মুজাহিদের ফাঁসি, ক্ষমা চাইতে হবে বিএনপিকেও


প্রকাশিত: ০৬:০১ এএম, ১৭ জুন ২০১৫

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হত্যার পরিকল্পনার দায়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রভাবশালী দল জামাতের সেক্রেটারি জেনারেল  আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা এখন সময়ের ব্যাপার। দেশের সর্বোচ্চ আদালত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এই আল বদর কমাণ্ডারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের আদেশ বহাল রেখেছে। এই আদেশে দেশের শহিদ বুদ্ধিজীবীদের সন্তানদের মন অনেকটা হালকা হবে। জাতিও কলঙ্কমোচন প্রক্রিয়ায় আরো এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

মুজাহিদ জামাতের দ্বিতীয় প্রভাবশালী নেতা। চারটি সংসদ নির্বাচনে তিনি অংশ নেন। প্রতিবারই এদেশের মানুষ তাকে প্রত্যাখান করেছে। ২০০১ সালে বিএনপির সাথে সমঝোতা করে জামাত নির্বাচনে অংশ নেয়। সেই নির্বাচনে বিএনপি জামাতকে ৩১টি আসন ছেড়ে দেয়। ওইসব আসনে বিএনপি সমর্থকরা রাজাকার আলবদরদের ভোট দেয়। মুজাহিদ বিএনপির ভোটে নির্বাচিত হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ওই আসনে বিএনপির শক্ত প্রার্থী থাকায় আসনটি বাগাতে পারেননি তিনি।

স্বাধীন বাংলাদেশে কখনোই নির্বাচিত প্রতিনিধি তিনি হতে পারেননি। কিন্তু বিএনপি তার সেই আশা পূরণ করেছিল মন্ত্রী বানিয়ে। ৭১ এর আল বদর, বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারী মুজাহিদকে সমাজের কল্যাণের দায়িত্ব দিয়েছিল বিএনপি। যে দেশটিকেই মেনে নেননি মুজাহিদরা, সেই দেশের পতাকা উড়িয়ে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন তিনি। বিএনপি শুধু তাকেই মন্ত্রী বানায়নি। আল বদরের শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামীকেও মন্ত্রী করে বাঙালি জাতির ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে।

যুদ্ধাপরাধী ও দেশের বুদ্ধিজীবিদের হত্যার নীল নকশাকারি এই ঘৃণ্য ব্যক্তিদেরকে ক্ষমতা দেওয়ায় বিএনপির ওই শাসনামালে দেশে জঙ্গিবাদের চাষাবাদ হয়েছে নির্বিঘ্নভাবে। সেই সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গিরা ধরা পড়তো আর নিজামী-মুজাহিদদের পরামর্শে তাদের ছেড়ে দেওয়া হত। শিল্প মন্ত্রণালয় আর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়ে সারাদেশে জামাতিদের যে হারে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে এই দুই রাজাকার মন্ত্রী, বিএনপির মন্ত্রীরাও তাদের দলের জন্য তা করতে পারেননি। সারাদেশে জামাত সমর্থিত প্রতিষ্ঠানকে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ দেওয়া হত। আর শিল্পমন্ত্রীর ক্ষমতাবলে নিজামিতো চট্রগ্রামের কর্ণফুলি নদীর তীরে সার কারখানার জেটিতে ১০ ট্রাক অস্ত্র খালাসের অনুমতি দিয়েছিল। যে অস্ত্র ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল। সেই অভিযোগে নিজামীর মৃত্যুদণ্ডও দিয়েছে আদালত।

স্বাধীনতা বিরোধী এই দলটিকে বারবার পৃষ্ঠপোষকতা করে বিএনপি নিজেও ডুবেছে, দেশটাকেও পিছনের দিকে নিয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বয়কট করে বিএনপি যে ভুল করেছে সেটা এখন তারা বুঝতে পারছে। জামাতের পরামর্শে বিএনপি যে এসব করেছে সেটা এখন দলের নেতারাই বলছেন।

