চার শিশুহত্যায় ফাঁসির দণ্ড দ্রুত কার্যকর হোক
বিগত দু’দশকে শিশু সুরক্ষায় বাংলাদেশে আইনী কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে; নেয়া হয়েছে সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ। কিন্তু সামগ্রিক বিবেচনায় ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণে স্পষ্টত শিশুর প্রতি সহিংসতার দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। বরং ভয়াবহতা ও নৃশংসতা বেড়েছে। শিশু নির্যাতনের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচারের সাম্প্রতিক দৃষ্টান্তের পরও দেখা যাচ্ছে নির্যাতন চলছেই। বিশেষ করে পৈশাচিক কায়দায় নির্যাতন করে হত্যার ঘটনা সমাজকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া নানা কারণেই প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে শিশুরা। শিশু নির্যাতন অবসান হওয়া প্রয়োজন। এ জন্য নতুন করে ভাবতে হবে কেন এক শ্রেণির মানুষ এতোটা বিকারগ্রস্ত হয়ে নারকীয় তাণ্ডব শুরু করলো।
অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে শিশু নির্যাতন বন্ধ হবে এমনটিই বলছেন বিশ্লেষকরা। সেদিক থেকে হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বহুল আলোচিত চার শিশু হত্যা মামলার রায় একটি দৃষ্টান্ত। যদিও বাদীরা এই রায়ে পুরোপুরি সন্তোষ্ট হতে পারেননি। আলোচিত ওই মামলায় ৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ২ জনকে ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে এ মামলায় তিনজনকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে। সিলেটের বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মকবুল আহসান গতকাল বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন, সুন্দ্রাটিকি গ্রামের হাবিবুর রহমান আরজু (৪০), উস্তার মিয়া (৪৮) ও রুবেল মিয়া (২০)। এদের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে উস্তার মিয়া পলাতক রয়েছেন। বাকি দুজন রায় ঘোষাণার সময় এজলাসের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। ৭ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে শাহেদ ওরফে সায়েদ (৩২), জুয়েল মিয়াকে। তাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়ছে। এছাড়া বেকসুর খালাস প্রাপ্তরা হলেন, পঞ্চায়েত প্রধান আব্দুল আলী বাগাল (৬০), বাবুল মিয়া (৪৫) ও বিল্লাল মিয়া (৩৫)। সংশ্লিষ্ট আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট অশোক কুমার কর বলেন, এ রায়ে আমরা সংক্ষুব্ধ। আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। এই রায়ের বিপক্ষে উচ্চ আদলতে আপিল করা হবে।
বাহুবলের সুন্দ্রাটিকি গ্রামের আবদাল মিয়ার ছেলে মনির মিয়া (৭), ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), আব্দুল আজিজের ছেলে তাজেল মিয়া (১০) ও আব্দুল কাদিরের ছেলে ইসমাইল হোসেন (১০) গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি বিকেলে বাড়ির পাশের মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। এর ৫ দিনের মাথায় ১৭ ফেব্রুয়ারি সুন্দ্রাটিকি গ্রামের পার্শ্ববর্তী একটি বালুর ছড়ার মাটির নিচ থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনার পর তোলপাড় সৃষ্টি হয় দেশব্যাপী। এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। অবশেষে রায় এলো। এখনো বিচারের অনেক ধাপ বাকি। এছাড়া ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একজন আসামি পলাতক আছে। তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে।
পরিসংখ্যান বলছে ২০১৫ সালে ১৯৩ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। এটা যে কোনো সুস্থ সমাজের জন্য অশনি সংকেত। একটি সভ্য সমাজ এভাবে চলতে পারে না। শিশুরাই আগামী। তাদের পরিচর্যা করে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির উন্মেষ ঘটাতে হবে। পাশাপাশি অপরাধের শাস্তিও নিশ্চিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, যে সমাজে শিশুরা নিরাপদ নয় সে সমাজ কখনো সভ্য সমাজ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না। বাহুবলের ঘটনায় অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত হোক-এটিই দেখতে চায় মানুষজন।
এইচআর/পিআর