নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে অগ্নিকাণ্ড?
যে কোনো দেশের বিমানবন্দর একটি স্পর্শকাতর এলাকা। কাজেই বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে এর আগেও নানা প্রশ্ন উঠেছিল। সেই প্রশ্ন যে অমূলক ছিল না, তার প্রমাণ পাওয়া গেল আবারো। গত শুক্রবার দুপুরে বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় দুই ঘণ্টা বহির্গমন কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এ সময়টাতে আন্তর্জাতিক রুটের অন্তত ছয়টি ফ্লাইট বিলম্বিত হয়। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফ্লাইট স্বাভাবিক হয়ে আসে। এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য শোনা যাচ্ছে। তদন্ত করে দেখতে হবে প্রকৃত ঘটনা। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে কী করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো খতিয়ে দেখতে হবে সেটিও।
আগুন লাগে বিমানবন্দরের তৃতীয় তলার এয়ার ইন্ডিয়ার অফিসে। বিমানবন্দরের তৃতীয় তলায় বিভিন্ন এয়ারলাইনসের অফিসের পাশাপাশি মানিচেঞ্জার, ডিউটি ফ্রি শপ আছে। এয়ার ইন্ডিয়ার অফিস এক কোনায়। কক্ষটির পেছনের কোনায় গিয়ে এয়ারলাইনসের কর্মকর্তারা সিগারেট পান করেন, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। গত শুক্রবারের অগ্নিকাণ্ড সিগারেট থেকেই এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। এছাড়া বিমানবন্দর টার্মিনালের অভ্যন্তরে বৈদ্যুতিক সংযোগগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ। আধুনিক টার্মিনাল তৈরির পর বেশ কয়েক বছর আগে ওই বৈদ্যুতিক সংযোগ স্থাপন করা হয়। আবার এয়ার ইন্ডিয়া অফিসের ইউপিএসের বিদ্যুৎ সংযোগও ঝুঁকিপূর্ণ ছিল এমন কথাও এসেছে গণমাধ্যমে। ধারণা করা হচ্ছে, সেখানকার বৈদ্যুতিক গোলযোগ থেকেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত।
বিমানবন্দরের মতো নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে কিভাবে আগুন লাগে সেটি ভাবনার বিষয়। এতে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। মনে রাখা প্রয়োজন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তার সঙ্গে দেশের ভাবমূর্তিও জড়িত। এছাড়া এর আগেও নানাবিধ ঘটনায় বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছিল। তাই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে ছোট করে দেখার অবকাশ নেই। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে আলাদাভাবে দুটি কমিটি করেছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ফায়ার সার্ভিস। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আমরা আশা করবো তদন্ত প্রকৃত কারণ বেরিয়ে আসবে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেটিরও দিক নির্দেশনা থাকবে। কোথাও কোনো গাফিলততি বা অবহেলা থাকলে সেটির বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এইচআর/এমএস