অতিকায় হাতিও অস্তিত্ব সংকটে?

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৩:৫২ এএম, ১০ অক্টোবর ২০১৭

পৃথিবী থেকে অনেক বন্য প্রাণি হারিয়ে যাচ্ছে। বনের আমব্রেলা বা ছাতা হিসেবে পরিচিত হাতিও এই হারিয়ে যাওয়ার তালিকায়। হাতির আকার-আকৃতিতে বৃহৎ হলেও মানুষের অবিমৃষ্যকারিতার মাশুল দিতে হচ্ছে হাতিকে। ফাঁদ পাতাসহ নানা উপায়ে হাতি নিধন চলছে। এর সর্বশেষ নজির দেখা গেল শেরপুরে। তিন দিনের ব্যবধানে দুই হাতির মৃত্যু হলো শেরপুরের সীমান্ত এলাকায়। আর দুই মাসে এ এলাকায় তিন হাতির মৃত্যু হলো। এটা খুবই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক। গোটা পৃথিবী জুড়ে যখন বন্যপ্রাণি রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে তখন কিছু মানুষের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য হাতির প্রাণ যাচ্ছে আমাদের দেশে। এ অবস্থা চলতে পারে না।

শ্রীবরদী উপজেলার রাণীশিমুল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী বালিজুড়ী গ্রামের একটি ধানখেত থেকে বন্য হাতির মরদেহ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। গত রোববার সকালে স্থানীয় এলাকাবাসীর নিকট থেকে সংবাদ পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতির মরদেহটি দেখতে পান। এর আগে গত শুক্রবার উপজেলার সীমান্তঘেঁষা রাঙাজান গ্রামের একটি ধানখেত থেকে এবং গত ১২ আগস্ট হালুয়াহাটি গ্রাম থেকে বন বিভাগের কর্মকর্তারা দুই হাতির মরদেহ উদ্ধার করেন। বন উজাড় হওয়ায় হাতির দল খাদ্যের অভাবে ধান খাওয়ার জন্য প্রায় প্রতি রাতেই গারো পাহাড় থেকে লোকালয়ে নেমে আসছে। এজন্য কৃষকরা বৈদ্যুতিক ফাঁদ পেতে রাখছে। আর এই ফাঁদেই মৃত্যু হচ্ছে হাতির। এছাড়া বিষ এবং ইউরিয়া সারের কারণেও হাতির মৃত্যু হচ্ছে। অনেক সময় শারীরিক আঘাতেও মারা যাচ্ছে হাতি। ফাঁদ পাতা নিষিদ্ধ থাকলেও এর তোয়াক্কা করছেন না কেউ। বনবিভাগও যথেষ্ট দায়িত্বশীল নয়।

পৃথিবীতে দুই প্রজাতির হাতি রয়েছে। এদের মধ্যে এশীয় হাতির অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। বাংলাদেশের মধুপুর গড় থেকে শুরু করে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালী এলাকায় একসময় হাতির অবাধ বিচরণ ছিল। বাসস্থান ধ্বংস, বন উজাড়, জনসংখ্যার চাপ, সংরক্ষণের অভাব, খাদ্যের অভাব ও চলাচলের পথে বাধার কারণে আমাদের দেশে হাতির অবস্থা সঙ্গীন। এ ছাড়া দাঁত, চামড়া ও মাংসের জন্য প্রতিবছর গোপনে বন্য হাতি নিধন তো চলছেই।

বন উজাড় করার ফলে হাতি খাদ্যের জন্য নেমে আসছে লোকালয়ে। কথায় আছে ‘বনেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’। যার যেখানে থাকার কথা সেখানেই সে নিরাপদ। বন উজাড় হলে হাতি থাকবে কোথায়, খাবেই বা কি? তাছাড়া বন উজাড় করেই তো ধানক্ষেত বানানো হয়েছে। এছাড়া ফসলের ক্ষতি হলে তার জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু হাতি নিধন কোনো সমাধান নয়।

সত্যি বলতে কি বন্য প্রাণির জন্য দিন দিন অসহনীয় হয়ে উঠছে তাদের আবাসস্থল। প্রাকৃতিক দুর্যোগ তো আছেই মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের কারণেও বন্য প্রাণিরা এখন অসহায়। অব্যাহতভাবে বন ধ্বংসের কারণে খাদ্য ও বাসস্থান সঙ্কটে পড়ে বন্য প্রাণি লোকালয়ে এসে পড়ছে। এরফলে দেখা দিচ্ছে নানা বিপর্যয়। কিন্তু এই পৃথিবী কেবল মানুষের জন্য নয় অন্যান্য জীব-জন্তু-বৃক্ষ-নদী-সাগর সব মিলিয়েই মানুষের জীবন। মানুষের বেঁচে থাকার স্বার্থেই সবকিছু ঠিক রাখতে হবে। হাতি যদি বেঁচে থাকে, তাহলে বনও টিকে থাকবে। আর একটি বনের টিকে থাকা মানে হাজারো জীববৈচিত্র্যের জীবন বেঁচে যাওয়া, পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক থাকা। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। হাতির মৃত্যু রোধে নিতে হবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।

এইচআর/জেআইএম

‘একটি বনের টিকে থাকা মানে হাজারো জীববৈচিত্র্যের জীবন বেঁচে যাওয়া, পরিবেশ-প্রকৃতির ভারসাম্য ঠিক থাকা।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।