বানভাসি মানুষের পাশে দাঁড়ান

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৩:৪০ এএম, ১৪ আগস্ট ২০১৭

দুই দফা বন্যার পর আবারো বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলা। বানভাসি মানুষ যখন স্বাভাবিক জীবনযাত্রা শুরু করবে তখন আবারো বন্যার কবলে পড়ায় সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় ত্রাণ সহায়তাসহ সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। কিভাবে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ যথাসম্ভব কমানো যায় দৃষ্টি দিতে হবে সেদিকে।

ক্রমাগত বৃষ্টি আর পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে বেড়েই চলেছে নদীর পানি। বিপদসীমার উপরে উঠে ভাসাতে শুরু করেছে তীরবর্তী এলাকার লাখ লাখ মানুষকে। মাত্র একমাসের ব্যবধানে ফের বন্যা কবলিত হওয়ায় কষ্টের যেন শেষ নেই উত্তরাঞ্চলের বানভাসি মানুষের। ঘরবাড়ি ছেড়ে রাস্তা কিংবা বাঁধে অবস্থান করছে অসংখ্য পরিবার। আগামী কয়েকদিনে পানি আরো বাড়তে পারে। এটা হলে আরো বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যাবে। লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার তিস্তা, ধরলা, সানিয়াজান, সিংঙ্গীমারী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রেললাইনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় জারি করা হয়েছে রেড অ্যালার্ট। একইভাবে ধলাই ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বাড়াই ঢাকার সঙ্গে কুড়িগ্রামের সকল প্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ব্রহ্মপুত্র নদের পানি গত রোববার সকাল ৬টায় গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর পানি শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে বিপদসীমার ৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এছাড়া তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি ব্যাপক বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনা নদীতে পানি বেড়েই চলেছে। ঠাকুরগাঁওয়ের টঙ্গন, সেনুয়া ও শুক নদীসহ আঞ্চলিক নদীগুলোতে গত রোববার সকাল থেকে পানি বিপদসীমার ৪০ মিলিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জামালপুরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে গত রোববার সকাল থেকে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় দেখা দেয় খাদ্য, পানি ও জ্বালানির সংকট। নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাজার হাজার পরিবার। এ অবস্থায় ভাঙন প্রতিরোধ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো, জরুরি ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমসহ নানামাত্রিক পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্যার্ত মানুষ যেন কোনো অবস্থায়ই দুর্ভোগে না পড়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্গত এলাকায় স্বাভাবিকভাবেই বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে শত শত একর ফসলি জমি। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় অনেক এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়ায় অনেক এলাকায় শ্রমিকদের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গেছে। স্বাভাবিকভাবেই এসব অতিদ্ররিদ্র শ্রেণির মানুষের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে।
বন্যা আমাদের দেশে নতুন নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আঞ্চলিক ও স্থানীয় অতিবৃষ্টি ও ভৌত অনেক কারণ বাংলাদেশে বন্যা হওয়ার জন্য দায়ী। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন, স্থানীয় ও আঞ্চলিক পর্যায়ে বন উজাড়করণ এই প্রক্রিয়ায় বেশ খানিকটা প্রভাবকের ভূমিকা পালন করছে বলে গবেষকরা প্রায় নিশ্চিতভাবে সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছেন। ভৌত কারণগুলোর মধ্যে সম্প্রতি হিমালয়ে অস্বাভাবিকভাবে বরফের আস্তরণ গলে যাওয়া, নদী-উপনদী ও খালগুলোর পানি নির্গমন ক্ষমতা বিভিন্ন কারণে হ্রাস পাওয়া, অপরিকল্পিত অবকাঠামো নির্মাণ ও নির্বিচারে বন উজাড় হওয়া অন্যতম।

বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ, ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা থেকে শুরু করে নানাভাবেই বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। কিন্তু অভিযোগ আছে এসব কাজে অনিয়ম-দুর্নীতির। ফলে প্রতিবছরই বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। নদীগর্ভে হারিয়ে যায় ফসলের মাঠ, ঘরবাড়ি ও জমিজমা। বন্যার সময় খাদ্য সংকট দেখা দেয়। এ জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ রাখতে হবে। সময়মতো ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সরবরাহ করাও অত্যন্ত জরুরি। এ ছাড়া বন্যার পানি চলে যাওয়ার পরও দেখা দেয় ডায়রিয়াসহ নানা রোগব্যাধি। এ জন্য খাওয়ার স্যালাইনসহ অন্যান্য ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি খুব খারাপ হলে বন্যার্তদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসতে হবে। বন্যার্তদের সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রশাসনকে সার্বিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। মানুষজন যেন বন্যাজনিত কারণে কোনো দুর্ভোগের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করাটাই এই মুহূর্তের জরুরি কর্তব্য।

এইচআর/জেআইএম

‘বন্যার্ত মানুষ যেন কোনো অবস্থায়ই দুর্ভোগে না পড়ে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।