝতে পারছেন না যে এই আইনটি নারীকে অবমাননাকারী আইন, নারীকে তুচ্ছ করার আইন, মাতৃত্বকে বুড়ো আঙুল দেখানো আইন !

অনেকেই বলতে চাইছেন এটি নাকি জিনগত ত্রুটি । ঠিক ট্রান্সজেন্ডারদের মত। মানে এটি বায়োলজিক্যাল এরর। যদি তাই হয় তবে ইংল্যান্ডের মিউজিক প্রডিউসার ও গায়ক এল্টন জন প্রথম জীবন থেকে তা ছিলেন না কেন ? আর বৃদ্ধ বয়সে যদি তার এরকমটি হয়েই গেল তাহলে ঐ জীবনে দু`জনকে একসাথে কেন পিতা হতে হলো ? আর যেহেতু তারা বাবা হতে চান, এবং মা হওয়া ন্যাচারাল ওয়েতে কারো পক্ষেই সম্ভব নয়, তাই তাদেরকে সরগেট মায়ের গর্ভ কেন ভাড়া করতে হলো? আর এখানেই হলো আপত্তি। হায়! মাতৃত্ব আজ ব্যাবসা। সরগেট সন্তানরা কক্ষনো মায়ের কোমল মুখ দেখবে না। মায়ের ভালোবাসা, আদর পাবে না। স্নেহ থেকে, মায়ের নিরাপদ আশ্রয় থেকে বঞ্চিত হবে এই শিশুরা। আর আস্তে আস্তে মায়ের অস্তিত্ব বিলীন হতে থাকবে পৃথিবী থেকে। সন্তানরা গান গাইবে না `` মায়ের মত আপন কেহ নাইরে `` এমনটি হতে থাকলে পৃথিবীর ভারসাম্য ঠিক থাকবে কি ?

লেখক : আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স এর প্রশিক্ষক

এইচআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।