ইলিশ রক্ষায় জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৪:০২ এএম, ০৭ অক্টোবর ২০১৭

ইলিশ আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসা অত্যন্ত জরুরি। ইলিশের সহনশীল উৎপাদন বজায় রাখার লক্ষ্যে ডিমওয়ালা মা ইলিশ রক্ষায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে ২২ দিন দেশের অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার জলসীমায় ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ করেছে মৎস্য বিভাগ। এই সময়ে ইলিশ আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্র্ণ নিষিদ্ধ। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, দেশে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বসাধারণ বিশেষ করে জেলে, মৎস্যজীবী সম্প্রদায় ও ইলিশের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী, আড়তদার, বরফকল মালিক, বোট মালিক, দাদনদার এবং ভোক্তাসহ সবাইকে সচেতন ও উদ্বুদ্ধকরণ। একইসঙ্গে ব্যাপক প্রচার প্রচারণার মাধ্যমে বিষয়টিকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়া। বলা বাহুল্য এই নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। এবং দেশ ও জাতির স্বার্থে এটা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

ইলিশ শুধু জাতীয় মাছ ও সম্পদই নয়। বহু মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভর করে ইলিশের ওপর। অর্থনীতিতেও রয়েছে বিরাট অবদান। পরিসংখ্যান মতে, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের ১৩ ভাগ (যার আনুমানিক অর্থমূল্য আট হাজার ১২৫ কোটি টাকা) আসে ইলিশ মাছ থেকে। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় দুই শতাংশ। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ ইলিশ আহরণে সরাসরি এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। পৃথিবীর সব দেশেই এ মাছের চাহিদা রয়েছে। প্রতিবছর ইলিশ মাছ রপ্তানি করে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হচ্ছে। যদি প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা ও জাটকা নিধন বন্ধ থাকে তাহলে ২১ থেকে ২৪ হাজার কোটি নতুন পরিপক্ব ইলিশ পাওয়া যাবে। এতে বছরে সাত হাজার কোটি টাকা মূল্যের ইলিশের বাজার সৃষ্টি সম্ভব হবে বাংলাদেশে।

দুঃখজনক হচ্ছে ইলিশ ধরার ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে না। প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইলিশ ধরার অভিযোগে বরিশাল জেলার বিভিন্ন নদীতে অভিযান চালিয়ে ৩১ জেলেকে আটক করেছে নৌ-পুলিশ। এ সময় ৪৫ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও প্রায় সাড়ে ৩ মণ ইলিশ মাছও উদ্ধার করা হয়। বুধবার বিকেল থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে এই ৩১ জেলেকে আটক করা হয়।

সম্ভাবনার ইলিশকে তাই রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে। এটা করতে হবে নিজেদের স্বার্থেই। যারা ইলিশের ওপর জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন তাদের জন্য ইলিশ ধরা বন্ধ মৌসুমে সরকার আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে। ইলিশ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে এমন ১৫টি জেলার ২ লাখ ২৪ হাজার ১০২ জেলেকে পরিচয়পত্র দিয়ে তাদের বছরে তিন মাস সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে সরকার। এটা খুবই কার্যকর একটি পন্থা। ভবিষ্যতে এর আওতা আরো বাড়ানো যায় কিনা সেটি নিয়ে ভাবতে হবে। তবে জেলেদের দায়িত্ব হচ্ছে নগদ প্রাপ্তির লোভ ছেড়ে দিয়ে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মা ইলিশ না ধরা। যদি সরকারি নির্দেশ উপেক্ষা করে মা ইলিশ ধরা হয় সেটি হবে আত্মঘাতী। জাতীয় স্বার্থে ডিমওয়ালা মা ইলিশ না কেনাটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশনা অবশ্যই মেনে চলতে হবে। যারা মানবে না তাদের জন্য কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ কিছু সংখ্যক স্বার্থান্বেষী মানুষের কাছে জাতীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এইচআর/এমএস

‘সম্ভাবনার ইলিশকে রক্ষা করতে হবে যে কোনো মূল্যে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।