আর কত প্রাণ গেলে টনক নড়বে?


প্রকাশিত: ০৪:১১ এএম, ০৮ জুলাই ২০১৭

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় বার বার বয়লার বিস্ফোরণে মৃত্যুর বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। কেন এত দুর্ঘটনার পরও কর্তৃপক্ষের টনক নড়ছে না- প্রশ্ন দেখা দিয়েছে এ নিয়েও।

শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) গবেষণায় উঠে এসেছে এক হতাশাজনক চিত্র। গত বুধবার প্রকাশিত সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে গত সাড়ে পাঁচ বছরে ৬৯ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন ২৩৭ জন। ২০১২ সাল থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত দুর্ঘটনায় হতাহত হওয়ার এ সংখ্যা দাঁড়িয়েছে।

বয়লার বিস্ফোরণের জন্য নানাবিধ কারণ দায়ী। অনুমোদনের চেয়ে বেশি চাপে বয়লার চালানোর জন্যই বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটে। আর এ জন্য কারখানার অসতর্কতা এবং অদক্ষতাই দায়ী। তৈরি পোশাকশিল্প, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র, কেমিক্যাল কোম্পানি, চালকল ও ট্যানারি শিল্পে বয়লার ব্যবহার হয়ে থাকে। পোশাকশিল্পে ইস্তিরি বা শুকানোর কাজে এবং অন্যান্য শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্য শুকানোর কাজেই সাধারণত বয়লার ব্যবহার হয়। ২২ দশমিক ৭৬ লিটারের বেশি ক্ষমতাসম্পন্ন যেকোনো বয়লার হলেই তা নিবন্ধন করতে হয়। সেই অনুযায়ী দেশে বয়লার আছে সাড়ে পাঁচ হাজার। এই সাড়ে পাঁচ হাজার বয়লার পরিদর্শনের জন্য মাত্র পাঁচজন পরিদর্শক আছেন। ভাবা যায়!

বয়লার বিস্ফোরণের একের পর এক ঘটনা ঘটলেও এসব ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার হচ্ছে না। কারখানার বয়লারগুলো নিয়মিত দেখভালের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রধান বয়লার পরিদর্শকের কার্যালয় নামে একটি আলাদা কার্যালয়ই আছে। তাদের নিয়মিত পর্যবেক্ষণের অভাবও বয়লার বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। বয়লার বিস্ফোরণে এতগুলো প্রাণ হারিয়ে গেলেও একটিতেও দায়ী ব্যক্তিরা সাজা পাননি। এ কারণে ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে।

শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মুনাফার দিকে যতোটা মনোযোগ থাকে নিরাপত্তার দিকে তারা ততোটাই উদাসীন থাকেন। এটা কাম্য হতে পারে না। সবার আগে শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বয়লার পরিদর্শকের সংখ্যা বাড়িয়ে নিয়মিত পরিদর্শন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম বা ব্যত্যয় পরিলক্ষিত হলেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমরা বয়লার বিস্ফোরণে আর কোনো প্রাণহানির ঘটনা দেখতে চাই না।

এইচআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।