অমানবিক, নিন্দনীয়
ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্বামীর সঙ্গে পরকীয়ার অভিযোগ তুলে বগুড়ায় মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়ার ঘটনাটি প্রমাণ করে দুর্বলের ওপর সবলের অত্যাচার কত ভয়াবহ হতে পারে। নারী নির্যাতন নতুন কোনো বিষয় নয়। তবে সমাজে এ ধরনের পাশবিক কাণ্ড একবিংশ শতাব্দীর এই যুগেও ঘটবে এটা ভাবতে অবাক লাগে। নারীর প্রতি মধ্যযুগীয় এই নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা মেনে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। অবিলম্বে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
গত শুক্রবার রাতের বর্বরোচিত এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত শ্রমিক লীগ নেতার স্ত্রী এবং মা-বোন পলাতক। পুলিশ রাতেই অভিযান চালিয়ে স্ত্রীকে না পেয়ে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে। মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাসায় ডেকে নিয়ে ওই তরুণীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সেই ধর্ষণের ঘটনা ধাপাচাপা দিতে তাকে মারধর করে মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়েছে। ধর্ষণ মামলার আসামিরা হলেন বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের সভাপতি তুফান সরকার, স্ত্রী আশা খাতুন, আশার বড় বোন পৌরসভার সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগমসহ আরও ১০ জন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী শহরের জুবলী ইনস্টিটিউশন থেকে এবার এসএসসি পাস করে। কোথাও ভর্তি হতে না পারায় প্রতিবেশী আলী আজম দিপু ওই তরুণীকে শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের মাধ্যমে সরকারি কলেজে ভর্তি করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। পরে দিপু ওই তরুণীকে মোবাইল ফোনে তুফান সরকারের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয়। এরপর তুফান সরকার দিপুর মাধ্যমে ওই তরুণীকে চার হাজার টাকা দিয়ে একটি কলেজে ভর্তির জন্য পাঠায়। কিন্তু সেই কলেজে ভর্তি হতে পারেনি তরুণী। বিষয়টি পরে তুফান সরকারকে জানানো হয়। গত ১৭ জুলাই তুফান সরকার তার স্ত্রী-সন্তান বাসায় না থাকার সুযোগে ওই তরুণীকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দেয়ার আশ্বাসে বাসায় ডেকে নেয়। সেখানে তরুণীকে আটকে রেখে দিনভর ধর্ষণ করে তুফান সরকার। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ওই তরুণী অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য তরুণীকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। পরে ধর্ষণের ঘটনাটি তরুণীর মা জানতে পারেন এবং বিষয়টি এলাকায় জানাজানি হয়।
স্বামীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ লোকমুখে জানতে পারেন শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারের স্ত্রী। শুক্রবার বিকেলে তুফান সরকারের স্ত্রী আশা খাতুন, তার বড় বোন নারী কাউন্সিলর মারজিয়া হাসান রুমকি এবং তার মা রুমী বেগম ওই তরুণীর বাড়ি যান। তারা ধর্ষণের ঘটনার বিচার করে দেয়ার কথা বলে ওই তরুণী ও তার মাকে পৌর কাউন্সিলর রুমকির অফিস চকসূত্রাপুরে নিয়ে আসেন। সেখানে বিচারের নামে তরুণীকে খারাপ আখ্যায়িত করেন। পাশাপাশি মেয়েকে দিয়ে দেহব্যবসা করানোর উল্টো অভিযোগ আনা হয় তরুণীর মায়ের বিরুদ্ধে। একপর্যায়ে তুফান সরকারের কয়েকজন সহযোগী ওই তরুণী ও তার মাকে বেধড়ক লাঠিপেটা করে। এতে তরুণী ও তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতেও তারা ক্ষ্যান্ত হয়নি। পরে নাপিত ডেকে মা-মেয়েকে প্রথমে মাথার চুল কেটে দেয়া হয়। সেই সঙ্গে তুফান সরকারের স্ত্রীর নির্দেশে মা-মেয়ের মাথা ন্যাড়া করে দেয়া হয়।
অভিযুক্তদের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও দ্রুত গ্রেফতার করতে হবে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে এই ঘটনার পেছনে আছেন একাধিক নারী। এদের একজন আবার জনপ্রতিনিধিও। নারী হয়ে নারীর জন্য এই অবমাননাকর অবস্থা সৃষ্টি করা হল-এরচেয়ে দুঃখজনক আর কী হতে পারে। ধিক্কারই প্রাপ্য যারা এ ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত। এ ঘটনায় মামলায় হয়েছে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই কেবল পারে এই ধরনের অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে। দেশের মানুষ সেটিই দেখতে চায়।
এইচআর/জেআইএম