জলাবদ্ধতায় সীমাহীন দুর্ভোগ

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৩:৩৩ এএম, ১৩ জুলাই ২০১৭

 

রাজধানী ঢাকা এখন পরিণত হয়েছে দুর্ভোগের নগরীতে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টিতেই তলিয়ে যাচ্ছে রাজধানীর অলিগলি। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লোকজনকে। দুই সিটি কর্পোরেশনের একই অবস্থা। গত মঙ্গলবারের মাত্র ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতেই পানির নিচে চলে গেছে ঢাকার দুই অংশের প্রধান প্রধান সড়ক, গলিপথসহ আশপাশের অনেক এলাকা। মাঝারি বৃষ্টিতেই স্থবির হয়ে পড়ছে ঢাকা। ফলে দুর্ভোগ যেন নিয়তির লেখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

সারাবছর ধরে যানজটের নিগড়ে পিষ্ট হয় মানুষজন। শুকনো মৌসুমে ধুলায় মুখে রুমাল দিয়ে চলতে হয়। আর বর্ষায় জলাবদ্ধতায় নৌকা চলার উপযোগী রাস্তাঘাট। তৈরি হয় তীব্র যানজট। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী গত মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেক বেলা ২টা পর্যন্ত কখনো থেমে থেমে, কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এতেই জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোড, চকবাজার রোড (কারা অধিদপ্তরের সামনের অংশ), সিদ্দিকবাজার, নাজিরাবাজার, কাজী আলাউদ্দিন রোডসহ বেশ কয়েকটি সড়ক। জলমগ্ন হয়ে পড়ে মধ্য ঢাকার মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগসহ বিভিন্ন এলাকার প্রধান সড়ক ও গলিপথ। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার দেড় ঘণ্টা পরও দিলকুশা, আরামবাগ, ফকিরাপুল ও নয়াপল্টনের প্রধান সড়কে ছিল হাঁটুপানি। একই অবস্থা উত্তর ধানমন্ডি, কলাবাগান বশিরউদ্দীন রোড এবং জিগাতলার।

উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কারওয়ান বাজার এলাকা, এফডিসির সামনের সড়ক, গ্রিনরোডের কিছু অংশ, মিরপুর, কাওলা, খিলক্ষেতে জলজট পরিস্থিতি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করেছে। উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন কারওয়ান বাজার এলাকা, এফডিসির সামনের সড়ক, গ্রিনরোডের কিছু অংশ, মিরপুর, কাওলা, খিলক্ষেতে জলজট পরিস্থিতি মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করেছে।

পানি জমে যাওয়ায় অনেক স্থান ভ্যান-রিক্সায় পার হতে হয়েছে। একটু জায়গা পার হওয়ার জন্য ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত দিতে হয়েছে। মূলত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ না করাতেই এই অবস্থা। ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হকের কণ্ঠেও একই কথার প্রতিধ্বনি। খাল ভরাট করে ভবন হয়েছে, পানি যাবে কোথায়? ঢাকা ওয়াসাই বা কী করছে? এসব প্রশ্নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক বলেন, এটা থেকে মুক্তির জন্য একধরনের বিপ্লব প্রয়োজন। ঢাকার খালগুলোর মধ্যে এখন দুইটাও বোধ হয় নেই। খাল ভরাট করে সেখানে চার-পাঁচতলা ভবন করা হয়েছে। পানি যাবে কোথায়? তবে মেয়রের দাবি, ‘এর জন্য সিটি করপোরেশন কোনোভাবেই দায়ী না। খালের মালিক জেলা প্রশাসন, আর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ওয়াসার। তারা ২৫ বছরে এই খাল কী রক্ষণাবেক্ষণ করেছে, তার হিসাব দিক।’

কে দায়ী, কে দায়ী নয় তারচেয়ে বড় কথা নগরবাসীকে দুর্ভোগ থেকে বাঁচাতে হবে। এরজন্য একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে সে অনুযায়ী এগুতে হবে। ঢেলে সাজাতে হবে ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে।  এই ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে সাতটি সংস্থা জড়িত। এগুলোর সাথে সমন্বয় থাকতে হবে। প্রয়োজনে এগুলো একটা সংস্থা অর্থাৎ সিটি করপোরেশনের আওতায় আসা উচিত। রাজধানীর খালগুলো উদ্ধার করতে হবে। ঢাকার চারপাশে নদীগুলোরও দখল-দূষণ বন্ধ করতে হবে। নানা কারণেই রাজধানী বাসঅনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন জলাবদ্ধতাও যদি বাড়তি দুর্ভোগ তৈরি করে সেটি হবে ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’। 

এইচআর/পিআর

‘কে দায়ী, কে দায়ী নয় তারচেয়ে বড় কথা নগরবাসীকে দুর্ভোগ থেকে বাঁচাতে হবে।’

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।