বিএনপির সাবেক মহাসচিব ও বিএনপি আমলের রাষ্ট্রপতি বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট যথার্থই বলেছেন, বিএনপি এখন জামাত নির্ভর দল হয়ে পড়েছে। জামাত নির্ভর মানে যুদ্ধাপরাধীদের ওপর নির্ভর, যুদ্ধাপরাধী মানে স্বাধীনতা বিরোধীদের ওপর নির্ভর। বিএনপিকে শুধু জামাতি সঙ্গ ত্যাগ করলেই চলবে না, জাতির কাছে তাদেরও ক্ষমা চাইতে হবে। ক্ষমা চাইতে হবে এ কারণে যে, তারা যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রী বানিয়ে দেশের ৩০ লাখ শহীদকে অপমান করেছে। স্বাধীনতা বিরোধীদের গাড়িতে পতাকা তুলে দিয়ে দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করেছে।

বিএনপি এখনো জাতিকে অপমানিত করে চলেছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার না করে। এই মানুষটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে একজন খুনি, গণহত্যাকারি। আদালতের রায়ে প্রতিষ্ঠিত স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীকে এখনো দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য পদে বহাল রেখেছে। অর্থাৎ তারা শুধু যুদ্ধাপরাধীদের দলকেই পৃষ্ঠপোষকতা করছে না, সরাসরি যুদ্ধাপরাধীকে দলে ঠাঁই দিয়েছে।

বিএনপি এখনো কেন এই দায় বহন করে চলেছে তা পরিষ্কার নয়? মুজাহিদের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখার পরপরই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সাকা চৌধুরীর মামলার আপিলের শুনানি শুরু হয়েছে। আশাকরি সর্বোচ্চ দণ্ডই বহাল থাকবে। তখন কেউ বিএনপিকে যুদ্ধাপরাধীদের দল বললে সেটাও সইতে হবে তাদের। এতোদিন এ দায় নিয়েই চলেছে বিএনপি, ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে এই কলঙ্ক থেকে মুক্ত হতে হলে বিএনপিকে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে।

আমরা বারবার জামাতকে দেশের মানুষের কাছে ৭১ এর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছি। কিন্তু তারা সেটা কখনোই করেনি। এমনকি তারা যে ভুল করেছে সেটাও স্বীকার করেনি। এভাবে চলতে চলতে এক পর্যায়ে জামাতিরা বলা শুরু করলো ৭১ এ মুক্তিযুদ্ধই হয়নি, হয়েছে গৃহযুদ্ধ।  বদর কমাণ্ডার মুজাহিদ তো গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নির্বাচন কমিশনে দেশের সকল টিভি চ্যানেলের মাইক্রোফোনের সামনে বলেই বসলেন বাংলাদেশে কোনো যুদ্ধাপরাধী নেই। এটা নাকি কল্পনাপ্রসূত। আর যখন যুদ্ধাপরাধের বিচারের লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলো এর বিরোধিতা করে সংবাদ সম্মেলনে এই জামাত নেতাই বলেছিলেন ৩৬ বছর আগের বিষয় নিয়ে বিচার করার প্রশ্নই উঠতে পারে না। বাংলাদেশের বিরোধিতা করায় ক্ষমা চাইবে কিনা- এমন  প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন “ওই সময়ের সিদ্ধান্তটি ছিলো রাজনৈতিক। ওই প্রসঙ্গ এখন নয়।”

বিএনপি কখনোই জামাতের এই আস্ফালনের প্রতিবাদ করেনি। সব সময় এটা জামাতের নিজস্ব ব্যাপার বলে পাশ কাটিয়ে গেছে। আমরা কখনো জামাতের পৃষ্ঠপোষকতাকারি হিসেবে বিএনপিকে ক্ষমা চাইতে বলিনি। বিএনপিই জামাতকে আজকের এই অবস্থানে নিয়ে এসেছে, তাদের কারণেই দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির প্রচলন হয়েছে, দেশে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছে। এই সত্য স্বীকার না করলেও ইতিহাস সাক্ষ্য দিবে বিএনপির সমর্থন পেয়েই জামাতিরা এদেশে হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে। শুধু খুনির ফাঁসিই যথেষ্ট নয়, খুনিকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগের ফলও ভোগ করা উচিত।


এইচআর/আরআইপি
 

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।