রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন বন্ধ হোক

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৩:৫৫ এএম, ২৮ আগস্ট ২০১৭

রাখাইন রাজ্যে রক্তক্ষয়ী সংর্ঘষের ঘটনায় গুলিবিদ্ধ রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। এটা খুবই উদ্বেগজনক ব্যাপার। গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে পুলিশ পোস্টে হামলার ঘটনায় রোহিঙ্গাদের ওপর দোষ চাপানো হয়। এরই জের ধরে তাদের ওপর চলছে নির্মম নির্যাতন। নির্যাতন সইতে না পেরে সীমান্ত পার হয়ে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে। মিয়ানমারের আরাকানে কথিত মতে জঙ্গি রোহিঙ্গা গোষ্ঠীর হামলায় অন্তত ৩২ জনের প্রাণহানির ঘটনার পর সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায়। বস্তুত অনেকদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকার নির্যাতন চালাচ্ছে। তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবেও তাদের অস্বীকার করা হচ্ছে।

শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে রেহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যায় না। রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার যা করছে তা সভ্যতা-ভব্যতার সব সীমা লঙ্ঘন করেছে। নির্যাতনের মাত্রা এতটাই বেড়েছে যে, তারা এখন দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। অবিলম্বে ক্ষুদ্র রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হত্যা, জুলুম-নির্যাতন, জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করতে হবে। জাতিসংঘসহ বিশ্বমানবতাকে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়াতে হবে। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদের জাতিগত অধিকার মেনে নিতেও চাপ প্রয়োগ করতে হবে। মিয়ানমার তো পৃথিবীর বাইরের কোনো দেশ নয়। তাদের যা খুশি তা করার অধিকার নেই। মিয়ানমারে যে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেটিও সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু তার দায় রোহিঙ্গাদের ওপর চাপানো মোটেও সমীচীন নয়।

বাংলাদেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে। এরমধ্যে গত বছরের ৯ অক্টোবর সহিংস হামলায় অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। যার ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত চলছে। দীর্ঘদিন সামরিক শাসনে থাকা মিয়ানমার গণতন্ত্রের পথে হাঁটা শুরু করেছে। শান্তিতে নোবেল জয়ী অং সান সুচির দল ক্ষমতায় আসায় এ আশা দৃঢ় হয়েছে যে, সেখানে জাতিগত বিদ্বেষ বন্ধ হবে। কিন্তু অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে লক্ষ্য করা যাচ্ছে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর চরম বর্বরতা চালাচ্ছে।

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত রোহিঙ্গা কমিশন রোহিঙ্গাদের রক্ষায় ভূমিকা রাখতে পারবে- এমন আশা আজ দুরাশায় পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ এখন বাংলাদেশে প্রবেশ করতে চাওয়া রোহিঙ্গাদের প্রবেশাধিকার দেয়ার অনুরোধ করছে। কিন্তু মিয়ানমারকে নির্যাতন বন্ধে কোনো চাপ প্রয়োগে ব্যর্থ হচ্ছে। এটা মেনে নেয়া যায় না। বাংলাদেশে ১৯৭০ সাল থেকে রোহিঙ্গারা প্রবেশ করছে। এখন প্রায় পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এদের নিয়ে নানা সমস্যায় আছে জনসংখ্যার ভারে ন্যুব্জ বাংলাদেশ। বিষয়টি মানবিক হলেও এরপর নতুন করে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করতে দেওয়া বাংলাদেশের জন্য দুরূহ ব্যাপার।

সমস্যার সমাধান আসলে মিয়ানমারের হাতেই। আধুনিক সভ্যতায় কোনো জাতিগোষ্ঠীর অধিকার অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারেরই নাগরিক। তাদের দায়-দায়িত্ব মিয়ানমারকেই নিতে হবে। সমস্যা অস্বীকার করে সমাধান আশা করা বাতুলতা। আমরা আশা করবো, ক্ষমতার পাদপ্রদীপের নিচে থাকা অং সান সুচি এ ব্যাপারে মানবিক হয়ে তার শান্তিতে নোবেল লাভের সুখ্যাতির প্রতি সুবিচার করবেন।

এইচআর/জেআইএম

‘শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে রেহিঙ্গাদের ওপর যে নির্যাতন করা হচ্ছে এটা মেনে নেওয়া যায় না।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।