বনশ্রীতে গৃহকর্মীর মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করুন
রাজধানীর বনশ্রী এলাকায় লাইলী বেগম (২৫) নামের এক গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় গৃহকর্ত্রী সাহানা বেগমকে গতকাল শনিবার দুপুরে পুলিশ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেছে। এর আগে গত শুক্রবার গৃহকর্তা মইনুদ্দিন ও বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক তোফাজ্জ্বল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গৃহকর্মী নির্যাতনের নানা খবর যখন গণমাধ্যমে আসছে তখনই আবারো ঘটলো এক গৃহকর্মীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা। এ ব্যাপারে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে এ ধরনের দুঃখজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়।
গত শুক্রবার বনশ্রীর ৪ নম্বর সড়কে জি ব্লকের একটি বাসায় গৃহকর্মী লাইলী বেগমের রহস্যজনক মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। লাইলীকে হত্যার অভিযোগ এনে তার পরিবার ও এলাকার বিক্ষুব্ধ লোকজন ওই বাড়িতে হামলা চালায় এবং সড়কে গাড়ি ভাঙচুর করে। দফায় দফায় পুলিশের সঙ্গে স্থানীয় লোকজনের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক দফা ফাঁকা গুলি ছোড়ে। রাত ১০টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ। লাইলীর পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, লাইলীকে হত্যা করা হয়েছে। অপরদিকে গৃহকর্তা মইনুদ্দিনের দাবি, লাইলী বাসায় কাজ করতে আসার পর বাড়ির একটি ঘরে ঢুকে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেন। পরে দরজার ছিটকিনি ভেঙে ঘরের ভেতরে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় লাইলীকে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় দুটি মামলা করা হয়েছে।গৃহকর্মী লাইলী বেগমের ভাশুর শহীদুল ইসলাম গৃহকর্তা, গৃহকর্ত্রী, ও বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক তোফাজ্জলকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। স্থানীয়দের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনায় কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ। এতে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।
আমাদের দেশে গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু সমাজের প্রভাবশালীরা এর সাথে জড়িত থাকায় নির্যাতনের ঘটনায় শাস্তি হওয়ার নজির খুব একটা নেই। অথচ অপরাধীর শাস্তি না হলে সে অপরাধের পুনরাবৃত্তি হতেই থাকে। গৃহকর্মী নির্যাতন বন্ধে তাই নির্যাতকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি। পাশাপাশি গৃহকর্মী নির্যাতনের আর যেসব মামলা রয়েছে সেগুলোরও নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। বনশ্রীর ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাসায় কাজ করতে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরতে হবে-এটা মেনে নেয়া যায় না। সরকার ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর গৃহকর্মকে ‘শ্রম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫’-এর খসড়া অনুমোদন করে। এই নীতিমালা অনুমোদন পাওয়ায় শ্রম আইন অনুযায়ী গৃহকর্মীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন এমনটি বলা হয়। গৃহকর্মীদের নির্যাতন করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নেবে- এমন কথাও বলা হয়েছে নীতিমালায়। দুঃখজনক হচ্ছে যে, নীতিমালা প্রণয়নের পর গৃহকর্মীদের ব্যাপারে একটি শৃঙ্খলা ফিরে আসবে-এমনটি আশা করা হলেও বাস্তবে তা হয়নি। কিন্তু দিনের পর দিন এ অবস্থা চলতে পারে না। গৃহকর্মী নির্যাতনকারীর কঠোর সাজা হওয়া প্রয়োজন। নইলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে।
এইচআর/এমএস