চিকুনগুনিয়ার ‘মহামারি’ থেকে বাঁচান

সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয় সম্পাদকীয়
প্রকাশিত: ০৩:৫৩ এএম, ১১ জুলাই ২০১৭

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বলা যায় ‘মহামারি’ আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এ রোগ। সে অনুযায়ী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেরি করেছে। এ রকমই মত দিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এমনকি ‘মহামারি’ বলতে রাজি নন সরকারি কর্মকর্তাদের কেউ কেউ। অথচ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারির সঙ্গে মৃত্যুর কোনো সম্পর্ক নেই। একটি নির্দিষ্ট সময় নির্দিষ্ট স্থানে আশঙ্কার চেয়ে বেশি পরিমাণে রোগের প্রকোপ দেখা দিলে তাকে ‘মহামারি’ বলা হয়। এছাড়া রাস্তাঘাটে, বাসে, গণমাধ্যমে, আড্ডায়, অনুষ্ঠানে, স্কুল-কলেজ, অফিস- সব জায়গায়ই চিকুনগুনিয়া নিয়ে আলোচনা। এর একটাই কারণ ব্যাপকহারে লোকজনের চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়া। ব্যাপক সংখ্যক মানুষ জ্বরে নিদারুণ কষ্ট পাচ্ছে। ছাত্র-ছাত্রীরা আক্রান্ত হওয়ায় পড়াশোনা বিঘ্নিত হচ্ছে।  চিকুনগুনিয়ার প্রভাবে কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে অফিস আদালতেও।  

সবচেয়ে আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে পরিবারের একজন আক্রান্ত হলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ আক্রান্ত ব্যক্তিকে মশা কামড়ালে সেই মশাও রোগ ছড়ানোর বাহকে পরিণত হচ্ছে। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে মশা নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। 

চিকুনগুনিয়া মশাবাহিত একটি ভাইরাসের নাম। ডেঙ্গু রোগের ভাইরাস বহনকারী মশাই চিকুনগুনিয়া ভাইরাস বহন করে। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে প্রথমদিন থেকেই রোগীর অনেক বেশি তাপমাত্রায় জ্বর ওঠে। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। প্রায়ই তা একশ’ চার বা পাঁচ ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রায় উঠে যায়। একইসঙ্গে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, বিশেষ করে হাড়ের জয়েন্টে ব্যথা হয়। জ্বর ভালো হলেও অনেকদিন ধরে ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ রোগের কোনো ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। তাই প্রতিকারের আগে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। সেজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে।

যেহেতু মশার কারণে রোগটি ছড়ায়, তাই মশার কামড় থেকে বাঁচার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য ঘরের বারান্দা, আঙিনা বা ছাদ পরিষ্কার রাখতে হবে। এসি বা ফ্রিজের নিচেও যেন পানি জমে না থাকে। মশাটি দিনের বেলায় কামড়ায়, তাই দিনে কেউ ঘুমালে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে। মশা মারার জন্য স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে।বাচ্চাদের হাফপ্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট পরাতে হবে। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার বাহক এডিস মশা পরিষ্কার পানিতে ডিম ছাড়ে। সবার খেয়াল রাখতে হবে যেন মশা ডিম পাড়ার সুযোগ না পায়।  রোগীকে বেশি মাত্রায় পানি, কিংবা শরবত খাওয়ানো যেতে পারে।

চিকুনগুনিয়া রোগের বিস্তারে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রম প্রশ্নের মুখে পড়েছে। চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ থেকে বাঁচতে হলে মশক নিধনে দুই সিটি করপোরেশনকে আরো সক্রিয় হতে হবে যাতে এডিস মশার সংখ্যা বৃদ্ধি না পায়। এ লক্ষ্যে সরকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এক সঙ্গে কাজ করতে হবে। চিকুনগুনিয়ার ‘মহামারি’ থেকে বাঁচাতে মানুষজনকে সচেতন করে তুলতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিষেধকের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। 

এইচআর/পিআর

সরকারি ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি সামাজিকভাবেও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।