অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজনে আরো অগ্রগতি হোক

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৩:২৩ এএম, ২০ জুলাই ২০১৭

মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে ‘মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন, ২০১৭’-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই খসড়ার অনুমোদন দেয়া হয়।২০১১ সালে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনার আলোকে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন ১৯৯৯ নামে বর্তমান আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়। মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অবৈধ ব্যবসা ও পাচার বন্ধে এ আইন ভূমিকা রাখবে। আইনটি সংসদের মাধ্যমে পাস করিয়ে দ্রুত কার্যকরের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে লোকজন উপকৃত হতে পারে। 

খসড়া আইনে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বলতে কিডনি, হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, অগ্নাশয়, অস্থি, চক্ষু, অন্ত্র, যকৃতকে বোঝাবে। এসব সংযোজন বা বিয়োজনের ক্ষেত্রে অনুমোদিত হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞদের একটি মেডিকেল বোর্ড থাকবে এবং সরকারের অনুমতি নিতে হবে। কোনো হাসপাতাল সরকারের অনুমতি ছাড়া মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে পারবে না। তবে সরকারি হাসপাতালে যেখানে বিশেষায়িত ইউনিট আছে সেখানে এ ধরনের অনুমতির প্রয়োজন নেই। যাদের অনুমতি নেই তারা এ আইন কার্যকর হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে অনুমতির জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে পারবে। অঙ্গ সংযোজনের ক্ষেত্রে অনিয়ম হলে অভিযুক্ত ব্যক্তির সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। 

সংশোধিত আইনে নিকটাত্মীয়দের সংজ্ঞাও পরিবর্তন আনা হয়েছে। খসড়া আইনে নিকটাত্মীয়ের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ও রক্তের সম্পর্কের আপন চাচা, ফুফু, মামা, খালা, নানা-নানি, দাদা-দাদি, নাতি-নাতনি এবং আপন চাচাতো, মামাতো, ফুফাতো, খালাতো ভাই-বোন। তবে চোখ ও অস্থিমজ্জা সংযোজনের ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় হওয়ার আবশ্যকতা নেই। 

চিকিৎসা বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে মানবদেহে অঙ্গ প্রতিস্থাপন এখন এক বাস্তবতা। বাংলাদেশেও এ ধরনের অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ হচ্ছে। বিশেষ করে কিডনি প্রতিস্থাপনই বেশি হচ্ছে। তবে বিদ্যমান আইনে এক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নেয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। এ কারণে এক শ্রেণির দালাল চক্র সৃষ্টি হয়েছিল। চিকিৎসকরাও এ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। এখন অনুমিত নেয়ার বিধান এবং দাতার সংজ্ঞা সুনির্দিষ্ট হওয়ায় এ সংক্রান্ত ঝামেলা এড়ানো যাবে। এছাড়া মরণোত্তর মানবদেহের অঙ্গ দানের ক্ষেত্রেও এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। 

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সকল কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ধর্মীয় বিষয়কে সামনে এনে অনেকে রক্ত, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করতে চান না। অথচ রক্তের অভাবে চিকিৎসা ব্যাহত হয়। মৃত্যুর পর চোখ দান করলে অন্যজন সেই চোখ দিয়ে পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে। মানবকল্যাণে অঙ্গদানও ধর্মীয় দিক থেকে নিষিদ্ধ কোনো বিষয় নয়। এক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। মানবকল্যাণকেই নিতে হবে ব্রত হিসেবে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের খসড়া আইনটি দ্রুত সংসদে পাস এবং মানুষজন এর দ্বারা উপকৃত হোক-এটিই প্রত্যাশা। 

এইচআর/পিআর

‘মানব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অবৈধ ব্যবসা ও পাচার বন্ধে এ আইন ভূমিকা রাখবে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।